বড় সাইজের বিভিন্ন মাছ থেকে আঁশ সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এরপর শুকানো হচ্ছে তপ্ত রোদে ফেলে। আর্দ্রতা কাটিয়ে শুকিয়ে মচমচে হলে মাছের এসব আঁশ প্যাকেটজাত হয়ে দেশ থেকে চলে যাচ্ছে বিদেশে। ফেলে দেওয়া মাছের আঁশ থেকেই তৈরি হচ্ছে ওষুধ, প্রসাধন সামগ্রীসহ নানা কিছু।
অনেকক্ষেত্রে মাছের চেয়েও যেন আঁশের দাম বেশি। প্রতি কেজি মাছের আঁশ রপ্তানিকারক বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। মাছ কাটার পর ফেলে দেওয়া এসব আঁশ বিক্রি করে এখন স্বাবলম্বী অসংখ্য পরিবার। রাজধানীর কাওরান বাজার থেকে মাছের আঁশ সংগ্রহ করে বিক্রি করা কুলসুমা বেগম বলেন, ‘আমি এই মাছের আঁশ বিক্রি করে ঘর ভাড়া দেই, চালসহ সংসারের খরচ মেটাই’।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাছ আসে রাজধানীর কাওরান বাজার, যাত্রাবাড়িসহ বিভিন্ন মাছের আড়তে। পাইকারি দামে মাছ কিনতে অনেকেই ভিড় করেন এসব বাজারে। পছন্দমতো মাছ কিনে কাটিয়ে নিয়ে যান বাড়িতে। বাজারের বিক্রি করা বড় রুই, কাতলা, কোরালসহ নানা মাছের আঁশ সংগ্রহ করে রাখেন মাছ কাটা শ্রমিকরা। এরপর পরিছন্নতাকর্মী কিংবা নিজেরাই সংরক্ষণ করেন এসব মাছের আঁশ।
পরিত্যাক্ত এসব মাছের আঁশ বাজার থেকে সংগ্রহ করার পর প্রথমে ধুয়ে পরিস্কার করা হয়। এরপর প্লাস্টিক সিট অথবা পরিস্কার কোনো পাত্রে আঁশগুলো মেলে দিয়ে রোদে শুকানো হয়। আঁশ বিক্রেতা কুলসুমা জানান,‘মাছের আঁশ সংগ্রহ করি, তারপর ময়লা বাইছা ফালাই, এরপর রোদে লাইড়া শুকাই। রোদ থাকলে ১ দিন লাগে, রোদ না থাকলে ২ দিন লেগে যায় শুকাতে।’
মাছ কাটা শ্রমিকেরা সারাদিন বাজারে মাছ কাটার কাজ করলেও আঁশ সংগ্রহকারীরা সকাল ৬টা থেকে ৭ টার মধ্যেই কাজ শেষ করেন। বড় বড় রেস্টুরেন্ট, মেছ কিংবা বিয়ের আয়োজনের জন্য একসঙ্গে অনেক মাছ ক্রয় করেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। সেই সব মাছ থেকেই অল্প সময়ে অনেক আঁশ সংগ্রহ করা যায়। বড় সাইজের মাছের আঁশ কাজে লাগলেও ছোট সাইজের মাছের আঁশ ফেলে দেওয়া হয়। প্রতি ২০ কেজি মাছ কাটলে পাওয়া যায় ৫ কেজির মতো আঁশ।
নিজেরা মাছ কেটে আঁশ সংগ্রহের পাশাপাশি মাসিক চুক্তিতে মাছ কাটা শ্রমিকদের কাছ থেকে ক্রয় করা হয় মাছের আঁশ। শুঁকানোর পরে এসব মাছের আঁশগুলো বস্তাভর্তি করে রেখে দেওয়া হয় একমাসের বেশি সময়। এরপর বিদেশে রপ্তানির জন্য বাড়ি থেকে ক্রয় করে নিয়ে যায় বিভিন্ন কোম্পানি।
প্রায় ৮ বছর ধরে মাছের আঁশ বিক্রি করে সাত জনের সংসার চালিয়ে ভালোভাবেই জীবনযাপন করছেন কুলসুমা বেগম। তার মতো রাজধানীর কাওরান বাজার এলাকায় প্রায় ২০টি পরিবার জড়িত এই মাছের আঁশের ভিন্নধর্মী ব্যবসায়। তিনি আরও বলেন, ‘আমার চার ছেলেমেয়ে, মেয়ের জামাই, এছাড়া আমরা ২ জন, মোট ৭ জনের পরিবার। খাইয়া লইয়া মাসে ১০ হাজারের বেশি থাকে। আগে এই এলাকায় আমরা ৫০/৬০ জন এই কাম করতাম। তবে এহন সরকারি জায়গা থেইকা উঠাইটা দেওয়ার পর ২০ জনের মতো আছি।’