কয়েকদিন আগে সুলাইমান নামে এক ভাইয়ের সাথে পরিচিত হলাম। পরিচিত হওয়ার পর বললাম, মাশাআল্লাহ অত্যন্ত সুন্দর নাম। আপনি তো অবশ্যই জানেন, হযরত সুলাইমান আ. একজন প্রসিদ্ধ নবী ছিলেন। যাকে আল্লাহ তাআলা নবুওত দান করেছিলেন, আবার বিশাল রাজত্বও দান করেছিলেন। তিনি দ্বীনের বড় বড় খেদমত আঞ্জাম দিয়েছিলেন। মসজিদে আকসা, যার আরেক নাম বাইতুল মাকদিস-এর পুনঃনির্মাণ ও সংস্কারের কাজও তিনি করেছিলেন।
এতটুকু বলতেই সুলাইমান ভাই-এর প্রশ্ন, ‘মসজিদে আকসা! এটা কোন্ মসজিদ?’ প্রশ্নটি শুনে প্রথমে অবাক হলাম, তারপর ব্যথিত হলাম। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের এই সংকটময় মুহূর্তে এমন প্রশ্ন শুনে আরো বেশি মর্মাহত হলাম। তবে বাস্তবতা এটাই যে, আমাদের বর্তমান প্রজন্মের একটি বড় অংশ মসজিদে আকসার পরিচয়, মর্যাদা ও মাহাত্ম্য সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণাও রাখে না। সাধারণ মানুষের সাথে ওঠা-বসার দরুন এই অভিজ্ঞতা আমার বহু আগেই হাসিল হয়েছে। তাই বর্তমান প্রবন্ধে সংক্ষিপ্তাকারে মসজিদে আকসার পরিচয় ও মর্যাদা এবং উল্লেখযোগ্য কিছু দিক ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
মসজিদে আকসার একটি বড় পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য হল, এটি পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় প্রাচীন মসজিদ। মসজিদে হারামের পরেই এই মসজিদের বুনিয়াদ স্থাপিত হয়েছে। ‘আবু যর রা. বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন্ মসজিদ স্থাপিত হয়েছে? তিনি বললেন, মসজিদে হারাম। আমি বললাম, অতঃপর কোন্ মসজিদ? তিনি বললেন, মসজিদে আকসা। বললাম, এই দুইয়ের নির্মাণের মাঝে কত সময়ের ব্যবধান? তিনি বললেন, চল্লিশ বছর।’ (সহীহ বুখারী : ৩৩৬৬)।
মসজিদে আকসার একটি বিশেষ ফযীলত হল, আল্লাহ একে বরকতময় করেছেন। এই মসজিদকে কেন্দ্র করে আশপাশের জনপদকেও বরকতপূর্ণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : পবিত্র সেই সত্তা, যিনি নিজ বান্দাকে রাতারাতি মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসায় নিয়ে যান, যার চারপাশকে আমি বরকতময় করেছি, তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখানোর জন্য। নিশ্চয়ই তিনি সব কিছুর শ্রোতা, সব কিছুর জ্ঞাতা। (সূরা বনী ইসরাঈল : ১)।
আল্লাহ আরো ইরশাদ করেন : আমি ওদের এবং যে জনপদগুলোতে বরকত রেখেছি, তার মাঝে এমন সব জনপদ স্থাপন করেছিলাম, যা নজরে আসত…। (সূরা সাবা : ১৮)। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, এখানে বরকতময় জনপদ দ্বারা উদ্দেশ্য হল বাইতুল মাকদিসের জনপদ। (তাফসীরে ইবনে কাসীর, খ. ৬, পৃ. ৪৬৮)।
ইসলামের দৃষ্টিতে সবচে মর্যাদাপূর্ণ মসজিদ হল মসজিদে হারাম, যা পবিত্র মক্কা নগরীতে অবস্থিত।
দ্বিতীয় মর্যাদাপূর্ণ মসজিদ হল মসজিদে নববী, যা মদীনা মুনাওয়ারায় অবস্থিত। এই দুই মসজিদের পরেই তৃতীয় পবিত্রতম ও শ্রেষ্ঠতম মসজিদ হল মসজিদে আকসা, যা ফিলিস্তিনের জেরুজালেম নগরীতে অবস্থিত। এ কারণেই রাসূলে কারীম (সা.) বলেন : সফর করলে তিনটি মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা উচিত। মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী, এবং মসজিদে আকসা। (সহীহ বুখারী : ১১৮৯)। এই হাদীস প্রমাণ করে মসজিদে হারাম, মসজিদে নববীর পরেই মর্যাদার দিক থেকে মসজিদে আকসার অবস্থান।
মসজিদে আকসার একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হল এটি মুসলিম উম্মাহর একসময়ের কেবলা। ইবনে আব্বাস রা. বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) মক্কায় কা‘বাকে সামনে রেখে বাইতুল মাকদিসের দিকে ফিরে নামায আদায় করতেন। মদীনায় হিজরতের পরও ষোলো মাস বাইতুল মাকদিসের দিকে ফিরেই নামায আদায় করেছেন। অতঃপর কেবলা কা‘বার দিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। (মুসনাদে আহমাদ : ২৯৯১)।
হযরত বারা ইবনে আযেব রা. বলেন, নবী কারীম (সা.) যখন প্রথম মদীনায় এলেন, তাঁর মামাদের বাড়িতে মেহমান হলেন। আর তিনি বাইতুল মাকদিসের দিকে ফিরে ১৬ থেকে ১৭ মাস পর্যন্ত নামায আদায় করেছেন। তবে তিনি চাইতেন বাইতুল্লাহ যেন তাঁর কেবলা হয়…। (সহীহ বুখারী : ৪০)।