ভারতের জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) থেকে পাঁচ লাখ বাঙালি হিন্দুর নাম কাটা গেছে বলে স্বীকার করে নিয়েছেন আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। একটি সাক্ষাৎকারে আসামের মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন যে শুধু পাঁচ লাখ বাঙালি হিন্দু নন, এনআরসি থেকে কাটা গেছে দু’লাখ আসামিয়া এবং ১.৫ লাখ গোর্খার নামও। আর তাদের মধ্যে মাত্র তিন থেকে ছয় লাখ মানুষ নতুন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। অর্থাৎ কমপক্ষে ২.৫ লাখ মানুষ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন না। নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য তাদের কাছে নথি আছে। সেইমতো নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করার পরিবর্তে তাদের ফরেনার্স ট্রাইবুনালের দরজার কড়া নাড়তে হবে।
রোববার একটি সাক্ষাৎকারে অসমের মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের মাধ্যমে ১.৫ কোটি মানুষ ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করবেন বলে যে তত্ত্ব ছড়িয়েছে, সেটা পুরোপুরি ভুল। আগামী ১৯ এপ্রিলের আগে পুরো বিষয়টা আরো স্পষ্ট হয়ে যাবে। ওই দিন থেকে লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু হতে চলেছে। ১৪টি লোকসভা আসন-বিশিষ্ট আসামেও সেদিন থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। তিন দফায় (১৯ এপ্রিল, ২৬ এপ্রিল ও ৭ মে) ভোট হবে অসমে।
আসামের মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘গত সপ্তাহে সিএএয়ের নিয়মের ঘোষণা করা হয়েছে। ১৯ এপ্রিল আসতে-আসতে ৪০ দিনের মতো কেটে যাবে। বাস্তবে পরিস্থিতিটা কী হবে, তা বোঝার জন্য ওই সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের মাধ্যমে গুজরাটের ১৩টি হিন্দু পরিবারকে ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য এখনো আসামের বেশি মানুষ আবেদন করেননি।’
হিমন্ত দাবি করেছেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের (বৈধভাবে শরণার্থী হিসেবে আসামে আশ্রয় নেয়ার ডেডলাইন) পরও বাংলাদেশ থেকে অনেক পরিবার আসামে ঢুকে এসেছিল। এদের বেশিভাগ পরিবারই বাঙালি হিন্দু ছিল। কোনো-কোনো পরিবার আবার বাংলাদেশে ফিরেও গেছে। তিনি বলেন, ‘ওইসময় অনেক পরিবারকেই রেশন কার্ড দেয়নি কর্তৃপক্ষ। ওদের কাছে স্রেফ একটিই নথি ছিল- সীমান্ত কর্তৃপক্ষের তরফে জারি করা রেজিস্ট্রেশন কার্ড। কিন্তু এনআরসির আপডেট করার প্রক্রিয়ায় ওই কার্ডকে ছাড়পত্র দেননি প্রতীক হাজেলা (এনআরসির সাবেক রাজ্য সমন্বয়কারী)। সেজন্যই এত নাম বাদ পড়েছে।’
তিনি দাবি করেছেন, এনআরসির চূড়ান্ত খসড়া থেকে প্রায় ১৬ লাখ নাম বাদ পড়েছে। ওই খসড়া ২০১৯ সালের অগস্টে প্রকাশ করা হয়েছিল। সাত লাখ মুসলিমের পাশাপাশি কলিতা, দাস-সহ হিন্দু আসামিয়াও আছেন। তিনি বলেন, ‘আমার মতে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের মাধ্যমে তিন থেকে ছয় লাখ মানুষ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবেন। ২০ লাখ, ১৮ লাখ, ১৫ লাখ বা ১.৫ কোটি মানুষ আবেদন করবেন না, যে সংখ্যাটা তুলে ধরছেন কেউ-কেউ। আবেদনকারীর সংখ্যা ১০ শতাংশ কম-বেশি হতে পারে। কিন্তু ওই সংখ্যাটা ছয় লাখের বেশি হবে না।’
আর হিমন্তের সেই মন্তব্য এমন একটা সময় এসেছে, যখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে তার রাজ্যে এনআরসি হবে না। তিনি একাধিকবার দাবি করেছেন যে এনআরসির তালিকা অসমে লাখ-লাখ বাঙালি হিন্দুর নাম কাটা গেছে। গত বুধবারও সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেছিলেন যে আসামে ১৯ লাখের মধ্যে ১৩ লাখ হিন্দু বাঙালির নাম বাদ দেয়া হয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে হিমন্ত যে মন্তব্য করেছেন, তা তৃণমূলের কাছে বড় হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস