আজ ৪ এপ্রিল, ভাষাসৈনিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী অধ্যাপক সনজীদা খাতুনের জন্মদিন। জীবনের ৯০ বসন্ত পেরিয়ে ৯১-তে পা রাখলেন তিনি।
সনজীদা খাতুন একাধারে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী, লেখক, গবেষক, সংগঠক, সঙ্গীতজ্ঞ এবং শিক্ষক। এছাড়া জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও তিনি। পাশাপাশি ভিন্নধর্মী শিশুশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নালন্দার ও ছায়ানটের সভাপতিও তিনি।
১৯৩২ সালের এই দিনে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন সনজীদা খাতুন। তার বাবা সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব কাজী মোতাহার হোসেন এবং মা সাজেদা বেগম। তার বাবা একজন বিখ্যাত পণ্ডিত ব্যক্তি ও জাতীয় অধ্যাপক ছিলেন। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে কাজ করেন এবং একজন দক্ষ অনুবাদকও ছিলেন তিনি। কাজী আনোয়ার হোসেনের বোন এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিক ওয়াহিদুল হকের স্ত্রী সনজীদা খাতুন।
ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীত ও সংস্কৃতি কর্মে জড়িয়ে পড়েন সনজীদা খাতুন। ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেন।
১৯৬১ সালে স্বামী ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে ছায়ানট প্রতিষ্ঠা করেন সনজীদা খাতুন। এ সংগঠনের মধ্যদিয়ে ষাট দশক থেকে সঙ্গীত ও বাঙালি সংস্কৃতি জাগরণের আন্দোলনে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
দেশ স্বাধীনের পর ছায়ানটের মাধ্যমে সারাদেশে সঙ্গীত ও সংস্কৃতি কর্ম ছড়িয়ে দেন সনজীদা খাতুন। গঠন করেন রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ। তিনি এই সংগঠনের সভাপতি। সঙ্গীত, সংস্কৃতি, শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সনজীদা খাতুনের বেশ কিছু গ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে।
১৯৬২ সালে রবীন্দ্র সঙ্গীতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সরকারের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হয়, এতে নেতৃত্ব দেন সনজীদা খাতুন। ছায়ানট প্রতিষ্ঠা করে সঙ্গীত ও সংস্কৃতির উন্নয়নেই বেশি সময় কাটান তিনি।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কার পেয়েছেন সনজীদা খাতুন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার(পশ্চিমবঙ্গ, ভারত), দেশিকোত্তম পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)।
এছাড়া ১৯৮৮ সালে কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট সনজীদা খাতুনকে ‘রবীন্দ্র তত্ত্বাচার্য’ উপাধি, ২০১৯ সালে ‘নজরুল মানস’ প্রবন্ধ গ্রন্থের জন্য ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করে। ২০২১ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে।
সনজীদা খাতুনের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হচ্ছে— ‘কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত’, ‘রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাবসম্পদ’, ‘ধ্বনি থেকে কবিতা’, ‘অতীত দিনের স্মৃতি’, ‘রবীন্দ্রনাথ: বিবিধ সন্ধান’, ‘ধ্বনির কথা আবৃত্তির কথা’, ‘স্বাধীনতার অভিযাত্রা’, ‘সাহিত্য কথা সংস্কৃতি কথা’, ‘জননী জন্মভূমি’, ‘রবীন্দ্রনাথ এবং রবীন্দ্রনাথ’।