• বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ অপরাহ্ন

উত্তেজনা হ্রাসে তৎপরতা মিত্রদের

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

হোয়াইট হাউস ইসরাইলকে সতর্ক করেছে যে, ইরানের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধমূলক হামলায় অংশ নেবে না যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেন প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তারা এই সতর্কতার কথা জানিয়েছেন। ১ এপ্রিল সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে হামলার প্রতিক্রিয়া হিসাবে ইসরাইলে রাতারাতি ৩০০টিরও বেশি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার কথা জানিয়েছে তেহরান। তবে লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই প্রায় সব ক্ষেপণাস্ত্রই ভূপাতিত করেছে ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্রবাহিনী। এক্ষেত্রে ইসরাইলকে যে কোনো পাল্টা জবাব দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন জো বাইডেন, এমনটাই জানিয়েছেন তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
রোববার সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময়, প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন যে বাইডেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ‘খুব সাবধানে এবং কৌশলীভাবে চিন্তা করতে’ বলেছেন।

কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন বিশ্বাস করে যে, ইসরাইল এর বিনিময়ে ‘সেরাটাই পেয়েছে’, যার শুরু হয়েছিল সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেট ভবনে হামলায় সিনিয়র ইরানি সামরিক কমান্ডারদের হত্যার মাধ্যমে। ইরানের ৮০টিরও বেশি ড্রোন এবং কমপক্ষে ছয়টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইরাকের উপর দিয়ে ভূপাতিত করে মার্কিন বিমান ও জাহাজ বা বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী। এর মধ্যে সাতটি ড্রোন এবং একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছিল যেগুলো তারা ইয়েমেন থেকে উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত করেছিল, ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) রোববার এক আপডেটে এ তথ্য জানিয়েছে।

দিনের প্রথম দিকে মার্কিন টেলিভিশনে নেটওয়ার্কগুলোয় দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কারবি বারবার বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে যে তারা বড় ধরনে সংঘাত এড়াতে চায়। প্রশাসনের শীর্ষ সূত্র জানিয়েছে, কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে ইরানে একই বার্তা পাঠানো হয়েছে। কারবি এবং এর কর্মকর্তা উভয়েই বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে রক্ষা করতে থাকবে, তবে ইসরাইলের কোনও প্রতিক্রিয়ায় অংশ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তাদের এই অবস্থান নিয়ে কিছু মার্কিন আইন প্রণেতা এবং উভয় রাজনৈতিক দলের প্রাক্তন কর্মকর্তারা সমালোচনার করেছেন। ওহাইও রিপাবলিকান প্রতিনিধি মাইক টার্নার, যিনি হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি বলেছেন, সংঘাত কমিয়ে আনার বিষয়ে যে মন্তব্য করেছেন, সেটা ‘ভুল’। ‘এটি ইতোমধ্যেই ক্রমে বাড়ছে এবং প্রশাসনকে এর প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে,’ তিনি এনবিসি-তে বলেছেন।

এদিকে, ইসরাইলের মিত্ররা সপ্তাহান্তে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার জন্য ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ না নেয়ার জন্য সোমবার জোরালোভাবে তাগিদ দিয়েছে। তারা এর পরিবর্তে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা হ্রাস করার আহ্বান জানিয়েছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকারের কিছু উগ্র ডানপন্থী সদস্যরা ইরানের হামলার কঠোর প্রতিক্রিয়ার আহ্বান জানিয়েছিল, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রুপ অফ ৭ ভুক্ত দেশগুলো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের মহাসচিব ইসরাইলকে সংযম দেখাতে বলেছেন।

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতি অনুসারে, সেক্রেটারি অফ স্টেট এন্টনি জে. ব্লিঙ্কেন রোববার মিসর, সউদী আরব, জর্ডান, তুরস্ক, ব্রিটেন এবং জার্মানিতে তার সমকক্ষদের সাথে ফোনালাপে উত্তেজনা রোধ করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন। সোমবার ইসরাইলের মিত্ররাও একই আহ্বান জানিয়েছে। ব্রিটেনের পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ক্যামেরন ইরানের আক্রমণকে অভিহিত করেছেন ‘বেপরোয়া এবং বিপজ্জনক’, কিন্তু ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থতা’ বলে। ইসরাইলের কথা উল্লেখ করে ক্যামেরন স্কাই নিউজকে বলেন, ‘আমরা তাদের বাড়াবাড়ি না করার আহ্বান জানাচ্ছি। এটি মাথার পাশাপাশি হৃদয় দিয়ে চিন্তা করার সময়। স্মার্ট হওয়ার পাশাপাশি শক্ত হতে হবে।’
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁও ইসরাইলকে সামরিক উত্তেজনা এড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি সোমবার ফরাসি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন যে, ফ্রান্স ‘নিষেধাজ্ঞা বৃদ্ধি, পারমাণবিক কার্যকলাপের উপর চাপ বৃদ্ধি এবং তারপরে এই অঞ্চলে শান্তির পথ খুঁজে বের করে তেহরানকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য মিত্রদের সাথে কাজ করবে।’ রোববার ইরানি কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তারা আরও উত্তেজনা রোধ করতে চাইছে এবং ইসরাইল পাল্টা আঘাত না করলে ইরানের প্রতিশোধ নেয়া শেষ হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায়, ইসরাইলের যুদ্ধ মন্ত্রিসভা ইরানের আক্রমণের প্রতিক্রিয়া কীভাবে দেবে তা সিদ্ধান্ত না নিয়েই বৈঠক শেষ করেছে, বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফ করা একজন কর্মকর্তা বলেছেন।

নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠককে ভণ্ডামি বলল রাশিয়া : জাতিসংঘে রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠককে ভণ্ডামি ও দ্বৈত মানদণ্ডের প্রকাশ বলে অভিহিত করেছেন। ‘আপনি খুব ভালো করেই জানেন যে একটি কূটনৈতিক মিশনে আক্রমণ আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অপরাধ এবং যুদ্ধের প্রতি উস্কানি। এবং যদি পশ্চিমা মিশন আক্রমণ করা হয়, আপনি প্রতিশোধ নিতে এবং এই ঘরে আপনার মামলা প্রমাণ করতে দ্বিধা করবেন না। কারণ আপনার জন্য, পশ্চিমা মিশনগুলিকে উদ্বিগ্ন করে এমন সবকিছু। এবং পশ্চিমা নাগরিকরা পবিত্র এবং তাদের অবশ্যই রক্ষা করা উচিত বলে আপনারা মনে করেন,’ তিনি ইসরাইলি সামরিক স্থাপনায় ইরানের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বলেছিলেন। ‘আজ, নিরাপত্তা পরিষদ পশ্চিমা ভণ্ডামি এবং দ্বৈত মানদণ্ডের এমন একটি কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করছে যে এটি দেখতে কিছুটা অস্বস্তিকর,’ কূটনীতিক বলেছিলেন।

হামলা মোকাবিলায় ইসরাইলের খরচ ১৩৫ কোটি ডলার : ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন প্রতিহত করার জন্য একরাতেই ইসরাইলের খরচ হয়েছে ৫০০ কোটি শেকেল (ইসরাইলি মুদ্রা) বা ১৩৫ কোটি মার্কিন ডলার। ইসরাইলি মিডিয়ার বরাত দিয়ে রোববার এ তথ্য জানিয়েছে আনাদোলু এজেন্সি। ইসরাইলি চিফ অফ স্টাফের সাবেক আর্থিক উপদেষ্টা জেনারেল রাম আমিনাচ বলেছেন যে ‘গত রাতে প্রতিরক্ষা ব্যয় ৪-৫ বিলিয়ন শেকেল (১০৮ থেকে ১৩৫ কোটি মার্কিন ডলার) এর মধ্যে অনুমান করা হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমি শুধুমাত্র ইরানিরা যা শুরু করেছে তাতে বাধা দেয়ার খরচের কথা বলছি এবং এ হামলায় অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির কথা বলছি না।’

একটি অ্যারো মিসাইল যা একটি ইরানী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে আটকাতে ব্যবহৃত হয় তার দাম ৩৫ লাখ ডলার, যেখানে একটি ‘ম্যাজিক ওয়ান্ড’ ক্ষেপণাস্ত্রের দাম ১০ লাখ ডলার, এছাড়াও ইরানী ড্রোনগুলোকে আটকাতে অংশ নেয়া বিভিন্ন ধরণের বিমান উড্ডয়ন খরচও রয়েছে,’ আমিনাচ বলেছিলেন। এর আগে রোববার, ইসরাইলি সংবাদপত্র হারেৎজ ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছিল যে, ইরান থেকে ইসরাইলে প্রায় ৩৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন নিক্ষেপ করা হয়েছিল, যার বেশিরভাগই বাধা দেয়া হয়েছিল। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, বিয়ারশেবার নেভাটিম বিমান ঘাঁটিতে সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে যখন ‘ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিক্ষেপ করা ৯৯ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন আটকানো হয়েছে। ‘৩০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ২৫টি বাধা দেয়া হয়েছিল এবং ১২০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে মাত্র কয়েকটি ইসরাইলি ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিল এবং নেভাটিম বিমান ঘাঁটিতে বিস্ফোরিত হয়েছিল,’ তিনি যোগ করেছেন।

উত্তেজনা প্রশমনে সউদী, ইরান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনা : সউদী পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান রোববার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের কাছ থেকে একটি ফোন কল পেয়েছেন। ফোনালাপে তারা এ অঞ্চলের সর্বশেষ উন্নয়ন এবং গাজা উপত্যকায় সঙ্কটের পটভূমিতে ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি এবং এর প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেছেন। এদিকে, প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান সোমবার নির্ধারিত উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিল (জিসিসি) দেশ এবং মধ্য এশিয়ার রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বিতীয় মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে পৌঁছেছেন। তাসখন্দ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মন্ত্রীকে স্বাগত জানান উজবেক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাহরাম আলিয়েভ। এরআগে, ইহুদিবাদী ইসরাইলে সরাসরি ইরানের প্রথম হামলার পর সউদী আরব বলেছে, তারা আঞ্চলিক পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন। তবে হামলার জন্য ইরানের নিন্দা করেনি রিয়াদ। সউদী আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে ইরান বা ইসরাইলের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে এতে সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানানো হয়। সূত্র : বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস, তাস, মিডলইস্টমনিটর।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ