গ্রীষ্মকালীন সবজি সজনে ডাটার বাম্পার ফলন হয়েছে। চাহিদে মিটিয়ে উৎপাদিত সজনার ডাটা অন্য জেলায় প্রেরণ করা হচ্ছে।
দিনাজপুর হটিকালচার বিভাগের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, দিনাজপুর জেলার ১৩ টি উপজেলায় গ্রামে-গঞ্জে বসত বাড়িতে ব্যাপক হারে সজনার গাছ রয়েছে। গ্রাম ও শহরে পরিকল্পনা ছাড়াই পতিত জমিতে এসব সজনা গাছ প্রাকৃতিক ভাবেই বেড়ে ওঠে। ফলে গ্রীষ্মকালীন মুখোরচক সবজি হিসেবে প্রত্যেকের খাদ্যের তালিকায় এ সবজি রয়েছে। তিনি বলেন তাদের পরিসংখ্যানে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে মানুষটা সবজি হিসেবে সজনা ডাটা খেতে পছন্দ করেনা।
তিনি বলেন, সজনার পাতা সুপার ফুড হিসেবে এখন চিকিৎসাকেরা খাওয়ার জন্য সব ধরনের রোগীকে পরামর্শ দিচ্ছেন। ফলে সজনার পাতার চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। গ্রামে গঞ্জ থেকে সজনা পাতা সংগ্রহ করে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির লোকজন তাদের কোম্পানিতে নিয়ে যাচ্ছে। এসব সজনের পাতা গুড়া বোতল জাত করে গ্রাহকের বিক্রি করা হচ্ছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিগত সময়ের চেয়ে এখন সজনার গাছ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।
ফলে সজানার উৎপাদন জেলায় ব্যাপক হারে বেড়েছে। উৎপাদিত সজনা জেলার চাহিদা পূরণ করে বাণিজ্যিকভাবে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় প্রেরণ করা হচ্ছে। সজনার উৎপাদন বেশি হয় দামও কমে গেছে। দিনাজপুর সদর উপজেলার গোপালগঞ্জ হাটে গতকাল শনিবার বিকালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন এ হাট থেকে প্রায় দুই মিনি ট্রাকে ৪ থেকে ৫ মেট্রিক টন সজনা ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।
ওই হাটের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আরতদার শরিফুল ইসলাম জানান, তিনি সহ তার সহযোগী আরো ৪ জন গত ১০ দিন যাবত আশপাশের গ্রামগুলো থেকে সজনার ডাটা ক্রয় করে মজুদ করেন। বাইরে জেলার চাহিদা অনুযায়ী মিনি ট্রাক এসব সাজনা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারা গ্রাম থেকে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি ধরে সজনার ডাটা ক্রয় করে নিয়ে আসেন।বাইরের পাইকারিরা তাদের নিকট থেকে ৩০ হতে ৩৫ টাকা কেজি ধরে সজনার ডাটা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, এ সবজি স্বল্প সময় থাকে। চলতি মাসের মধ্যেই সজনার ডাটা শেষ হয়ে যাবে। এরপর তারা গ্রামগঞ্জ থেকে সজনার পাতা কিনে ওষুধ কোম্পানিগুলো কাছে বিক্রির কাজ করবে। সজনার পাতার চাহিদা থাকায় তাদের এ কাজে লাভ ভালই হচ্ছে।
দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিদ সহযোগী অধ্যাপক মীর খালেকুজ্জামান জানান, বাংলাদেশের আবহাওয়া জলবায়ু অনুযায়ী সুপার ফুড হিসেবে পরিচিত এ সজনে ডাটা। দেশের কিছু জেলায় মার্চ মাসের প্রথমে সজনার ডাটা উৎপাদন হয়। ওই সময় মৌসুমের আগাম দেশীয় সজনে এবার বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা কেজি পর্যন্ত । দেশে পুরোপুরি সজনের মৌসুম শুরু হয়ে থাকে এপ্রিল মাসে । কিন্তু এবার দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে গত ফেব্রুয়ারির শেষে বিপুল পরিমাণ সজনে ডাটা আমদানি করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুই সপ্তাহে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে ৩১ ট্রাকে ৩১৫ টন সজনে ডাটা । ১৫০ মার্কিন ডলার প্রতি টন আমদানি করা এসব সজনে ডাটায় সরকার প্রতি কেজিতে শুল্ককর আদায় করেছে ২০ টাকা ।
আমদানিকৃত এসব সজনে ডাটা আমদানি কারকেরা পাইকারি বাজারে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করেন । যা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার খুচরো বাজারে বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে । এ সময়ে দেশের কিছু কিছু স্থানে আগাম দেশীয় সজনে ডাটা বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা পর্যন্ত ।
ভরা মৌসুমে সজনা দিনাজপুর বাজারে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা কেজি দরে । ওই পুষ্টিবিদ বলেন, আগাম দেশের সজনের ডাটা উৎপাদনের লক্ষ্যে দিনাজপুর হাবিপ্রবি গবেষণা শুরু করেছে।
সূত্র বাসস