ঝিনুকের খোলসের ভেতরে চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য নিয়ে জন্মায় মুক্তা। সেটাই পরে গহনা হয়ে স্থান পায় নারীর অঙ্গে। নারীর সৌন্দর্যের স্নিগ্ধতা বাড়িয়ে তোলে শতগুণে। হাল ফ্যাশনে মুক্তার গহনার প্রচলন বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
নারীর সাজের প্রধান আকর্ষণ তার গহনা। এই এক গহনারই রয়েছে নানা রং, নানা রূপ, হাজারো নকশা। সোনা, রুপা থেকে শুরু করে কড়ি, কাঠ- কি নেই গহনার উপাদানের তালিকায়! তবে এর ভেতরে কিছু বস্তু রয়েছে যার আবেদন চিরন্তন। তেমনই একটি নাম হল মুক্তা। জীবিত প্রাণীর পেটে এমন মূল্যবান পদার্থ হয়ে থাকার কৃতিত্ব একমাত্র মুক্তারই রয়েছে! ঝিনুকের খোলসের ভেতরে যে চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য নিয়ে থাকে, সেখান থেকে বের করার পর তাই গহনা হয়ে নারীর সৌন্দর্য বাড়ায়। হালফ্যাশনে মুক্তার গহনা বেশি চলছে। কানে মুক্তার ছোট টপ বা হাতে একটি এক লহরের ব্রেসলেট পরলে স্বস্তিও আসে, ফ্যাশনও হয়। গলায় পরলেন এক লহরের মুক্তার মালা। ব্যস, হয়ে গেল আপনার সাজ। সাদা, সবুজ, সোনালি ও গোলাপি রঙের মুক্তা সব রঙের পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায়। শিপন ও ক্রেপ শাড়ির সঙ্গে মুক্তার গহনা ভালো দেখায়। দেশি সাজের জন্য সবচেয়ে উপযোগী পোশাক হল শাড়ি। আর এই শাড়ির সঙ্গে মুক্তার গহনা খুব মানায়। দেশি তাঁতের শাড়ির সঙ্গে এক লহরের লম্বা একটি মুক্তার মালা পরে নিতে পারেন। কানে পরে নিন মুক্তার ছোট্ট একটি টব বা দুল। একটু জমকালো সাজে সোনা কিংবা রুপার ওপর সোনার প্রলেপের ডিজাইনের সঙ্গে দুই-তিন লহর মুক্তার মালা ঝোলানো গহনা পরেনিন। শুধু মুক্তার কয়েকটি লহরের মালা ও মানিয়ে যায় জমকালো সাজে। সেই সঙ্গে কানে একটু বড় দুল পরে নিন মুক্তার। চাইলে চুলের সাজে মুক্তা ব্যবহার করতে পারবেন। চুলের মাঝে মাঝে একটি একটি করে মুক্তা গেঁথে নিয়ে চুলটাকে বেণি অথবা খোঁপা করে নিন। ওয়েস্টার্ন পোশাকেও মুক্তা খুব মানানসই। সুন্দর একটি টপের সঙ্গে মানানসই রঙিন গ্যাভাডিনের প্যান্ট পরুন। আর গলায় পরে নিন মুক্তার একটি চিক অথবা এক লহরের ছোট একটি মালা। সেই সঙ্গে কানে একটি মুক্তার টব ও হাতের আঙুলে বড় একটি মুক্তার আংটি পরে নিতে পারেন। ওয়েস্টার্ন পোশাকের সঙ্গে মুক্তার ব্রেসলেটও দারুণ মানিয়ে যায়।
মুক্তার মধ্যে সব সময়ই খুঁজে পাওয়া যায় একটা ক্ল্যাসিক আমেজ। যে কোনো ঋতুতে, যে কোনো পোশাকে আর যে কোনো বয়সের সঙ্গে মানানসই মুক্তার কানের দুল। জমকালো সাজে কেবল যে বড় কানের দুল কিংবা বড় হার পরিপূর্ণতা এনে দেয়, তা কিন্তু নয়। ছোট বা বড় মুক্তার কানের দুল আপনার সাজকে করে তুলতে পারে অনেক বেশি সুন্দর। মুক্তার কানের দুল যে কোনো পরিবেশেই পরা যায়। অফিসে কিংবা যে কোনো পার্টিতে যেতে হলে চোখ বন্ধ করেই বেছে নিতে পারেন মুক্তার কানের দুল। পোশাক শাড়ি কিংবা সালোয়ার-কামিজ যা-ই হোক না কেন। তবে মুক্তার আকারের ওপর নির্ভর করে কোনো জায়গার জন্য কোনো ধরনের কানের দুল মানাবে। আর অফিস কিংবা যত্রতত্র বাইরে যেতে হলে অপেক্ষাকৃত ছোট মুক্তার দুলটা বেশি ভালো। কেবল কর্মজীবীই নন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে মুক্তার ছোট দুল পরতে পারেন। কেবল সাদা নয়, বরং আজকাল গোলাপি, ধূসর, কালো, হালকা হলুদ রঙের মুক্তার কানের দুল পাওয়া যায়।
মুক্তার যত্ন
হালকা গহনাগুলো সাধারণত সারা দিনই পরে থাকা হয়। ফলে ধুলো বালি, ঘাম তো লেগেই থাকে। তাই এসব গহনার জন্য বিশেষ যত্ন প্রয়োজন হয়। মুক্তার মালার সুতা শক্ত কিনা তা দোকানেই দেখে নিতে হবে। এ ছাড়া পাথরের গহনা কেনার সময় আঠাটা পরখ করে নিন। অন্য সব গহনার মতোই মুক্তার গহনা পরতে হবে সবার শেষে আর খুলতে হবে সবার আগে। গহনা পরার আগেই মেকআপ, সুগন্ধী যা মাখার মেখে নিন। এসিড বা অন্য কোনো ক্ষতিকর কেমিক্যাল থেকে দূরে রাখুন। মুক্তার আংটি বা ব্রেসলেট পরে ভারী কাজ করবেন না। স্ক্র্যাচ পড়ে গেলে ঠিক করা সম্ভব হবে না। ব্যবহার শেষে নরম কাপড় দিয়ে মুছে তার পর নরম কাপড় বা তুলায় মুড়িয়ে সংরক্ষণ করুন। এমনিতে মুক্তা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হয় না। তবে ময়লা পড়লে বেবি শ্যাম্পু অথবা ভালো মানের সাবান পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর শুকনা নরম কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন। নিজ থেকে পলিশ করতে যাবেন না। প্রয়োজনে প্রফেশনালদের সাহায্য নিন। সোনা, রুপা বা অন্য কোনো গহনার সঙ্গে মুক্তার গহনা না রাখা ভালো। মুক্তার গহনা রাখতে কোমল ব্যাগ ব্যবহার করুন এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি থেকে দূরে রাখুন। একবার দাগ পড়ে গেলে তা তোলা মুশকিল। একটানা অনেক দিন বাক্সে বন্দি করে রাখবেন না। আর্দ্রতা কমে যাবে এবং অনুজ্জ্বল দেখাবে।