• বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫০ পূর্বাহ্ন

হিন্দ : নিহত ফিলিস্তিনি শিশু এখন যুক্তরাষ্ট্রে আন্দোলনের প্রতীক

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ১ মে, ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্য়ালয়ের হ্যামিল্টন হলের সামনে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে। ইনসেটে হিন্দ রজাব


চলতি বছর ২৯ জানুয়ারির কথা। গাজা সিটির তেল আল হাওয়া এলাকায় হামলা চালাচ্ছিল ইসরাইল। সেখান থেকে পালাতে গাড়িতে ওঠে ছয় বছর বয়সী হিন্দ রজাব, তার মামা-মামি এবং মামাত চার ভাইবোন। একটু পরই তাদের তাড়া করে একটি ইসরাইলি ট্যাঙ্ক। হিন্দদের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে তারা। গাড়ির ভেতরেই হিন্দের মামা-মামি ও তিন ভাইবোনের মৃত্যু হয়। হিন্দের ১৫ বছর বয়সী মামাতো বোন লায়ান হামাদে ওই সময়ে ফিলিস্তিনি রেড ক্রেসেন্ট সোসাইটি’কে ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। ফোনে কথা বলতে বলতেই ইসরাইলি সেনাসদস্যদের গুলিতে নিহত হয় সে। ফোন কেটে যায়। রেড ক্রেসেন্ট সোসাইটি কয়েক মিনিট পরে ঘুরিয়ে ফোন করলে এবার ফোন ধরে হিন্দ।

তার পরে টানা তিন ঘণ্টা রেড ক্রেসেন্ট সোসাইটির কর্মীদের সাথে ফোনে কথা বলেছিল ছয় বছরের ওই মেয়েটি। বারবার বলছিল- ‘আমার ভয় করছে, খুব ভয় করছে, তোমরা তাড়াতাড়ি এসো। আসবে তো তোমরা?’ এক সময়ে থেমে যায় শিশুটির কণ্ঠস্বর। পরে হিন্দের দাদি জানিয়েছিলেন, শিশুটির পায়ে ও পিঠে গুলি লেগেছিল।

হিন্দের দাদা বাহা হামাদা ফেব্রুয়ারিতে এএফপিকে বলেছিলেন, ‘গাড়িতে থাকা হিন্দ এবং অন্য সবাই শহিদ হয়ে গেছে। ওই দিন সকালে ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহার করায় পরিবারের সদস্যরা সেখানে গিয়েছিল।’

বিধ্বস্ত অ্যাম্বুলেন্স এবং পারিবারিক গাড়িটি সাক্ষী দিচ্ছে কিভাবে বেসামরিক লোকজন এবং সাহায্যকর্মীদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে।

ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট মুখপাত্র নেবাল ফারসাখ বলেন, ‘আমাদের সকল অ্যাম্বুলেন্সের শীর্ষে সুস্পষ্ট রেড ক্রস প্রতীক রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই ঘটনা আতঙ্কজনক। কারণ আমাদেরকে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এই পুরোটা সময় হিন্দু আমাদের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছিল, কাঁদছিল। বলছিল, প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে যান। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষঅ করেও আমরা নিরাপদে সেখানে যাওয়ার নিশ্চয়তা পাইনি। নিরাপদে প্রবেশের সুযোগ ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘দখলদাররা পরিকল্পিতভাবেই রেড ক্রিসেন্ট ক্রুদের টার্গেট করছে।’

এখানেই শেষ নয়! ইসরাইলি বাহিনীর সাথে সংযোগ করে হিন্দদের উদ্ধার করতে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে বের হয়েছিলেন রেড ক্রেসেন্ট সোসাইটির চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীরা। তাদের ওপরেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরাইল। ১০ দিন পরে উদ্ধার হয় ধ্বংস হয়ে যাওয়া দু’টি গাড়ি ও আধপোড়া কয়েকটি লাশ। ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’ বলে দায় এড়িয়ে যায় ইসরাইল।

নিহত ওই শিশুর স্মৃতিকে হাতিয়ার করে মঙ্গলবার আন্দোলনের এক নতুন অধ্যায় শুরু করলেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সাড়ে পাঁচ দশক পরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার ফের দখল করলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যামিল্টন হল। বহু ছাত্র আন্দোলনের সাক্ষী এই ভবন। আন্দোলনকারীদের মুখে যুদ্ধ-বিরোধী স্লোগান। দাবি একটাই- গাজায় গণহত্যা বন্ধ করতে হবে। অবিলম্বে।

হ্যামিল্টন হলের সাথে ছাত্র রাজনীতির সম্পর্ক বহু দিনের। ১৯৬৮ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধিতা করে এই হ্যামিল্টন হল দখল করে অবস্থান-বিক্ষোভে বসেছিলেন শিক্ষার্থীরা। আর এবার শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন, ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করুক আমেরিকা। ১৯৭২ সালেও যুদ্ধ-বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল এই হলে। আন্দোলন হয়েছিল ১৯৮৫ সালেও। বর্ণ বিদ্বেষে দুষ্ট দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন সংস্থার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করুক আমেরিকা, ওই বছর এই দাবি তোলা হয়েছিল।

শিক্ষার্থীদের তোলা ভিডিও ও ছবি থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রথমে এই শিক্ষা ভবনের কাচের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকছেন তারা। হলের ভিতরে, দরজার সামনে আসবাবপত্র রেখে ব্যারিকেড তৈরি করা হচ্ছে। তার পরে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে বাইরে থেকে দড়ি দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়েছে। তা ছাড়া, ফটকের সামনে রেখে দেয়া হয়েছে অসংখ্য আসবাবপত্র। অনেক শিক্ষার্থী ঠিক দরজার বাইরেই অবস্থানে বসেছেন। উদ্দেশ্য, হল দখল করতে নিরাপত্তারক্ষীরা এলে বাধা দেবেন তারা। হলের জানলা থেকে টাঙিয়ে দেয়া হচ্ছে ফিলিস্তিনি পতাকা। আর হলের বাইরে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে সাদা কাপড়। লেখা- ‘হিন্দ’জ হল’। হ্যামিল্টন হলের ‘নতুন নাম’।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট মিনুশে শফিক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছায় হ্যামিল্টন হল খালি করে দেয়ার আর্জি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বা বাক্‌স্বাধীনতা দমন করার কোনো উদ্দেশ্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নেই। তবে আমি আন্দোলনকারীদের মনে করিয়ে দিতে চাই, কোনো ভবন বা তার দরজা আটকে বা ব্যারিকেড করে আন্দোলন করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন-বিরুদ্ধ। এই ধরনের বিক্ষোভ কর্মসূচির জন্য আমাদের ইহুদি সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’
সূত্র : আল জাজিরা, আনন্দবাজার পত্রিকা এবং অন্যান্য


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ