জীবন যাপনে সহজ পরিবর্তন।
তাহলে অনেক ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশ কমানো সম্ভব হয়। ক্যান্সার হওয়ার পেছনে যে সব কারণ, এগুলোকে এড়ানো তেমন কঠিন নয়। নিম্নে ক্যান্সার প্রতিরোধের বিভিন্ন নিয়মগুলো আলোচনা করা হলো:-
১. বর্জন করুন ধূমপান: সিগারেটের ধোঁয়ার ধারে কাছে যাবেন না, তামাক পাতা, জর্দ্দা চিবাবেন না:ধূমপান হলো ক্যান্সার হওয়ার বড় ঝুঁকি। কেউ ধূমপান করে থাকলে ছেড়ে দেওয়া উচিত। তামাক পাতা, জর্দা চিবানো বাদ দেওয়া উচিত। কেবল ফুসফুস বা মুখ গহ্বরের ক্যান্সারই নয় আরও কয়েক রকমের ক্যান্সার থেকেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব। কেউ ধূমপান করলে তার ধারে কাছেও যাওয়া উচিত নয়। কেউ ধূমপান করেন, ছেড়ে দিলেন, এতেও লাভ, তামাকমুক্ত হলে তা অনেক স্বাস্থ্য হিতকর।
বলছিলাম ‘সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকের’ কথা। একজন ধূমপায়ীর সিগারেট, সিগার, পাইপের ধোয়া অন্যজন সেবন করলেও বড় ঝুঁকি, তাই একে এড়ানো অনেক লাভ।
২. আমেরিকার মত দেশে দশ লক্ষেরও বেশি লোকের প্রতিবছর হয় ত্বকের ক্যান্সার। এদেশের পরিসংখ্যান আমার জানা নেই।
একে প্রতিরোধ করা সম্ভব। সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মিকে এড়াতে হবে। এজন্য পরতে হবে সানস্ক্রিন, মধ্যাহ্নের কড়া রোদ এড়াতে হবে, কড়া রোদে বাইরে গেলে সুরক্ষা পোষাক, চোখে রঙিন চশমা, মাথায় টুপি বা মাথাল, ছাতি, রোদে দীর্ঘক্ষণ ত্বক বাদামি করা চলবেনা।
৩. খেতে হবে প্রচুর রঙিন শাক সবজি ও ফলমূল: সুষম খাদ্য অনেক করণেই বড় হিতকর। ফল, সবজিতে ভরপুর খাবার ক্যান্সারের বিরুদ্ধে অনেক সুরক্ষা দেয়। ফল ও শাক সবজিতে আছে এন্টিঅক্সিডেন্ট, যা দেহের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোর মেরামতিতে সাহায্য করে। সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙের ফল ও সবজি হলো ক্যান্সার প্রতিরোধে বড় সহায়ক। দেখা গেছে, গাছ ফল যেমন- ব্লুবেরি ও আঙ্গুর, এদের রয়েছে ক্যান্সার রোধীগুণ। ক্রসিফেরাস সবজি যেমন ব্রকোলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি এদের আছে ক্যান্সার রোধী গুণ।
৪. খুব কম খেতে হয় লাল গোস্ত ও প্রাণীজ চর্বি: অনেকগুলো
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব
খাবারে প্রাণীজ চর্বি বেশি, এসব খাবার খেলে নানা রকম ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে ‘কলোন ক্যান্সার’। পোলট্রি ও মাছ থেকে অনেক বেশি চর্বি থাকে লাল গোস্তে। তাই খাদ্যে লাল গোস্ত যত কমানো যাবে ক্যান্সারের ঝুঁকি তত কমে। চর্বি বহুল খাবার খেলে শরীরও স্থূল হয়, আর স্থূলতা হলো অনেক রকমের ক্যান্সারের ঝুঁকি।
৫. মদ্যপান বর্জন: মদ্যপান
বর্জন করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি
অনেক কমে যায়।
৬. ব্যায়াম করুন নিয়মিত: নিয়মিত ব্যায়ামে অনেক ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির পরামর্শ দিনে অন্তত: ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা জরুরি।
৭. ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ইতিহাস: পরিবারে কারো ক্যান্সার হয়ে থাকলে নিজের ঝুঁকি মূল্যায়নের জন্য তা
জানা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই পরিবারে ইতিহাস থাকলে নিজের ঝুঁকি বেশি। স্তন, কলোন, ডিম্বাশয় ক্যান্সারের জন্য বেশী প্রযোজ্য। পরিবারে যে কোনো ধরণের ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে তা ডাক্তারকে জানাতে হয়। তখন ডাক্তার ও আপনি দু’জনে মিলে যথাযথ স্ক্রিনিং পরিকল্পনা করা ও সত্যিকারের ঝুঁকি নিরুপণ সম্ভব হয়। প্রয়োজনে জেনেটিক ট্রেস্টিং ও কাউন্সেলিং করা যেতে পারে।
৮. কর্মক্ষেত্রে কেমন পরিবেশের মুখোমুখি তা জানা ভালো: কর্মক্ষেত্রে রাসায়নিক পদার্থের মুখোমুখি হলে অনেক ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে, যেমন কিডনির ক্যান্সার, মূত্রথলির ক্যান্সার। কর্মক্ষেত্রে ধোঁয়া, ধুল, রাসায়নিক বস্তুর মুখোমুখি হলে সে সম্বন্ধে জানার অধিকার আছে সবার। গ্যাসোলিন, ডিজেল এক্সইস্ট, আর্সেনিক, বেরিলিয়াম, ক্লোবোমিথাইলইয়ার সবই কার্সিনোজেন, অনেক কর্মক্ষেত্রে এদের উপস্থিতি রয়েছে।
৯. ভেজাল খাবার: খাদ্যদ্রব্যের নানা ধরণের রাসায়নিক যেমন- ফরমালিন, কার্বাইড মেশানো বড় অপরাধ। অথচ তা ঘঠছে অহরহ। মাছকে টাটকা রাখার জন্য ফরমালিন, অনেক খাদ্যদ্রব্যকে রঙ্গিন করার জন্য রঞ্জক, ফল পাকানোর জন্য কার্বাইড, মুড়িতে ইউরিয়া সার। বাইরের খাবার যত দূর সম্ভব পরিহার করা ভালো। এর জন্য পরামর্শ কি দেব? আইনী নিয়ন্ত্রণ ও নানাবিধ সচেতনতা ও মানুষের বিবেক জাগ্রত করা ছাড়া আর কি উপায় আছে।
১০. নিরাপদ যৌন মিলন: নিরাপদ যৌন মিলন দেয় অনেক ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সুরক্ষা। জরায়ুর ক্যান্সারের পেছনে যে যৌন বাহিত হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস এর বিরুদ্ধে রয়েছ টীকা, গার্ডাসিল।
১১. প্রয়োজন নিয়মিত ক্যান্সার স্ক্রিনিং: কেবল চিহ্নিত করা নয়, প্রতিরোধের জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ। কলোনোস্কোপি ও প্যাপসস্মিয়ারের মত স্ক্রিনিং টেস্ট করলে কোষের পরিবর্তন ক্যান্সারে রূপ নেওয়ার আগে ধরা পড়ে। আছে আরো স্ক্রিনিং। ম্যামোগ্রাফি। পিএসএ। অন্যান্য ইমেজিং পরীক্ষা। ডিজিটাল রেকটাল পরীক্ষা।
nঅধ্যাপক ডা: শুভাগত চৌধুরী, পরিচালক, ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস, বারডেম, ঢাকা