• বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৮ অপরাহ্ন

প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যু, ইরান কী রাষ্ট্রীয় নীতি পরিবর্তন করবে?

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪

রাইসির মৃত্যু ইরানের রাজনৈতিক ব্যবস্থার একটি সত্যিকারের ধাক্কা ,হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে এমন এক সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মৃত্যু হলো যখন মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ও একাধিক সংঘাত চলছে। কিন্তু বিশ্লেষকেরা মনে করছেন তাদের মৃত্যুতে এ অঞ্চলের পরিস্থিতি খুব বেশি পরিবর্তন হবে না। কারণ, দেশটির পররাষ্ট্রনীতি, যুদ্ধ ও অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অধীন।

ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে রবিবার হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদোল্লাহিয়ানসহ আরও সাতজন নিহত হন। এর এক দিন পর সোমাবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমীকরণে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে ইরানের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, খামেনির আস্থাভাজন হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার। সর্বোচ্চ ৫০ দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। এখন সর্বোচ্চ নেতার অনুমতি নিয়ে ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান, পার্লামেন্টের স্পিকার ও ভাইস প্রেসিডেন্টকে সঙ্গে নিয়ে গার্ডিয়ান কাউন্সিল নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এগেইনস্ট নিউক্লিয়ার ইরানের (ইউএএনআই) নীতি পরিচালক জ্যাসন ব্রোডস্কি বলেন, ‘ইরানের প্রেসিডেন্ট মূলত আজ্ঞা বাস্তবায়নকারী, সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী নন। তাই ইরানের নীতি ও সেই নীতিগুলোর মৌলিক বিষয় একই থাকবে।’

ইসরায়েলের রাইচম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অরি গোল্ডবার্গ বলেন, রাইসি ইরানের সর্বোচ্চ নেতার হয়ে কাজ করতেন। তিনি দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে কম গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত ছিলেন।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ইরানের প্রেসিডেন্টের আকস্মিক মৃত্যুতে সেখানে ক্ষমতার শূন্যতা তৈরি হবে, যার সুবিধা নিতে ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা কৌশল শুরু করবেন। রাইসির মৃত্যুকে ইরানের ক্ষমতাশালী কর্মকর্তারা একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখবেন। তারা নিজেদের ক্ষমতার কাঠামোকে আরও পোক্ত করতে এত দিন এমনই একটি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। রাইসির আকস্মিক মৃত্যু তাই খামেনির জন্য বড় ধরনের পরীক্ষা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

গোল্ডবার্গের মতে, এখন খামেনিকে দেখাতে হবে, তিনি এই পরিবর্তনের সময় দেশকে কীভাবে সামলান।

রাইসিকে এত দিন খামেনির উত্তরসূরি হিসেবেই দেখা হতো। তার অভিজ্ঞতা ছিল ব্যাপক। তিনি সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং প্রেসিডেন্ট হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ব্রোডস্কির মতে, রাইসির মৃত্যু ইরানের রাজনৈতিক ব্যবস্থার একটি সত্যিকারের ধাক্কা।

রাইসি ছাড়াও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদোল্লাহিয়ানের মৃত্যুও দেশটির জন্য বড় ধরনের ক্ষতি। তিনি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করেছেন। দেশের কঠিন সংকটের সময় বিভিন্ন দেশে ছুটে গেছেন তিনি। সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। এ ছাড়া পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা কমিয়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন তিনি।

ইসরায়েল মনে করছে, যদিও ইরানের বিস্তৃত বৈদেশিক নীতি পরিবর্তন হবে না, তবে অপ্রত্যাশিত রাজনৈতিক উত্থান-পতন মোকাবিলার ফলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বহুমুখী লড়াই থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়া হতে পারে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা জিউইশ ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি অব আমেরিকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল মাকোভস্কি বলেন, ইরান এখন নিজের বিষয় সামলাতে বেশি ব্যস্ত থাকবে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বেশি যুক্ত হয়ে পড়বে। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও জটিল হবে।

ইরান তাদের ক্ষমতা দেখাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল। তারা দাবি করেছিল, জঙ্গি সদস্য নির্মূলের লক্ষ্যে এ হামলা চালানো হয়েছিল। পাকিস্তানও পাল্টা হামলা করেছিল। পরে দুই দেশ উত্তেজনা কমিয়ে আনে। ইসরায়েলেও ৩০০ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে নজিরবিহীন হামলা করেছিল ইরান।

ইরান বেশ কিছুদিন ধরে ধারাবাহিক বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে। এর মধ্যে প্রেসিডেন্টের নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশটির শাসন দুর্বল হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। গত জানুয়ারিতে জঙ্গি হামলায় ৮৪ জন নিহত হন। এর আগে আরেক হামলায় দেশটির ১১ পুলিশ সদস্য নিহত হন।

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে হারানো ইরানের শাসনব্যবস্থায় দুর্বলতার চিহ্ন তুলে ধরে। কিন্তু খামেনি যদি ক্ষমতার নির্ঝঞ্ঝাট রূপান্তর করেন, তবে দেশটি একটি কঠিন সময়ে স্থিতিশীলতা দেখাতে সক্ষম হবে। কিন্তু পশ্চিমা নেতারা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান, সেটাই এখন দেখার বিষয়। সূত্র : : আল জাজিরা


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ