উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে না দিয়ে সরকার খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
রোববার (২৬ মে) বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জীবন-সংগ্রামের ওপর লেখা একটি গ্রন্থ প্রকাশনার অনুষ্ঠানে তিনি এই অভিযোগ করেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আজকে একটি কথা বলতেই হয় অন্যভাবে, মুহূর্তের আনন্দঘন মন থাকে বেদনাবিধূর। যার সম্পর্কে কথা বলছি, তিনি (খালেদা জিয়া) কিন্তু আমাদের মাঝে এখানে নেই। উনাকে আমাদের সামনে আসতে দেওয়া হয় না, উনাকে কথা বলতে দেওয়া হয় না। উনার চিকিৎসা… যেখানে বাংলাদেশের ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দিয়েছেন… তারা বলছেন, তাকে অবিলম্বে বিদেশে নেওয়া দরকার।’
‘বারবার বলার পরেও জেনেশুনে একটা মানুষকে কীভাবে হত্যা করা হচ্ছে, এটা ইতিহাস সাক্ষী হয়ে থাকবে… আজকে বিভিন্নজনের বক্তব্যে এটা উঠে এসেছে এবং আসবে। ইতিহাস সাক্ষী হয়ে থাকবে যে, যারা উনাকে বিদেশে যেতে দিচ্ছে না তারা ইতিহাসে অপরাধীর মতো থাকবে। যখন সুযোগ আসবে ইনশাল্লাহ তাদের বিচার হবে।’
গুলশানে হোটেল লেকশোরে সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর লেখা ইংরেজি গ্রন্থ ‘বেগম খালেদা জিয়া: হার লাইভ, হার স্টোরি’ এর বাংলা সংস্করণ ‘খালেদা জিয়া: জীবন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ইতি প্রকাশনা ৬৭০ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে। শাহরিয়ার সুলতান ইংরেজি এই গ্রন্থটি অনুবাদ করেন। গ্রন্থটির দাম রাখা হয়েছে দুই হাজার টাকা।
অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসনকে এভারকেয়ার হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার কথা তুলে ধরে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এত নির্দয়-নিষ্ঠুর আচরণ কোনো মানুষ মানুষের সাথে করতে পারে, এটা বলা যায় না। আমি এখানে অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন (বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক) দেখতে পারছি। আমি উনাকে (খালেদা জিয়াকে) হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। উনারা (চিকিৎসকরা) দেখিয়েছিলেন… কী রকম করে হার্টে বাইপাস করা যাচ্ছে না, কিন্তু সেটা একটা বিকল্প তারা করছেন, যাতে রক্ত জমে ব্লক হয়ে মারা না যান, সে রকম করে একটা প্যাসেজ তৈরি করা। দেখে আমার নিজে এত খারাপ লেগেছিল যে, এই দৃশ্য দেখার পরে কেউ তাকে আটকিয়ে রাখতে পারে, এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য।
নানা চরাই-উতরাই পেরিয়ে নিজের কর্মদক্ষতায় খালেদা জিয়া দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী হয়েছেন উল্লেখ করে সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহর গ্রন্থটি নেতাকর্মীদের পড়ার অনুরোধ জানান মান্না।
সরকারের সমালোচনা করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘৭ জানুয়ারি পরে দেশের মানুষের মধ্যে অনেকে বলেছেন, আর পারলে না। এরা পাঁচ বছরই থাকবে, কেউ কেউ রকম করে বলেন, যতদিন জীবিত আছে নড়াতে পারবেন না। এখন দেখছি নিজে নিজেই নড়ছে।’
মান্না বলেন, ‘কেন তিনটা এমন এমন শর্ট হয়েছে? একটা প্রাক্তন আইজি, একটা প্রাক্তন চিফ অফ স্টাফ, আরেকটা তিন বারের এমপি। চোরগুলো ডাকাতগুলো গায়ের জোরে এমপি হয়েছে। তাদের চেহারা এক্সপোজড হয়েছে, যার ফলে সবাই বুঝতে পারছে। পত্রিকায় লেখেছে দেখলাম, তিনটা বিষয় নিয়ে বিব্রত সরকার। এই দায় কার? চিফ অফ স্টাফ কে বানিয়েছে, আইজি কে বানিয়েছে, এমপি কে বানিয়েছে? সবাইকে উনি (শেখ হাসিনা) প্রতিপালন করে বড় করে লুটপাট করবার ক্ষমতা দেবার পরে সবগুলো এক্সপোজড হয়ে গেছে। তখন আবার পত্রিকায় লেখছে দায় কার? বাহ।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা জামান বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া একজন প্রাগমেটিক পপুলার লিডার। আজকে তার ওপর জেল-জুলুম-নির্যাতন উনি ভিকটিম হয়েছেন। এটা একটা টর্চার। রাজনীতি করে গিয়ে উনি বিভিন্ন সরকারের আমলে ভিকটিম হয়েছেন। শেখ হাসিনার আমলে জেলে গিয়েছেন, এরশাদের আমলে জেলে গিয়েছেন, এখন উনি কত বছর ধরে জেলে আছেন। চিকিৎসা করার সুযোগ পাচ্ছেন না।
দিলারা বলেন, ‘আমি বলব, বেগম খালেদা জিয়া প্রিভ্যাইল সিম্বোলাইজেস বাংলাদেশ। তিনি আজকে নিজের প্রিয় জন্মভূমিতে বন্দী, আমি মনে করি বাংলাদেশও বন্দী। বাংলাদেশ ইজ এ প্রিজনার, ভেতর থেকে বাংলাদেশও বন্দী। সুতরাং খালেদা জিয়া বাংলাদেশকে সিম্বোলাই করে বলে আমি মনে করি।’
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহর সভাপতিত্বে ও কবি আবদুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান, গ্রন্থের অনুবাদক শাহরিয়ার সুলতান, ‘ইতি প্রকাশনা’র প্রকাশক জহির দীপ্তি এবং গ্রন্থের লেখক প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহর সহধর্মিনী দিনারজাদি বেগম বক্তব্য দেন।
প্রকাশনার অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জামায়াতে ইসলামীর মজিবুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।