ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তিন স্তরের যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব হামাসের কাছে দেওয়া হয়েছিল তার একটি পরিমার্জিত রুপ সবার সামনে তুলে ধরেছেন জো বাইডেন।শুক্রবার হোয়াইট হাউসে দেওয়া এক বিশেষ ভাষণে তিনি এই প্রস্তাব ঘোষণা করেন।
তিন স্তরের যে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে গাজায় জিম্মি সব ইসরায়েলী নাগরিকের মুক্তির পাশাপাশি অবরুদ্ধ এই উপত্যকা থেকে সেনা প্রত্যাহার ও স্থায়ীভাবে চলমান রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও সংঘাত শেষ হবে বলে জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
জো বাইডেন তার ভাষণে বলেন,যুদ্ধ বন্ধ করার এবং যুদ্ধ পরবর্তী দিন শুরু করার এখনই সময়।এর মাধ্যমে ইসরায়েলী জিম্মিদের মুক্তি, দেশটির নিরাপত্তা নিশ্চিত ও পাশাপাশি এর মাধ্যমে গাজাবাসীর যন্ত্রণাও শেষ হবে বলে বাইডেন জানান।
বাইডেন ঘোষিত তিন স্তরের এ প্রস্তাবে প্রথম স্তর হবে ছয় সপ্তাহ স্থায়ী। যেখানে গাজার জনবহুল এলাকাগুলো থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে ইসরায়েল।বিপরীতে নারী,বৃদ্ধ ও আহত ‘নির্দিষ্ট’ সংখ্যক জিম্মি মুক্তি দিবে হামাস।এসময় গাজার বাস্তুচ্যুত নাগরিকেরা তাদের নিজ নিজ বাসস্থানে ফিরে আসতে পারবেন। এ সময় প্রতিদিন গাজায় ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করবে।
দ্বিতীয়া ধাপে হামাস নিজেদের হেফাজতে জীবিত থাকা সকল জিম্মিকে মুক্তি দিবে।বিপরীতে গাজা থেকে থেকে সম্পূর্ণ রূপে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে ইসরায়েল।এই যুদ্ধ বিরতি ‘স্থায়ী বৈরিতা সমাপ্তি’র দিকে এগোবে।
তৃতীয় ধাপে জীবিত অথবা মৃত বাকি জিম্মিদের মুক্তি দিবে হামাস।গাজা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা শুরু হবে। যেখানে হাসপাতাল ও স্কুল পুনঃনির্মাণে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রসঙ্গত, কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দফায় দফায় যুদ্ধ বিরতির আলোচনায় বসলেও গত বছরের ডিসেম্বরের পর আর ঐক্য মধ্যে পৌঁছাতে পারেনি হামাস ও ইসরায়েল।সম্প্রতি ইসরাইল বহুল আলোচিত রাফায় আগ্রাসন শুরু করলে আলোচনা থেকে নিজেদের ঘোষণা দিয়েছিল হামাস।
দুই পক্ষের এমন ‘স্থবির’ অবস্থা কাটাতে বাইডেনের এই প্রস্তাব গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ প্রস্তাব ঘোষণা করার পর বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে হামাস ও ইসরায়েল নেতৃবৃন্দকে তা গ্রহণ করার আহ্বান জানান।
বাইডেনের ‘স্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত’ প্রস্তাবে প্রশংসা করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।মার্কিন কংগ্রেস ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতারাও হামাসকে এ প্রস্তাব মেনে নেওয়া আহবান জানান।
দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ কোথায়?
নতুন এ প্রস্তাব অপেক্ষাকৃত ‘উদার’ হলেও প্রায় কাছাকাছি একটি প্রস্তাব ইসরায়েল আগেও দিয়েছিল।তবে যুদ্ধবিরতি স্থায়ীকরণের ব্যাপারে নিশ্চয়তা না পাওয়ায় তাতে রাজি হয়নি হামাস।যদিও নিজের প্রস্তাবে বাইডেন স্পষ্টভাবে যুদ্ধ সমাপ্তির কথা বলেছেন।তবে এই প্রস্তাব পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী অফিস থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে যুদ্ধ বিরতিতে আন্তরিকতার কথা জানালেও ‘লক্ষ্য অর্জন’ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনব্যক্ত করেছে ইসরায়েল সরকার।সম্পূর্ণ গাজা থেকে ইসরায়েলী সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয় নিয়েও দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ রয়েছে।
অন্যদিকে বাইডেনের ঘোষণার পরপর একটি বিবৃতি দিয়েছে হামাসও।যেখানে বাইডেনের এই ঘোষণাকে ‘ইতিবাচকভাবে’ গ্রহণ করার কথা জানিয়েছে স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি।বিশেষত তার ঘোষিত স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ‘সৈন্য প্রত্যাহারের’ উপর বাড়তি জোর দিয়েছে দিয়েছে সংগঠনটি।