ভারতের জাতীয় নির্বাচন শুরু হয় ২০২৪ সালের ১৯ এপ্রিল। ছয় সপ্তাহ ধরে চলা এই নির্বাচন ছিল অন্য যেকোনো বারের তুলনায় অন্যরকম। ঘাত-প্রতিঘাত, সংঘাতের তথ্যও ছড়িয়েছিল বিভিন্ন মাধ্যমে। তবে, অনলাইন, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়া গুজব ছিল অন্য যেকোনো নির্বাচনের তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত। এ সবকিছু ছাপিয়ে ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছে দেশটির জনগণ। আগামীকাল মঙ্গলবার জানা যাবে, ভারতের নতুন ভাগ্য নির্মাতার নাম। খবর এএফপির।
ফরাসি সংবাদ সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারতের নির্বাচন হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এই নির্বাচন ঘিরে অনলাইনে অনেক মিথ্যা সংবাদ, তাৎক্ষণিক বার্তা, বিকৃত ভিডিও ও মনগড়া ক্যাপশনের পাশাপাশি অসংগতিপূর্ণ ছবি পোস্ট করা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইন্ডিয়া হেট ল্যাব সংস্থাটি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য এবং গুজব নিয়ে গবেষণা করে থাকে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের ফ্যাক্ট চেকাররা ছয় সপ্তাহ ধরে সাত ধাপের ভোটদানের প্রক্রিয়াতে ৪০টিরও বেশি নির্বাচন সম্পর্কিত গুজব রটানোর তথ্য নিশ্চিত করেছে, যা রাজনৈতিক বিভাজনকে বাড়িয়ে তোলে।
সংস্থাটির রকিব হামিদ নায়েক জানান, ভারতের এই নির্বাচনে নজিরবিহীন গুজব ছড়াতে দেখা গেছে। এমনকি, এসবের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে উসকে দেওয়ার মতো ষড়যন্ত্রও ছিল বলে দাবি করেন তিনি।
নির্বাচন ঘিরে মিথ্যা ভিডিও তৈরি করে পোস্ট করা হয়েছে বলে জানানো হয়। বলা হয়, ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বলিউড তারকারা বিরোধী দলগুলোকে সমর্থন করছে এবং একজন ব্যক্তি একাধিক ভোট প্রদান করছে। তবে, তা মিথ্যা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু-জাতীয়তাবাদী ঘরানার রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ভারতের ২০ কোটিরও বেশি সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও ভয় ও বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য সমালোচনার মুখে পড়ে। ভিডিওগুলোতে বেশিরভাগ মোদির নিজের বলা উসকানিমূলক বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যায়। যেখানে বলা হয়, বিরোধীদলগুলো, বিশেষ করে কংগ্রেস মুসলমানদের পক্ষে ভারতের সম্পদ বিতরণ করার পরিকল্পনা করছে।
ইন্ডিয়া হেট ল্যাবের রকিব হামিদ নায়েক বলেন, এই ধরনের পোস্টের উদ্দেশ হলো—ধর্মীয় ভিত্তিতে ভোটারদের মেরুকরণ করা এবং মুসলমানদের প্রতি অন্যদের ভয় ও শত্রুতা সৃষ্টি করা। ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে জয় লাভের জন্য ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগানোর কৌশল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে কেবল দুর্বলই করেনি, সমাজে বিভাজন ও ঘৃণার বিপজ্জনক বীজও বপন করছে।
নির্বাচনে প্রথম থেকে রাজনৈতিক প্রচারণায় গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর পিছনে প্রধান লক্ষ্য ছিলেন বিরোধী কংগ্রেস দলের নেতা রাহুল গান্ধী। তার বক্তব্য, ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা হতো অসম্পূর্ণ বা অপ্রাসঙ্গিক উপায়ে। আবার অনেক লেখায় দেখা যায়, রাহুল গান্ধী জনগণকে মোদিকে ভোট দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন, যা ছিল মিথ্যা তথ্য ও গুজব।
গুজবের আরও কিছু উদাহরণের মধ্যে ছিল ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে ভারতের সদ্ভাব হওয়া।
এ সময় একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হিন্দু মন্দিরের ভিডিও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং দাবি করা হয় মন্দিরটি ধ্বংসের জন্য রাহুল গান্ধী দায়ী, যা মূলত পাকিস্তানের একটি মন্দিরের ছবি ছিল