ঘটনাস্থলে আ’লীগের প্রতিনিধি দল
রংপুর অফিস॥
রংপুরের সদর উপজেলা, গঙ্গাচড়া ও তারাগঞ্জসহ ওই তিনটি উপজেলার মধ্যবর্তী জায়গায় অবস্থিত শলেয়াশা হরকলি ঠাকুরবাড়ি এলাকায় ফেসবুক স্টাটাস নিয়ে তান্ডবের ঘটনায় ঠাকুরবাড়ি গ্রামে হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে একজন নিহত হয়েছে। হামলাকারীদের দেওয়া আগুনে অনেকের বাড়িঘর পুড়ে গেছে। অনেকে আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।
এই গ্রামের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে করেন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। শনিবার বেলা ১২টায় তারা সেখানে পৌঁছায়। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহামুদ চৌধুরী ও দিনাজপুরের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জনশীল গোপালের নেতৃত্বে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখছেন তারা।
খালিদ মাহামুদ বলেছেন, ‘আমরা এলাকা ঘুরে দেখছি। দলের হাইকমান্ডকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে।’হিন্দুদের গ্রামে হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে কোতোয়ালি ও গঙ্গাচড়া থানায় মামলা দু’টি দায়ের করেছে। রংপুর জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন জানিয়েছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে । এবং যার ফেসবুকে ষ্টাটাস দেয়া নিয়ে তান্ডব সেই টিটু রায় ৭ বছর ধরে নারায়ানগঞ্জের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে চাকুরী করে। পুলিশ তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে শুক্রবার নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। রাতে অনেকের পেটে কোনও দানা-পানিও পড়েনি। সকালেও নাস্তা জোটেনি অনেকের। গতকাল শনিবার সকালে ঘটনাস্থল ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন, হাড়ি-পাতিলসহ রান্না করার সরঞ্জামাদি লুট হয়ে যাওয়ায় রান্না করার উপায় নেই। তবে প্রসাশন সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুক্রবার রাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে খিচুড়ি দেওয়া হয়েছে। হামলার পর ভয়ে অনেকে গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন। পুলিশের আশ্বাসের পর কেউ কেউ বাড়িতে ফিরলেও আবার হামলা হতে পারে এই আশঙ্কায় অনেকে গ্রামে ফেরেনি। শনিবার সকালেও পুড়ে যাওয়া বাড়িঘর থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে।
হামলার ঘটনা তদন্ত করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ। গতকাল শনিবার থেকে এ কমিটি কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু রাফা মোহাম্মদ আরিফকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রংপুর সদরের ঠাকুরবাড়ি গ্রামে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। রংপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো: জিয়াউর রহমান শনিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ইউএনও আরোও বলেন, ‘তাদের বাড়িঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে। এর আগে শুক্রবার বিকালে হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে আগুন ও পরে পুলিশের সঙ্গে জনতার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষে ও গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন ৩০ জন। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এদিকে হামলা ও বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় পুলিশের গুলিতে নিহত হামিদুলের লাশ এখনও রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ ৬ জনের মধ্যে মাহবুবকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিসিইউতে রাখা হয়েছে।