গাজা উপত্যকায় যু্দ্ধবিরতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরুর প্রেক্ষাপটে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বেশ কয়েকটি দাবি উত্থাপন করে বলেছেন, এগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না। আর এর ফলে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতি এবং পণবন্দী মুক্তি আলোচনা ভণ্ডুল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। তার নতুন আবদারগুলোর মধ্যে রয়েছে, ইসরাইলের যেকেনো সময় আবার হামলা শুরু করতে পারার নিশ্চয়তা।
রোববার রাতে নেতানিয়াহুর এই আবদারের ফলে ইসরাইল এবং মধ্যস্ততাকারী- উভয়ের মধ্যে ক্রোধের সৃষ্ট করেছে। অনেক অভিযোগ করেছেন, এর মাধ্যমৈ তিনি শান্তি আলোচনাকে ভণ্ডুল করে দিচ্ছেন।
অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর চলতি সপ্তাহে আবার শান্তি আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। হামাস বেশ নমনীয়তাও প্রদর্শন করেছে। কিন্তু নেতানিয়াহুর নতুন শর্ত সবকিছু শেষ করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নেতানিয়াহুর অফিস থেকে রোববার রাতে চারটি দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। এর প্রথমটি রয়েছে, যেকোনো সম্ভাব্য চুক্তিতে অবশ্যই ইসরাইলের যুদ্ধের সকল লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আবার যুদ্ধ শুরু করার সুযোগ থাকবে ইসরাইলের।
দ্বিতীয় দাবি হলো, এই নিশ্চয়তা দিতে হবে যে মিসর থেকে গাজায় কোনো অস্ত্রের চোরাচালান হতে পারবে না।
তৃতীয় শর্ত হলো, গাজা উপত্যকার উত্তরে সশস্ত্র ‘সন্ত্রাসীদের’ ফেরার অনুমতি দেয়া যাবে না।
চতুর্থ শর্ত হলো, হামাসের বন্দীদশা থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক জীবিত অপহৃতকে মুক্তি দিতে হবে।
নেতানিয়াহুর বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইলের এই পরিকল্পনার প্রতি প্রেসিডেন্ট বাইডেন একমত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, হামাস ইতোপূর্বে জানিয়েছিল যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার সময়ই ইসরাইলকে নিশ্চয়তা দিতে হবে যে তারা আর যুদ্ধ শুরু করবে না। ইসরাইল এই শর্তে রাজি হয়নি। হামাস পারে জানায়, কাতার ও মিসর তাদেরকে নিশ্চয়তা দিয়েছে যে তিন দফার যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম দফার পর দ্বিতীয় দফা বাস্তবায়নের সময় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা হবে। এই সময় ইসরাইল যুদ্ধ করবে না বলে মিসর ও কাতার মৌখিকভাবে নিশ্চয়তা দিয়েছে। হামাস এটা মেনে নিয়ে বলেছে, তাদেরকে লিখিতভাবে এই নিশ্চয়তা দিতে হবে।
এদিকে শুক্রবার ওয়ালা নিউজ জানিয়েছে, ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোশাদের প্রধান ডেভিড বারনিয়া দোহায় কাতারি আলোচকদেরকে জানিয়েছেন, মধ্যস্ততাকারীদের পক্ষ থেকে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয়া যাবে না।
এদিকে নেতানিয়াহুর অফিস থেকে নতুন যেসব শর্ত দেয়া হয়েছে, তা ইসরাইলের নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং মধ্যস্ততাকারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। তারা বলছেন, এসব দাবির মাধ্যমে সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।
ইসরাইলের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা পরিচয় প্রকাশ না করে চ্যানেল ১২-এ বলেন, ‘নেতানিয়াহু ভান করেন যে তিনি চুক্তি চান, কিন্তু কার্যত তিনি শান্তিচুক্তি ভণ্ডুল করতে চান।’
তিনি বলেন, বন্দীদের মুক্তির ব্যাপারে নেতানিয়াহুর কোনো উৎসাহ নেই। তিনি বরং তার অবস্থানকে চরম পর্যায়ে নিতে যেতে চান।
সূত্র : টাইমস অব ইসরাইল এবং অন্যান্য