• রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪২ অপরাহ্ন

ঝিঙার উপকারীতা

আপডেটঃ : সোমবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৭

বাংলাদেশের বেশ পরিচিত একটি সবজি ঝিঙা। এটি গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন সবজি। এর গঠন লম্বাটে। একদিকে ক্রমশ সরু হয়ে শেষ হয়। ঝিঙের গায়ে দৈর্ঘ্য বরাবর পাশাপাশি খাঁজকাটা দাগ থাকে এবং বাহিরের আবরণ খসখসে। ঝিঙের ফুল ফুটে বিকালে। ঝিঙা দুই প্রকার। তেতো ঝিঙা ও মিষ্টি ঝিঙা। মিষ্টি ঝিঙাই তরকারি হিসেবে সিদ্ধ করে খাওয়া হয়। ঝিঙা উদ্ভিদ জগতের ঈঁপঁৎনরঃধপবধব গোত্রের অন্তভর্‚ক্ত। ঝিঙার বৈজ্ঞানিক নাম খঁভভধ অবঁঃধহমঁষধ। শাক সবজিতে মানুষের দেহের খাদ্য চাহিদার উপাদান পুরোপুরি বিদ্যমান। আমরা অনেকই তরকারির গুণাগণ সম্পর্কে জানিনা। ফলে অতি কম দামে অধিক পুষ্ঠিগুণ সম্পুর্ণৃ সবজি গ্রহণ করা হতে বঞ্চিত হই। ঝিঙা এমন একটি সবজি যাতে খাদ্যের সব উপাদানই পাওয়া যায়। ঝিঙাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম পাওয়া যায়। তাছাড়া অন্যান্য খাদ্য উপাদানও কম বেশি এতে রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী ঝিঙায় পুষ্টি
উপাদান নি¤œরূপঃ শর্করা ৪.৩ গ্রাম, আমিষ ১.৮ গ্রাম, জলীয় অংশ (পানি) ৯৫ গ্রাম, খাদ্য শক্তি ৩০ কিলোক্যালরী, খনিজ লবণ, ০.৩ গ্রাম, চর্বি ০.৬ গ্রাম। ভিটামিন এ ৬৭০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-১ বা থায়ামিন ০.১১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-২ বা রাইবোফ্লাভিন ০.০৪ মিলিগ্রাম, নায়াসিন বা ভিটামিন বি-৬ ০.৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৬ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৪০ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৪০ মিলিগ্রাম, আয়রণ ০.৫ মিলিগ্রাম, আঁশ ০.৫ গ্রাম, ভিটামিন-ই ১.২০ মিলিগ্রাম।
রাসায়নিক উপাদানঃ ঝিঙায় লুফিন নামে এক প্রকার তিক্ত পদার্থ থাকে। ফুল ও ফলে থাকে মুক্ত অ্যামাইনো এসিড, আরজেনিন গøাইসিন, লাইসিন, থিওনিন, এসপার জিন, লিউসিন। বীজে থাকে ২০% স্যাপোনিন, গøাইকোসাইড, এনজাইম ও তিক্ত গøাসোসাইডিক উপাদান। মূলে থাকে কিউচার বিটাসিন বি এবং সামান্য পরিমাণে সি থাকে।
উপকারিতা ও ঔষধিগুণঃ ঝিঙে সবজি শীতল মধুর খাবার। পেটের খিদে বাড়ায়, হাপানি জ্বর, কাশি, বমি উপশম করে। পেট পরিস্কার করে দেহকে সুস্থ রাখে। ঝিঙা খাবার গ্রহণের ফলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। এর ভিটামিন সি রক্তের বিশুদ্ধতা চামড়ার সৌন্দর্য, চর্মরোগ, দাঁতের মাড়ি নানা রোগ ও এন্টিঅক্সিডেন্টকে শক্তিশালী করে। ফলে শরীর সহজে রোগে আক্রান্ত হয় না। এমনকি শরীরে ক্যান্সার জীবাণু ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। ঝিঙাতে থাকা ফোলেট হৃদরোগ বা হার্ট অ্যটাক প্রতিরোধ করে।
ঝিঙায় আঁশ থাকায় সহজে হজম হয় এবং কোষ্টকঠিন্য (শক্ত পায়খানা) দূর করে। যারা গ্যাষ্টিকে ভ‚গছেন তারা ঝিঙে খান উপকার পাবেন। ঝিঙাতে ভিটামিন ই থাকা এটি শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। রক্তের বিদ্যমান এলডিএল লো-ডেনসিটি লাইপ্রোটিন) নামের একপ্রকার ক্ষতিকর কোলেস্টরলের মাত্রা কমায়। হৃদরোগ ও ষ্টোকের জন্য দায়ী রক্তনালীতে এথোরোস্কেলেরোসিস প্রতিরোধ করে। মহিলাদের সন্তান ধারণ ক্ষমতা ও পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শরীরে বয়সের চাপ পড়তে দেয় না। ফলে তারুণ্য বজায় থাকে। * তেতো ঝিঙে কৃমি ও অর্শ রোগে বেশ উপকার সাধন করে। * ঝিঙে লতার শিকড় গরুর দুধে বা ঠান্ডা পানিতে ঘষে সকাল বিকাল পরপর তিনদিন খেলে পাথুরী রোগ দূর হয়। * যাদের পেটে বেশী গ্যাস জমা হয় তারা ঝিঙের তরকারী জোল সহ নিয়মিত খান উপকার পাবেন। ঁ তেতো ঝিঙা বেটে দেহের কোন অংশ আঘাত লেগে ফোলে গেলে প্রলেপ দেন কমে যাবে। * শরীরের কোনো অংশে ঘা হলে তেতো ঝিঙের রস লাগালে ঘা কমে যাবে। * যাদের পেটে পানি জমে তারা ঝিঙের তরকারি খান উপকার পাবেন। * কারো বমি বমি ভাব হলে কয়েকটা ঝিঙার পরিপক্ক বীজ বেটে পানির সাথে মিশিয়ে খান উপকার পাবেন। এ উপকারি সবজিটি বাড়ির আশ পাশে লাগান এবং যতœনিন। পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পুরণে এগিয়ে আসুন।

জহিরুল আলম শাহীন
শিক্ষক, কলাম ও স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ