ইসলামী অর্থনীতিতে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। হালাল উপার্জন ইসলামী জীবনের অতীব গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ইসলামের দিকনির্দেশনা হলো হালাল পথে জীবিকা উপার্জন করতে হবে। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল খাবার খেয়েছে, সুন্নাহ মোতাবেক আমল করেছে ও মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে, সে জান্নাতে যাবে। ’ (তিরমিজি শরিফ, হাদিস : ২৫২০)
সুদ-ঘুষ, চুরি-ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাই, জুয়া, মিথ্যাচার, চাদাবাজি, জবরদখল, যৌতুক, প্রতারণা ইত্যাদি অসামাজিক অনাচারে লিপ্ত হয়ে জীবিকা উপার্জন করা যাবে না। অবৈধ পন্থায় উপার্জন করার ব্যপারে আল্লাহ তাআলার কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের সম্পদ অবৈধ পন্থায় গ্রাস কোরো না এবং মানুষের ধনসম্পত্তির কিয়দাংশ জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকদের কাছে নিয়ে যেয়ো না। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৮)
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। আল্লাহ তাআলা এ সেরা সৃষ্টিকে তার ইবাদত-বন্দেগির জন্য সৃষ্টি করেছেন। তিনিই তাদের রিজিকের ব্যবস্থা করেছেন। এ মর্মে আল্লাহ তাআলার সুস্পষ্ট ঘোষণা হলো, ‘আমি জিন ও মানুষকে আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি। আমি তাদের থেকে কোনো রিজিক চাই না এবং তাদের থেকে আমি খাবারও চাই না। ’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৫৬-৫৭)
হালাল রিজিক খাওয়ার এ নির্দেশ ধনী-গরিব, ছোট-বড়, নবী-ওলি সবার জন্য। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা পবিত্র বস্তু আহার করো, যেগুলো আমি তোমাদের রিজিক হিসেবে দান করেছি এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করো, যদি তোমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করে থাকো। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭২)
এ আয়াতে হারাম খাদ্য ভক্ষণ করতে যেমন নিষেধ করা হয়েছে, তেমনি হালাল ও পবিত্র বস্তু খেতে বলা হয়েছে । পাশাপাশি তা খেয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। কারণ ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য হালাল জীবিকা খাওয়া অত্যাবশ্যকীয়।
প্রকৃত মুসলমান হিসেবে জীবন যাপন করতে হলে হালাল জীবিকা উপার্জনের কোনো বিকল্প নেই। হালাল পথে উপার্জিত জীবিকা ভক্ষণে মানুষের স্বভাব-চরিত্র সুন্দর হয়, সুকুমার বৃত্তিসমূহ বিকাশিত হয় ও সত্যানুরাগী হতে সতায়তা করে। অন্যদিকে হারাম উপার্জন মানুষের দেহ-মনের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। এটি নৈতিক অধঃপতনের প্রেরণা যোগায় ও বিপথগামী হতে উদ্বুদ্ধ করে। তাই আল্লাহর বন্দেগির জন্য পূর্বশর্ত হলো পবিত্র বা হালাল পানাহার। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে রাসুলরা! তোমরা হালাল খাদ্য গ্রহণ করো এবং নেক আমল করো। ’ (সুরা মুমিন, আয়াত : ৫১)
এ আয়াতে নেক আমল করার আগে পবিত্র বস্তু খেতে আদেশ করা হয়েছে। এখানে পবিত্র বস্তু বলতে হালাল সম্পদ বোঝানো হয়েছে। এবং ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে সৎকর্ম সম্পাদন করা তখনই সম্ভব হবে, যখন মানুষের আহার্য ও পানীয় বস্তু হালাল হবে।
বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বে মুসলমানদের অবস্থা খুবই উদ্বেগজনক। তারা আল্লাহর কাছে দোয়া করছে, কিন্তু কবুল হচ্ছে না। কারণ কী? কারণ হলো, হালাল খাদ্য গ্রহণ ছাড়া আল্লাহ তার বান্দার কোনো দোয়া কবুল করেন না ।
অবৈধ সম্পদ দান করে নেকির আশা করাটাও গুনাহের কাজ। অনেকের ধারণা অবৈধ উপার্জন করে কিছু দান করে দিলে আর হজ সম্পাদন করলে সব সম্পদ বৈধ হয়ে যায়! অথচ বিষয়টি মোটেও সত্য নয় । অবৈধ উপার্জনের জন্য অবশ্যই কিয়ামতের দিন জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিবসে কোনো মানুষ নিজের স্থান থেকে এক বিন্দুও সরতে পারবে না, যতক্ষণ না তার কাছ থেকে চারটি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে নেওয়া হবে। তন্মধ্যে একটি প্রশ্ন হচ্ছে, নিজের ধন-সম্পদ কোথা থেকে উপার্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছে?’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৭)