সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান বন্ধ করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দেয়া চিঠির বৈধতা বিষয়ে ৭টি পর্যবেক্ষণসহ রুল নিষ্পত্তি করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন।
পর্যবেক্ষণে তারা বলেন, ওই চিঠি সপ্রিম কোর্টের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে।
দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়ে আদালত সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে অবসরপ্রাপ্ত কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান বা তদন্ত করতে সতর্ক থাকতে হবে। দুদক এবং অন্য তদন্ত সংস্থাকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, কারণ এখানে বিচার বিভাগের মর্যাদা জড়িত।
আদালত পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, রাষ্ট্রপতি ছাড়া আর কেউ দায়মুক্তি পেতে পারেন না। সুপ্রিমকোর্টের ওই চিঠি সাধারন জনগনের মধ্যে বার্তা দিয়েছে যে, একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তার কর্মকাণ্ড থেকে দায়মুক্তি পাবেন।
প্রসঙ্গত, জয়নুল আবেদীনের দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাই ও অনুসন্ধানের কথা উল্লেখ করে তার চাকরির মেয়াদসংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র ও বেতনভাতা, অবসর সুবিধা খাতে গৃহীত অর্থের বিবরণী চেয়ে ২ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর চিঠি দেয় দুদক।
এর জবাবে গত ২৮ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তীর স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দুদককে পাঠানো হয়।
ওই চিঠিতে বলা হয়, উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রের পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশিত হয়ে জানানো যাচ্ছে- বিচারপতি জয়নুল আবেদীন দীর্ঘকাল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি অনেক মামলার রায় দেন। অনেক ফৌজদারি মামলায় তার প্রদত্ত রায়ে বহু আসামির ফাঁসিও কার্যকর করা হয়েছে। সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বিচারপতি প্রদত্ত রায় সবার ওপর বাধ্য করে। এহেন পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ আদালতের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে দুদক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তার প্রদত্ত রায়গুলো প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে।
ফলে জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের কোনোরকম ব্যবস্থা গ্রহণ সমীচীন হবে না মর্মে সুপ্রিম কোর্ট মনে করে।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বদিউজ্জামান তফাদার চিঠিটি নজরে আনলে গত ৯ অক্টোবর আদালত রুল জারি করেন। এতে সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের দুর্নীতির অনুসন্ধান বন্ধে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের চিঠি কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
উল্লেখ্য, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই সম্পদের হিসাব চেয়ে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে নোটিশ দেয় দুদক। ওই নোটিশ চ্যালেঞ্জ করে তিনি ওই বছরের ২৫ জুলাই হাইকোর্টে রিট আবেদন করলেও বিষয়টি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ হয়ে যায়। পরে ওই বছরের ২৫ অক্টোবর দুদক আবার সম্পদের হিসাব দাখিল করতে নোটিশ দিলেও বিষয়টি থেমে ছিল।
গত জানুয়ারিতে আবার তাকে নোটিশ দিয়ে আগের সম্পদের হিসাব স্পষ্ট করতে দুদকে হাজির হতে বলা হয়। পাশাপাশি তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে ২ মার্চ সুপ্রিম কোর্টকে চিঠি দেয়। এ নিয়ে জাতীয় সংসদেও আলোচনা হয়েছে। গত ১০ জুলাই হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন অবসরপ্রাপ্ত ওই বিচারপতি।