ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে বিটিভি ভবনে গিয়েছিলেন অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ, রিয়াজ, অভিনেত্রী নিপুণ আক্তারসহ আরও অনেকে। বিটিভি থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শোকাবহ আগস্ট মাসের প্রথম দিন বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রাঙ্গণে হাজির হয়েছিলেন সংস্কৃতি অঙ্গনের একঝাঁক তারকা। তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড। ‘সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা’ স্লোগান ব্যানারে ধারণ করে বিটিভি প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে তাদের মত প্রকাশ করেন শিল্পীরা।
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই বিকেলে বিটিভি কার্যালয়ের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে একদল লোক। পরে তারা সেখানকার দুটি মাইক্রোবাস ও কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এরপর বিটিভির সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। আজ পুড়ে যাওয়া বিটিভি ভবন পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বিনোদন অঙ্গনের বেশ কয়েকজন শিল্পী। তাদের মধ্যে ছিলেন সুজাতা, ফেরদৌস, রিয়াজ, অরুণা বিশ্বাস, নিপুণ আক্তার, শমী কায়সার, আজিজুল হাকিম, রোকেয়া প্রাচী, সুইটি, হৃদি হক, জ্যোতিকা জ্যোতি, সাজু খাদেম, সোহানা সাবা, চন্দন রেজা, সংগীতশিল্পী শুভ্র দেব, পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার, এস এ হক অলিক, খোরশেদ আলম খসরু প্রমুখ।
বিটিভির ধ্বংসযজ্ঞ কেন, এর পেছনে কারা? এমন প্রশ্ন রেখে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি জানান শিল্পীরা। পাশাপাশি ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘আমি দেখেছি, ছাত্ররা যে কোটার আন্দোলনে নেমেছিল সে কোটার পক্ষে আমরা সবাই ছিলাম, কিন্তু আন্দোলনে এই ছাত্রদের ঢাল করে একদল মানুষরূপী পশু জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ছারখার করে দিয়েছে আমাদের দেশটি। দেশটি হয়তো আবার আমরা কষ্ট করে ঠিক করে ফেলবো, কিন্তু যে প্রাণগুলো ঝরে গেলো, সেগুলো আর কোনোদিন ফিরে পাবো না। আজ আমরা বিটিভিতে এসেছি, আমাদের সংস্কৃতির অস্তিত্বের একটি জায়গা এটি। সেই বিটিভিতে আগুন কেন? এ অগ্নিসন্ত্রাসী কারা? তাদের খুঁজে বের করতে হবে। যতগুলো প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, আপনারা যদি দেখেন, বাচ্চারা যদি দেখে, বুঝতে পারবে সুপরিকল্পিতভাবে এসব করা হয়েছে। তাদের বিচার চাই। আজ আমরা সব অঙ্গনের শিল্পীরা এখানে একত্র হয়েছি সংহতি প্রকাশ করার জন্য। সব সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা।
শমী কায়সার বলেন, ‘সকল সংস্কৃতি কর্মীরা দাঁড়িয়েছি আজ শোকাবহ আগস্টের প্রথম দিনে। আগস্ট মাস আমাদের একটি প্রতিবাদের মাস। যে মাসে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতার ইতিহাসকে হত্যা করা হয়েছে। সেরকম একটি মাসে আমরা আবারো দাঁড়াবো এই বাংলাদেশ টেলিভিশন চত্বরে সেটা কখনো ভাবিনি। আজ আমরা ব্যথিত, ক্ষুব্ধ, মর্মহত। কারণ যে বাংলাদেশ টেলিভিশন বাঙালির সংস্কৃতির ধারক ও বাহক, বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেছে, সেই বাংলাদেশ টেলিভিশনে এসে এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখে মর্মাহত হয়েছি। এখানে আমরা বেড়ে উঠেছি, শিল্পী হিসেবে এই প্রাঙ্গণে বড় হয়েছি। এই ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিচার চাই। বাংলাদেশে এ রকম নৃশংসতা, এমন ধ্বংসযজ্ঞ, এত প্রাণহানি আমরা আর চাই না।
আজিজুল হাকিম বলেন, ‘বাংলাদেশ টেলিভিশনের ওপর যে নৃশংস হামলা হয়েছে, তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আমি এ আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সাথে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যেসব প্রাণ আমরা হারিয়েছি, তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।’
সুজাতা বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের খুঁজে বের করে এর বিচার হোক। আমরা শিল্পীরা যেন ঐক্যবদ্ধ হই এবং তাদের বিরুদ্ধে যেন রুখে দাঁড়াই। যখন দেশটা উন্নতির দিকে তখনই শত্রুরা আঘাত হানে, ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করে দেশ। আমরা শিল্পীরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছিলাম, আছি, থাকবো। দেশজুড়ে জ্বালাও, পোড়াও সন্ত্রাস আমরা চাই না, আমরা মানি না।
বিটিভিসহ সরকারি স্থাপনায় সহিংসতার বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেন পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার, হৃদি হক, সোহানা সাবা, সাজু খাদেম, অরুণা বিশ্বাস, নিপুণ প্রমুখ।