টানা আড়াই বছর ধরে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া। আর এর মধ্যেই প্রথমবারের মতো রাশিয়ায় প্রবেশ করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। ইতোমধ্যেই রুশ ভূখণ্ডের অনেকটা ভেতরে চলে গেছে তারা।
আর এসব ঘটনার মধ্যেই বেলারুশ সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা জড়ো করেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের এই পদক্ষেপের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় সীমান্ত অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছে বেলারুশও। আর এতেই বাড়ছে নতুন যুদ্ধের শঙ্কা।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, বেলারুশ সীমান্তে ইউক্রেন ১ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি সৈন্য মোতায়েন করেছে বলে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো জানিয়েছেন। রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র এই দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা একথা জানিয়েছে।
অন্যদিকে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের অনুপ্রবেশের পর সেখানে রুশ ও ইউক্রেনীয় সেনাদের মধ্যে লড়াই অব্যাহত রয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর মিত্র লুকাশেঙ্কো রোববার বলেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী মোতায়েনের প্রতিক্রিয়ায় মিনস্ক তার সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় এক তৃতীয়াংশ সমগ্র সীমান্তে মোতায়েন করেছে। ইউক্রেন অবশ্য বেলারুশ সীমান্তে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লুকাশেঙ্কো বলেছেন, ‘তাদের আক্রমনাত্মক নীতি দেখে, আমরা সেখানে গিয়েছি এবং কিছু পয়েন্টে সেনাদের মোতায়েন করে রেখেছি। যদি যুদ্ধ হয়, সেক্ষেত্রে পুরো সীমান্তে আমাদের সামরিক বাহিনী প্রতিরক্ষায় কাজ করবে।
এদিকে মস্কো থেকে আল জাজিরার ডোরসা জাব্বারি বলেছেন, লুকাশেঙ্কো ‘কিয়েভের কর্মকর্তাদের কিছু অত্যন্ত গুরুতর হুমকি দিয়েছেন’। তিনি বলেছেন, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করে বলেছেন– ইউক্রেন যদি বেলারুশিয়ান ভূখণ্ডে প্রবেশের চেষ্টা করে, তাহলে তারা আক্রমণ চালাবে।
অবশ্য ইউক্রেন সীমান্তে ঠিক কতজন বেলারুশিয়ান সেনা মোতায়েন করা হয়েছে তা বলেননি লুকাশেঙ্কো। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মিলিটারি ব্যালেন্স ২০২২ এর মূল্যায়ন অনুসারে, বেলারুশের পেশাদার সেনাবাহিনীতে প্রায় ৪৮ হাজার সৈন্য এবং প্রায় ১২ হাজার রাষ্ট্রীয় সীমান্ত রক্ষী রয়েছে।
সীমান্তে ইউক্রেনীয় সেনা মোতায়েনের বিষয়ে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো যখন ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে অনুপ্রবেশের পর তাদের হামলা অব্যাহত রেখেছে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে সেখানকার দ্বিতীয় আরেকটি কৌশলগত সেতু ধ্বংস করে দিয়েছে।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী রোববার ওই সেতুতে হামলার ভিডিও ফুটেজও প্রকাশ করে। এই সেতুটি কুরস্ক অঞ্চলের জভানোয়ের সেম নদীর ওপরে ছিল বলে জানা গেছে। অবশ্য হামলাটি ঠিক কখন হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ-মাত্রায় রুশ আক্রমণ শুরু করার পর থেকে এটিই রুশ ভূখণ্ডে ইউক্রেনীয় সেনাদের সবচেয়ে গভীর এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অনুপ্রবেশ। মূলত রুশ বাহিনী ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে ইউক্রেন প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে রাশিয়ার ভূখণ্ডে এই হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
এর আগে এই সপ্তাহের শুরুতে ইউক্রেন গ্লুশকোভো শহরের কাছে সেম নদীর ওপর আরেকটি সেতু ধ্বংস করে দেয়। এই সেতুটি সৈন্য সরবরাহের জন্য ব্যবহার করছিল রাশিয়া।
এদিকে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ায় ঢুকে পড়ার প্রায় দুই সপ্তাহ পর এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে– তারা সেখানে থাকার পরিকল্পনা করছে। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি গত শনিবার বলেন, তার সৈন্যরা কুরস্কে অবস্থান আরও শক্তিশালী করছে এবং রাশিয়ায় আরও বিস্তৃত হচ্ছে।
সূত্র: আল জাজিরা