• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন

গভর্নর ডলার বিক্রি বন্ধ ঘোষণা করলেন

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আড়াই মাস পর বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন বা ২ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে। গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) এসব তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

এদিকে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। ব্যাংক খাতের নানা সংকট ও সম্ভাবনা এবং সংস্কার উদ্যোগ বিষয়ে একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

সাক্ষাৎকারে রিজার্ভ বাড়ানো প্রসঙ্গে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, রিজার্ভ বাড়াতে বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আমরা রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি। অন্যদিকে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। ডলারের বাজার স্থিতিশীল আছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) অন্যান্য দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকেও রিজার্ভ সহায়তা পাওয়ার আশ্বাস মিলেছে। ফলে এখন আর রিজার্ভ কমবে না। ধীরে ধীরে বাড়বে।

ব্যাংক খাতের সংস্কারে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে গভর্নর বলেন, এখন পর্যন্ত ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করেছেন। এর মধ্য দিয়ে একক গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ব্যাংক খাতকে মুক্ত করা গেছে। একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এই টাস্কফোর্সের দ্বারা প্রতিটি ব্যাংকে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ বের করা হবে। তারপর কীভাবে এই ক্ষতি কাটানো যায় এবং সম্পদ উদ্ধার করা যায়, সেগুলোর বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ব্যাংক খাত খুব নাজুক অবস্থায় আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ক্ষত অনেক গভীর। তবে উদ্ধার করা যাবে। সময় লাগবে। এই ক্ষত যেমন এক দিনে তৈরি হয়নি, তেমনি ক্ষত সারানোও এক দিনে সম্ভব নয়। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

পুনর্গঠিত ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট বিষয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, সংকটে থাকা এসব ব্যাংকে তারল্য সরবরাহের চেষ্টা করছি। ব্যাংকগুলোর তারল্য প্রবাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের গ্যারান্টির মাধ্যমে এসব ব্যাংকে অন্য ব্যাংক থেকে অল্প অল্প করে তারল্য সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আর আমানতকারীরা যেন তাদের টাকা একসঙ্গে তুলে না নেয়, সেজন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আপাতত এসব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা নিয়েই চলবে। তবে এসব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরবচ্ছিন্ন তত্ত্বাবধানেই থাকবে।

ব্যাংক মার্জারের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আগে হিসাবনিকাশের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত চিত্র বের করা হবে। এজন্য অডিটর নিয়োগ দেওয়া হবে। সেজন্য বাইরে থেকে অর্থায়নের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বাইরে থেকে আন্তর্জাতিক মানের অডিটর এনে অডিট করানো হবে। যেন কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে না পারে।

এদিকে ব্যাংকের টাকা লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও পাচার হওয়া টাকা ফেরাতে আলাদা একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হচ্ছে। সেই টাস্কফোর্সের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে ব্যাংক খাতে গ্রাহকের অনাস্থার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আস্তা ফেরাতে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে গ্রাহকের আস্থা অনেকাংশে বেড়েছে। এর অংশ হিসেবেই ব্যাংক খাত থেকে যে ৭০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকের বাইরে চলে গিয়েছিল, তা থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকে ফিরে এসেছে বলে জানান তিনি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আগ্রহে গত ১৩ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুরকে। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আগের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার পদত্যাগ করায় তাকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। আজ ১৪ সেপ্টেম্বর গভর্নরের এক মাস পূর্ণ হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ