• রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৪৪ পূর্বাহ্ন

বড় সুযোগ বিশ্বমঞ্চে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

যখন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের নতুন এক পথে রূপান্তরের যাত্রা শুরু হয়েছে। ঠিক সেই সময়ে জাতিসংঘের সাথে বাংলাদেশের ৫০ বছরের সম্পর্কের মাইলফলক হাজির হয়েছে। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সদস্য নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার লাভের পর বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র এই দেশটির জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রাপ্তির পর দীর্ঘপথ পেরিয়ে গেছে। এর মাঝেই মানব উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচনসহ বিভিন্ন সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের।

শুধু তাই নয়, ২০২১ সালে বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রাথমিক শর্তও পূরণ করেছে বাংলাদেশ। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে ২০২১ সালের মধ্যে তিনটি শর্ত পূরণের প্রয়োজনীয়তা ছিল। বাংলাদেশ তা ইতোমধ্যে অর্জন করেছে। বর্তমানে অর্থনীতি, জাতীয় উৎপাদন ও জনজীবনের যে গতিপ্রকৃতি তা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বিদায় নেবে বাংলাদেশ। এরপর উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় ঢুকবে বাংলাদেশ।

দেশের একমাত্র নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জটিল এক টালমাটাল পরিস্থিতিতে দেশের শাসনভার গ্রহণ করেছে। এই সরকার দেশের শাসন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করছে।

বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির ওপর বিশ্ব সম্প্রদায় ঘনিষ্ঠ দৃষ্টি রাখছে। যে কারণে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংস্থাটিতে বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিকালীন দেশকে পুনর্গঠনে সরকারের প্রকাশ করা দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বনেতা, বিনিয়োগকারী ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে সমর্থন আদায়ের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হবে।

এমন স্মরণীয় প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে এই মুহূর্তে বহুপাক্ষিক সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। জাতিসংঘের সাথে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কে যেসব ক্ষেত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, সেগুলোর পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। সরকারের উচিত এই মুহূর্তে বহুপাক্ষিক সম্পৃক্ততার জন্য নতুন এবং দূরদর্শী অঙ্গীকারের সাথে কাজ করা। বিশেষ করে সেই সব বোঝাপড়ার পুনর্মূল্যায়ন করা যেখানে জাতিসংঘের সাথে বাংলাদেশের দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও জাতিসংঘের প্ল্যাটফর্মের সাথে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা যেমন—জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রায়ই সুযোগের মধ্যেও সীমিত ছিল। যা এই অংশীদারত্ব থেকে সম্পূর্ণরূপে উপকৃত হওয়ার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে, বাণিজ্য কিংবা বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা কাঠামো নিয়ে আন্তর্জাতিক আইনের ওপর বৃহত্তর বিতর্কের নেতৃত্ব দেওয়ার বা প্রভাবিত করার সুযোগ হাতছাড়া করে।

আলোচনার কৌশল, বহুপাক্ষিক কূটনীতি এবং বিরোধ নিষ্পত্তির দক্ষতা উন্নত করার লক্ষ্য রয়েছে বাংলাদেশের। যে কারণে কৌশলগত দিক থেকে এসব সুযোগকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে প্রভাব বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক মঞ্চে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্যকে এগিয়ে নেওয়াও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ প্রায়ই তাৎক্ষণিক এবং প্রতিক্রিয়াশীল বিষয়গুলোর দিকে মনোনিবেশ করেছে। কিন্তু কৌশলগতভাবে নিজেকে বৈশ্বিক ইস্যুতে নেতা হিসাবে হাজির করা থেকে বিরত থেকেছে। যদিও বৈশ্বিক শাসন সংস্কার ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতির ওপর এর প্রভাব রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, এমন সব বিষয়ের দিকে বাংলাদেশের এখন মনোযোগ দেওয়ার সময় এসেছে।

জাতিসংঘের সাথে বাংলাদেশের অংশীদারত্বের এই সুবর্ণ জয়ন্তী কেবল পেছনে ফিরে দেখার আনুষ্ঠানিক মুহূর্ত নয়। বরং বিশ্ব মঞ্চে আরও টেকসই ও প্রভাবশালী বাংলাদেশকে তুলে ধরার এক সুবর্ণ সুযোগও। অতীতে যেসব সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে, সেসব সুযোগকে আবারও কাজে লাগিয়ে আগামী ৫০ বছরে জাতিসংঘের সংস্থান ও প্রভাবকে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হবে। এ লক্ষ্যে দূরদর্শী কৌশল তৈরি ও সেসবের বাস্তবায়নই এখন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ