• সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

আরো দুইটি তাত্পর্যপূর্ণ অর্জন

আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

উত্পাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছ ও মাংসে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। গত রবিবার সংবাদ সম্মেলন করিয়া এই ঘোষণ দিয়াছেন মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকা অনুযায়ী একজন মানুষের দিনে অন্তত ৬০ গ্রাম মাছ খাওয়া প্রয়োজন। আর একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন প্রয়োজন ১২০ গ্রাম মাংস। দেশে বর্তমানে জনপ্রতি মাছ গ্রহণের পরিমাণ ৬২ দশমিক ৫৮ গ্রাম এবং দৈনিক মাথাপিছু মাংসের প্রাপ্যতা ১২১ দশমিক ৭৪ গ্রাম যাহা চাহিদার তুলনায় বেশি। ফলে মাথাপিছু চাহিদা অনুযায়ী মাছ ও মাংস উত্পাদন— উভয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ হইল। ইহা বর্তমান সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপেরই ফসল। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত ৯ বত্সরে মত্স্য উত্পাদন বাড়িয়াছে সাত গুণ। শুধু তাহাই নহে, মত্স্য উত্পাদনে বাংলাদেশের সাফল্য আজ বিশ্ব পরিমণ্ডলে স্বীকৃত। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ফাও) ২০১৬ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মত্স্য আহরণে চতুর্থ ও মত্স্য চাষে পঞ্চম অবস্থানে রহিয়াছে বাংলাদেশ। কার্যকর ইলিশ সম্পদ ব্যবস্থাপনার কারণে গত কয়েক বত্সরে ব্যাপকভাবে বাড়িয়াছে ইলিশের উত্পাদন। সেই সঙ্গে ইলিশ ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসাবেও স্বীকৃতি পাইয়াছে।

মত্স্য অধিদপ্তরের এক হিসাব অনুযায়ী দেশে ২০১৬-১৭ সালে মাছের উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ লক্ষ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। সেখানে উত্পাদিত হইয়াছে ৪১ লক্ষ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন। অনুরূপভাবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ৭১ দশমিক ৩৫ লক্ষ টন চাহিদার বিপরীতে গত বত্সর দেশে মাংস উত্পাদিত হইয়াছে ৭১ দশমিক ৫০ লক্ষ টন। গেল বত্সর দুধ ও ডিম উত্পাদিত হইয়াছে যথাক্রমে ৯২ লক্ষ ৮৩ হাজার মেট্রিক টন এবং প্রায় ১৫ শত কোটি। গরু হূষ্টপুষ্টকরণ কার্যক্রম ও বেসরকারি পর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক পোলট্রি উত্পাদনের কারণেও বাড়িয়াছে মাংসের উত্পাদন। বর্তমান দেশে প্রতিদিন প্রায় এক কোটি ৫৫ লক্ষ ব্রয়লার বাচ্চা উত্পাদিত হইতেছে। গরুর মাংসের দাম বেশি হইলেও সেই অভাব অনেকটাই পূরণ করিতেছে মুরগির মাংস। ইহার আগে আমরা প্রধান খাদ্য চাউলে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করিয়াছি। এখন মাছ-মাংসে এই স্বনির্ভরতা অর্জনের পর ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ প্রবাদটি আবারও সার্থক হইল। ইহাতে আমাদের পুষ্টি পরিস্থিতিরও উন্নয়ন হইবে বলিয়া আশা করা যায়। এই সাফল্যের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সংশ্লিষ্ট মত্স্য ও প্রাণী বিজ্ঞানীগণ এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের জানাই অভিনন্দন।

উপর্যুক্ত সাফল্য হইতে প্রমাণিত হয়—আমরা পারি। এখন ডাল ও পিঁয়াজসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য উত্পাদনেও সমানভাবে সাফল্য অর্জন করিতে হইবে। এদিকে সমুদ্র সীমা মীমাংসার পর আমাদের ব্লু ইকোনমির গুরুত্ব বাড়িয়াছে। আশার কথা হইল, গবেষণা ও জরিপ জাহাজের মাধ্যমে সামুদ্রিক মত্স্য জরিপ পরিচালনা করা হইতেছে। এই জরিপ পূর্ণাঙ্গরূপে সম্পন্ন হইলে আমাদের সম্মুখে উন্মোচিত হইবে সম্ভাবনার এক নূতন দিগন্ত। তখন আমরা গুরুত্বপূর্ণ মত্স্য রপ্তানিকারক দেশের তালিকায়ও জায়গা করিয়া নিতে পারিব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ