রাজধানীর নিকটবর্তী সাভার পৌরসভা পুরোটাই যেন পরিণত হইয়াছে ডাস্টবিনের শহরে। ময়লা আবর্জনা ফেলিবার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা হইলেও তাহা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। অন্যদিকে ডাস্টবিনগুলি স্থাপন করা হইয়াছে ব্যস্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসহ যত্রতত্র। আবার কোথাও-বা ডাস্টবিনের অস্তিত্বই খুঁজিয়া পাওয়া যায় না। যাহার যেখানে ইচ্ছা ময়লা ফেলিতেছে। ফলে যাহা হইবার তাহাই হইতেছে। অনেকটা এলাকা জুড়িয়া ছড়াইয়া পড়িয়াছে ময়লা-আবর্জনা। আর দিনের পর দিন পড়িয়া থাকা এই বর্জ্যের তীব্র দুর্গন্ধে নাভিশ্বাস উঠিয়াছে এলাকাবাসীর। সেইসঙ্গে বাধাগ্রস্ত হইতেছে যান চলাচলও। এই খবর ছাপা হইয়াছে গত রবিবারের ইত্তেফাকে। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয়, দুই সিটি কর্পোরেশন নিয়ন্ত্রিত রাজধানীর চিত্র কি ভিন্ন? দুর্ভাগ্যজনক হইলেও সত্য যে, সেই চিত্রও কোনো অংশে কম মর্মান্তিক নহে।
মগবাজার হইতে বাংলামোটরমুখী ব্যস্ত রাস্তার মোড়ে অনেকখানি স্থান জুড়িয়া জমিয়া থাকা আবর্জনার সচিত্র প্রতিবেদন সংবাদপত্রে ছাপা হইয়াছে কয়েকদিন আগে। সড়ক-মহাসড়ক কিংবা অলিগলি শুধু নহে, বিপুল অর্থব্যয়ে নির্মিত রাজধানীর বৃহদাকার স্থাপনা এবং দৃষ্টিনন্দন ফুটপাতগুলিও সয়লাব হইয়া গিয়াছে ময়লা-আবর্জনায়। টাইলস দিয়া সদ্যনির্মিত কাওরান বাজার-সংলগ্ন ফুটপাত ইতোমধ্যে পরিণত হইয়াছে গণপ্রস্রাবাগারে। হাতিরঝিলের অবস্থাও করুণ। আর ২০১৩ সালের অক্টোবরে চালু হওয়া মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়কের নিচে ময়লা ফেলা বন্ধ করিতে এখন চার কোটি টাকা ব্যয়ে লোহার বেড়া দেওয়া হইতেছে। কারণ গত কয়েক বত্সরে এই উড়ালসড়কের নিচের সড়ক বিভাজকের বেশিরভাগ ফাঁকা জায়গাই ভাগাড়ে পরিণত হইয়াছে। পরিচ্ছন্ন রাজধানী গড়িয়া তুলিবার লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে রাজধানীতে যে ডাস্টবিনগুলি স্থাপন করা হইয়াছিল তাহা ইতোমধ্যেই স্ট্যান্ডসুদ্ধ উধাও হইয়া গিয়াছে। সব মিলাইয়া পরিস্থিতি খুবই করুণ।
প্রশ্ন হইল, ইহার জন্য আমরা কাহাকে দায়ী করিব—নগর কর্তৃপক্ষকে নাকি নগরের বাসিন্দাদেরকে? অপ্রিয় হইলেও সত্য যে, দায় কাহারও কম নহে। নগর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হইল, নগরকে পরিচ্ছন্ন রাখা এবং অপরিচ্ছন্নতার জন্য দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হইল, কাজী নজরুল ইসলাম সড়কের মতো ভিআইপি সড়কে সদ্যনির্মিত ফুটপাতে যখন দিনের পর দিন প্রকাশ্যে মূত্রত্যাগ করা হইতেছে তখন কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ দূরে থাক, কর্তৃপক্ষের অস্তিত্ব লইয়াই সংশয় জাগে। ফুটওভারব্রিজ এবং আন্ডারপাসগুলির অবস্থাও তথৈবচ। জমিয়া থাকা কাদাপানি আর ময়লা-আবর্জনার কারণে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাইতে হয় পথচারীদের। কিন্তু দেখিবার কেহ নাই। অন্যদিকে, ইহাও অনস্বীকার্য যে, নাগরিকরা নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন না হইলে সোয়া কোটি বাসিন্দার এই মহানগরটিকে বসবাসের উপযোগী রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নহে। সর্বোপরি, জনগণের ভোটে নির্বাচিত নগর বা পৌর কর্তৃপক্ষ তাহাদের দায়িত্ব কতখানি নিষ্ঠার সহিত পালন করিবে বা আদৌ করিবে কি না তাহাও অনেকাংশে নির্ভর করে নাগরিকদের ভূমিকার উপর। অতএব, ভুক্তভোগী নাগরিকদের একদিকে যেমন দায়িত্বসচেতন হইতে হইবে, অন্যদিকে তেমনি নিশ্চিত করিতে হইবে তাহাদের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতাও।