অপুষ্টি যেকোনো দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন প্রয়াসের পথে অন্যতম বড় বাধা। একটি দেশ সমৃদ্ধ হয় তাহার নিজস্ব মানবসম্পদে। অপুষ্টি সেই মানবসম্পদকে শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের পথকে রুদ্ধ করিয়া দেয়। আমাদের অধিকাংশ গর্ভবতী মা গরিব। তাহারা জানেন না কী খাইলে কী হয়। তাহারা ইহাও জানেন না যে, পেটে বাচ্চা থাকিলে বেশি করিয়া প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, স্নেহজাতীয় খাবার খাইতে হয়। কিন্তু দেশের পুষ্টি পরিস্থিতি লইয়া পরিচালিত জরিপে দেখা গিয়াছে, শহরের বস্তি কিংবা প্রত্যন্ত অঞ্চলে মা-সহ অন্য শিশু-পরিচর্যাকারীদের ৭৩ শতাংশ স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে অজ্ঞ। যাহার ফলে দেশের পাঁচ বত্সরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে অনেক শিশুর উচ্চমাত্রায় অপুষ্টি রহিয়াছে। ইহাদের মধ্যে বয়সের তুলনায় ৩৬ শতাংশের উচ্চতা কম, ১৪ শতাংশ কৃশকায় এবং ২৩ শতাংশের ওজন কম। জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা (২০১৬-২০২৫) চূড়ান্ত খসড়ায় দেখা গিয়াছে, দেশের ১৮ শতাংশ গর্ভবতী মা অপুষ্টির শিকার। সার্বিকভাবে অপুষ্টির কারণে দেশে ২৩ শতাংশ শিশু জন্মগ্রহণ করিতেছে কম ওজন লইয়া।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হইল—পুষ্টি এবং প্রাথমিক চিকিত্সা সেবায় যে অল্প কয়েকটি দেশ উন্নতি করিয়াছে বাংলাদেশ তাহার মধ্যে অন্যতম। স্বাস্থ্যের দিক হইতেও ভালো করিয়াছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় এই উন্নতির গ্রাফে বাংলাদেশই অগ্রগণ্য। যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যানচেট-এর একটি প্রতিবেদন হইতে জানা যায়, গত দেড় দশকে বাংলাদেশে নবজাতকের মৃত্যুর হার অর্ধেক কমিয়াছে। অন্যদিকে মৃত অবস্থায় নবজাতকের জন্ম প্রতিবত্সর শতকরা ৩ দশমিক ৪ ভাগ হারে কমিতেছে। কিন্তু ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করিতে হইলে এই হার পাঁচ ভাগের বেশি হওয়া প্রয়োজন। তাহা ছাড়া নবজাতক এবং মাতৃমৃত্যু যে হারে কমিতেছে, গর্ভে শিশুমৃত্যুর হার সেই হারে কমিতেছে না। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা মনে করেন, ইহার প্রধান কারণ গর্ভবতী মায়ের অপুষ্টি। অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা এবং সঠিক জ্ঞানের অভাবে অর্ধেকেরও বেশি গর্ভবতী মা এখনো অপুষ্টিতে ভোগেন। মা অপুষ্টিতে ভুিগলে গর্ভের শিশুও অপুষ্টিতে ভোগে। অনেক সময় গর্ভবতী মায়েরা আয়রন, ফলিক অ্যাসিড খাইতে চাহেন না। অনেক ক্ষেত্রে নানা কারণ দেখাইয়া পরিবারের সদস্যরা কম খাইতে বাধ্য করে গর্ভবতী মায়েদের। ইহাও তাহাদের অপুষ্টির কারণ বলিয়া মনে করা হয়।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ইউএনএফএও) সমীক্ষা হইতে দেখা যায় যে, অনাহারজনিত কারণে অপুষ্টির হার বিশ্বে ক্রমশই হ্রাস পাইতেছে। সুতরাং অপুষ্টিজনিত সমস্যা হইতে বিশ্বকে রক্ষা করিতে হইলে পুষ্টিকর খাদ্যের উপাদান সম্পর্কে যথাযথ ধারণা ও তথ্য পরিবেশনের উদ্যোগ গ্রহণ করিতে হইবে। এই ক্ষেত্রে শুধু গর্ভবতী মাকে নহে, তাহার পরিবারের স্বামী, শাশুড়িসহ অন্যদেরও এই তথ্যগুলি জানাইতে হইবে। একই সঙ্গে স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিতে আরো সহজবোধ্যভাবে এই বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করা যাইতে পারে।