• বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০৮:০৩ অপরাহ্ন

অর্থাভাবে মেডিকেলে পড়া অনিশ্চিত রিপনের

আপডেটঃ : রবিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৮

পীরগঞ্জ(ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি॥
চরম দারিদ্রতা কোনোভাবেই থামাতে পারেনি রিপনের অদম্য ইচ্ছা ও মেধাশক্তি। পান দোকানদার বাবা ও দিনমজুর মায়ের সন্তান রিপন এবারের মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলেও এখন তার স্বপ্ন দারিদ্রতার অভিশাপে দুঃস্বপ্ন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের থুমনিয়া গ্রামের ভবেশ চন্দ্র রায় ও সোভা রানী রায়ের দরিদ্র পরিবারে জন্ম রিপন চন্দ্র রায়ের। তিন ভাই-বোনের মধ্যে রিপন বড়। ছোট দুই বোনের একজন শহীদ সালাউদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে ও অন্যজন ভুরভুষিকালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেনিতে  পড়ে।
বাবা ভবেশ চন্দ্র ছোট একটা পান দোকনদার। ছেলের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে ও সংসারের আহার সংকুলান না হওয়ায় মা সোভা রায়কেও যেতে হয় কৃষি শ্রমিক হিসেবে দিনমজুরের কাজ করতে। দারিদ্রতার এই চরম অভিশাপ থেকে পরিবারকে মুক্ত করতে রিপন রায় স্বপ্ন দেখেন বড় হয়ে চিকিৎসক হওয়ার।
কৃতি এ শিক্ষার্থী রিপন রায় সমকালকে বলেন, প্রাথমিক স্কুলে লেখাপড়ার সময় সে চরম অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে তারা বাবা-মা। কিন্তু অর্থাভাবে ঠিকমত চিকিৎসাও করাতে পারছিল না তার পরিবার। তখন থেকে তার ইচ্ছা বড় হয়ে চিকিৎসক হবে। চিকিৎসক হওয়ার অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়েই লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করে সে। চরম দারিদ্রতার মধ্যেও তার অদম্য ইচ্ছা আর প্রবল মেধাশক্তির ফলে এবার সে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পায়।
২০১২ সালে পীরগঞ্জের পার্শ্ববর্তী কাহারোল উপজেলার আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে জয়নন্দহাট উচ্চ বিদ্যালয় হতে জেএসসিতে জিপিএ-৫ ও একই বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্ব অর্জন করে। ২০১৭ সালে পীরগঞ্জ সরকারি  কলেজ থেকে জিপিএ-৪.৯২ পেয়ে এইচএসসি পাস করে রিপন। রিপনের বাবা ভবেশ রায় সমকালকে জানান, জমি বলতে বাবার দেয়া বাড়ির ভিটাটুকু ছাড়া আর কিছুই নেই। ছেলের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ চালাতে হয় একটি ছোট পানের দোকানের আয় থেকে। স্বল্প এই রোজগার দিয়ে সংসারে নুন আনতে যখন পান্তা ফুরায় অবস্থা, তখন ছেলের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন কিভাবে পুরন হবে – এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। ছেলের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন-সাধ পুরনের সাধ্য না থাকায় তিনি মাঝে মাঝে চিন্তায় হতাশ হয়ে পড়েন। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর রিপনের মা সোমা রায় সমকালকে বলেন, ‘ভগবান যেন হামার ছুয়ার ইচ্ছা পূরণ করেন।’ তিনি জানান, রিপনের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে তিনটি এনজিও থেকে লোন নিয়েছি। তাছাড়া ছেলের মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার খরচ জোগাতে ইতোমধ্যে দুইটি গরুও বিক্রি করতে হয়েছে।
পীরগঞ্জ সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. আরিফুর রহমান আকন্দ, ওহিদুর রহমান ও সারোয়ার হোসেন জানান, এরকম মেধাবী শিক্ষার্থী সমাজে খুবই বিরল। বাবা-মায়ের দারিদ্রতা তার প্রবল ইচ্ছা ও মেধা শক্তিকে কখনই দমাতে পারেনি।
সৈয়দপুর ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হক জানান, রিপন ছোট বেলা থেকেই খুব মেধাবী। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে যেনে খুশি হয়েছি। তবে তার মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছা যেন পুরন হয় সেজন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে অনুরোধ করছি।
রিপন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে তাকে দেখতে বাড়িতে আসছে সাধারন মানুষ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ