কালিয়াকৈর(গাজীপুর)প্রতিনিধি ॥
গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের পল্লীবিদ্যুৎ ঘনবসতিপূর্ন হরিণহাটি এলাকায় বৃহস্পতিবার ভোরে একটি পোশাক কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল বাতাসে মিশে শিশু ও শ্রমিকসহ শতাধিক লোক অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। এসময় একের পর এক অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে বাসাবাড়ি ছেড়ে লোকজন বিভিন্ন দিকে ছুটাছুটি করে বেশকিছু দুরে গিয়ে রাস্তার উপড় অবস্থান করে।
ভুক্তভোগীরা, স্থানীয় এলাকাবাসি,পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও কারখানা সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের পল্লীবিদ্যুৎ হরিণহাটি এলাকার ইকোটেক্স লিমিটেড নামে পোশাক কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল নির্গত হয়ে এ ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার ভোররাত সাড়ে ৩ টার দিকে ওই কারখানার জন্য আমদানিকৃত হাইড্রোজেন পার অক্সাইড লোড-আনলোড করছিল কারখানা কর্তৃপক্ষ।
এ সময় হাইড্রোজেন পার অক্সাইড রাখার ট্যাঙ্কে না রেখে ভুলক্রমে অন্য কেমিক্যালের ট্যাঙ্কিতে লোড-আনলোড করতে থাকে। এ কারনেই সঙ্গে সঙ্গে ওই কেমিক্যালের বিষাক্ত ধোয়া বের হয়ে থাকে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে কেমিক্যালের বিষাক্ত ধোয়ায় ওই এলাকার বায়ু ও পরিবেশ দুষিত হয়ে উঠে। ঘরের বাহিরে থাকা জগ, গ্লাস, থালা-বাটিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের রং পরিবর্তন হয়ে কালচে আবরণের সৃষ্টি হয়।
ভোর ৪টার দিকে ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলতেই একটা বিষাক্ত গ্যাস ভিতরে ঢুকে। ঘরের ভিতরে থাকা লোকজনের শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘুরানো, চোখ জ্বালাপুড়া, বুক ব্যথা, কাশি, ভমি হতে থাকে। এতে প্রায় শিশু ও শ্রমিকসহ শতাধিক মানুষ অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। এভাবে একের পর লোক অসুস্থ্য হয়ে পড়লে বাসাবাড়ি ছেড়ে কিছুদুরে বিভিন্ন রাস্তায় আশ্রয় নেয় স্থানীয় লোকজন।
পরে এঘটনার খবর পেয়ে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে অসুস্থ্য লোকজনকে উদ্ধার করে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও আশপাশের লোকজন অসুস্থ্যদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সফিপুর মর্ডাণ হাসপাতাল, সফিপুর জেনারেল হাসপাতালসহ স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে পাঠিয়েছে। এদের মধ্যে ৪০ জন মর্ডাণ হাসপাতালে, ৫ জন সফিপুর জেনারেল হাসপাতালে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪ জন চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। বাকীরা স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বিপুল সংখ্যক লোকজন কারখানার সামনে অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে শিল্পপুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের বুঝিয়ে শান্ত করলে লোকজন চলে যায়।
অসুস্থ্য লাবনী আক্তার, নাছিমা আক্তার, রাজিয়া আক্তার, রঙ্গমালা, আব্দুর রহমান বলেন, ওই এলাকায় বসবাস করে তারা সবাই বিভিন্ন পেশাক কারখানায় কাজ করে আসছিল। প্রতিদিনের মতো ভোরে উঠে দরজা খুললেই একটা গ্যাস ঢুকে পড়ে। এতে শিশুসহ আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি।
ওই কারখানার এইচআর এডমিন অফিসার সোহেল রানা জানান, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ৫০ ট্যাঙ্কিতে ঢুকানোর সময় ওভার-ফ্লু হয়। এতে ৫-৭ লিটার গ্যাস বাতাসে ঢুকে এ ঘটনাটি ঘটেছে। তবে যারা অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে কারখানার পক্ষ থেকে তাদেরকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের ষ্টেশন কর্মকর্তা কবিরুল আলম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে অসুস্থদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠাই। তবে ইকোটেক্স লিমিটেড কারখানার কেমিক্যাল বাতাসে ছড়িয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।
গাজীপুর-২ শিল্পপুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম রেজা জানান,পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার ওই কারখানা থেকে যে গ্যাস বাতাসে ঢুকে পড়েছে, সে গ্যাসটি অনেকটা কাঁদানে গ্যাসের মতো। এতে কিছু লোকজন অসুস্থ্য হয়ে পড়ে।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, হরিণহাটি এলাকায় ভোররাতে একটি কারখানার বিষাক্ত গ্যাসের কারণে লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পাই। খবর পেয়ে সাথে সাথে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়।