গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের পর থেকে রাজধানীতে দলটির ২ হাজার ২৬১ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত কয়েক দিনে হওয়া ৮৯টি মামলার বিপরীতে তাদরে গ্রেপ্তার করা হয়।
রোববার (৫ নভেম্বর) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) কে এন রায় নিয়তি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও সহিংসতার ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৮৯টি মামলা হয়েছে। এতে বিএনপির ২ হাজার ২৬১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল রাজধানী থেকে ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত রাজধানীর পল্টন থানায় সবচেয়ে বেশি ১৪টি মামলা করা হয়েছে। এরপরই রয়েছে রমনা মডেল থানা। এ থানায় ৬টি মামলা হয়েছে।
গতকাল শনিবার গভীর রাতে ঢাকা থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে আটক করা হয়েছে। এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে রাজধানীর বাড্ডায় বোনের বাসা থেকে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সকে আটক করা হয়।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি শূন্য করতে সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, সারাদেশে গ্রেপ্তার থামছে না। দেশের জাতীয় নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত গ্রেপ্তারের যে হিড়িক চলছে, যে ধারা চলছে সেটা ভাষায় বলা যাবে না। আক্রমণে আক্রান্ত হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনাও কিন্তু থামছে না।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭৬ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় ৫৭৫ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৭১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মোট মামলা হয়েছে ৫০৬টির বেশি এবং মোট আসামি ৩৮ হাজার ৫৬০ জন। মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের আর আহত হয়েছে ৫ হাজার ৭৮০ জন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী থাকার যে কি স্বাদ তা শেখ হাসিনা পেয়েছেন। সেই স্বাদের কারণে তিনি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে চান না। দরকার হলে আরও যদি রক্ত ঝরাতে হয়, রক্ত ঝরিয়ে হলেও তিনি একতরফা নির্বাচন করবেন।
তিনি বলেন, বিদেশি একটি সংবাদ মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণই নাকি তার মূল শক্তি। তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিজে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিচ্ছেন না কেন? জনগণ সঙ্গে থাকলে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে ভয় পাচ্ছেন কেন?
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিষাক্ত মোহরের আঁচড়ে গণতন্ত্রকামী মানুষকে ছিন্নভিন্ন করতে চাচ্ছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অবরোধ, অগ্নি-সন্ত্রাস যারা করবে তারা কেউ যেন পার না পায়। যদি কেউ ধরা পড়ে তাকে ধরে ওই আগুনে ফেলতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর ভয়ানক অগ্নিকুণ্ডলী বিএনপির নেতাকর্মীদের নিক্ষেপের হুমকি, ভয়ংকর সর্বনাশী হুমকি।
বিএনপির সিনিয়র এ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, যারা কারাগারে বন্দি নেতাদের বোমা ছুড়ে মারার মিথ্যা মামলা দিতে পারে তারা শান্তিপূর্ণ অবরোধকারী নিরীহ নেতাকর্মীদের অগ্নি-সন্ত্রাসী বানিয়ে পুড়িয়ে মেরে ফেলতে পারে। এটা অসম্ভব কিছু না। তাদের দ্বারাই এটা সম্ভব।
তিনি বলেন, মন্ত্রীরা জাতিসংঘ, গণতান্ত্রিক দেশ ও মানবাধিকার সংস্থার আহ্বান আমলে নেওয়া তো দূরে থাক, তারা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ২৮ অক্টোবরে ফুটেজ যেগুলো প্রকাশ পেয়েছে তার প্রতিটাতে দেখা যায়, পুলিশের পাশে লাঠি নিয়ে আওয়ামী লীগের লোকেরা আছে। বিএনপির ডাকা হরতাল-অবরোধে পুলিশ, ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগ একযোগে মোকাবিলা করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী ক্যাডাররা একে অপরের পরিপূরক।