চলমান অবরোধে যাত্রীবেশে বাসে উঠে আগুন দেওয়ার ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের এক নেতাকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। এই নেতার নেতৃতে রাজধানীতে প্রতিটি বাসে আগুন দিলে পুরস্কার হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা দেওয়া হতো- এমন অভিযোগে রাজধানীর সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলে যুগ্ম আহ্বায়ক আমির হোসেন রকি ও তার সহযোগী সাকিব ওরফে আরোহানকে (২১) গ্রেফতার করা হয়েছে।
রোববার (৫ নভেম্বর) রাতে বাবুবাজার ব্রিজ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে বোতল ভর্তি পেট্রোল উদ্ধার করা হয়।
সোমবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত ১ নভেম্বর রাজধানীর মুগদাপাড়া আইডয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মিডলাইন পরিবহনের একটি বাসে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা যাত্রীবেশে আগুন দিয়ে পালানোর সময় আল আমিন নামে একজনকে আটক করা হয়। আল আমিন কার নেতৃত্বে কীভাবে বাসে আগুন দিয়েছেন তা স্বীকার করেছেন। এই ঘটনায় সিটিটিসির গোয়েন্দা দল আল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে তিনি বেশকিছু তথ্য দেন।
সিটিটিসির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আল আমিন জানান, তার নেতা বিএনপিকর্মী মিজানুর রহমান। এই মিজানের নেতৃত্বে আরও দুজন কমলাপুর টিটিপাড়া থেকে বাসে উঠে পেছনের সিটে গিয়ে বসেন। এরপর সঙ্গে থাকা পেট্রোল ঢেলে বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। মিজানসহ তিনজন পালিয়ে যেতে পারলেও স্থানীয়রা আল আমিনকে ধরে ফেলেন। পরে মিজানকে গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়।
এরপর মিজান জিজ্ঞাসাবাদে সিটিটিসিকে জানান, আমির হোসেন রকি নামের মহানগর ছাত্রদলের একজন নেতার নেতৃত্বে তিনি রাজনীতি করেন। এই রকির নির্দেশনায় ও তত্ত্বাবধানে প্রথম দফায় মিডলাইন বাসসহ বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এই নেতার কাছ থেকে সব রসদ পেয়ে চারজন বাসে আগুন দেওয়া শুরু করেন। এর বাইরেও আরও বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দিয়েছেন তারা।
আসাদুজ্জামান আরও বলেন, প্রথমদিনের অবরোধে মিজান এসে আল আমিনের কাছে বোতলে পেট্রোল ও টাকা দেন। এসময় মিজান তাদের আশ্বস্ত করেন, তাদের দল ক্ষমতায় আসছে, কোনো সমস্যা হবে না। কমলাপুরের টিটিপাড়া থেকে খিলগাঁও সড়কে চলাচল করা বাসে আগুন দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় আল আমিনকে। প্রতিটি বাসে আগুন দেওয়ার জন্য তিন হাজার টাকা বোনাস মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন রকি। পরে দ্বিতীয় দফার অবরোধে বাসে আগুন দেওয়ার জন্য ডাবল বোনাস ঘোষণা করেন রকি।
দ্বিতীয় দফার অবরোধে গতকাল রোববার রাজধানীতে ১০টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সিটিটিসি প্রধান বলেন, গতকালও (রোববার) রকির নির্দেশনায় দুটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। পাশাপাশি রকির নির্দেশে যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জে আগুন দেওয়ার সময়ে হাতেনাতে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। আমাদের গোয়েন্দাদের তৎপরতায় আগুন ঠেকিয়ে দেওয়া হয়। এটাতে ব্যর্থ হওয়া রকি তার সহযোগী সাকিবকে নিয়ে কেরানীগঞ্জে এলাকায় বাসে আগুন দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিএনপির এক নেতার কাছে যাচ্ছিলেন। পরে আমরা তার পিছু নিয়ে বাবুবাজার ব্রিজ থেকে পেট্রোলসহ তাকে গ্রেফতার করি।
‘ছাত্রদলে যুগ্ম আহ্বায়ক আমির হোসেন রকির কাছ থেকে আমরা বেশকিছু তথ্য-প্রমাণ পেয়েছি৷ তিনি কী কী কাজ করেছেন এই দুই দফা অবরোধে, কার কার নির্দেশনা ছিল, কারা টাকা দিয়েছে- সব তথ্য আমরা পেয়েছি।’ বলেন এ অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার।
তিনি বলেন, প্রথমদিনের অবরোধে কী পরিমাণ জ্বালাও-পোড়াও করেছে সেই ফুটেজ আমরা রকির মোবাইলে পেয়েছি। অবরোধ কর্মসূচিতে বাসে আগুন দিতে কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, কারা কারা সহযোগিতা করেছে আমরা সবার নাম পেয়েছি। তারা আরও একটি ভয়ঙ্কর তথ্য দিয়েছে, প্রথমদিন অবরোধে একটি বাসে আগুন দিলে যা পুরস্কার দিতো, দ্বিতীয় অবরোধে সেটি ডাবল করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরস্কার পাঠানো হতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। আমরা রকির কাছ থেকে নির্দেশদাতাদের তথ্য পেয়েছি। রকির নেতৃত্বে আরও কয়েকটি দল সক্রিয় রয়েছে।
পুরস্কারের অর্থদাতা কারা জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা সবার তথ্য পেয়েছি। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে কারও নাম প্রকাশ করছি না। তবে একে একে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে এবং গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হবে।