চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট শুরু হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। আজ শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে দেশজুড়ে একযোগে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ, চলবে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত।
ভোটগ্রহণ, গণনা, ফলপ্রকাশের দায়িত্বে রয়েছেন ২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা। এছাড়া সার্বিক নিরাপত্তার জন্য দেশজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে ৬৩ হাজার পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তাকে। এবারের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রার্থী হয়েছেন ৩৮ জন।
তবে তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী ৩ জন এবং ভোটের মূল লড়াইও হবে এই তিনজনের মধ্যেই। এরা হলেন শ্রীলঙ্কার বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে (৭৫) (রাজনৈতিক দল- ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি), অনুরা কুমারা দেশনায়েক (৫৬) এবং সাজিথ প্রেমাদাসা (৫৭)।
রনিল, অনুরা এবং সাজিথ— এই তিনজন যথাক্রমে ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) এবং সাজিথ সামাগি জানা বালাওয়েগায়ার (এসজিবি) শীর্ষ নেতা।
বিগত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনগুলোতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সংখ্যালঘু তামিল ইস্যু। তবে এবারের নির্বাচনে তামিল ইস্যুটি সেভাবে পাত্তা পাচ্ছে না। সবার মনোযোগের কেন্দ্র রয়েছে চলমান অর্থনৈতিক সংকট।
২০১৯ সালে সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়েছিল শ্রীলঙ্কায়। সে নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করেছিল দেশটির বৃহত্তম এবং ওই সময় সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল শ্রীলঙ্কা পদুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি)। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন যথাক্রমে দলের শীর্ষ নেতা গোতাবায়া রাজাপাকশে এবং তার বড়ভাই মাহিন্দা রাজাপাকশে।
২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় দেশের অর্থনীতিকে নেতৃত্ব দিতে চরম ব্যর্থতা, সরকারি তহবিল থেকে বেহিসেবি অর্থব্যয় এবং সরকারের ভুল নেতৃত্বের ফলে শ্রীলঙ্কার বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে ঠেকে যায়। এসএলপিপি ক্ষমতায় থাকায় স্বাভাবিকভাবেই এর দায় পড়ে গোতাবায়া রাজাপাকশে এবং তার মন্ত্রিসভার ওপর।
রিজার্ভ শেষ হয়ে যাওয়ায় ২০২১ সালের শেষ দিক থেকে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে শ্রীলঙ্কা। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ আমদানির মতো অর্থও ছিলো না দেশটির।
এই অবস্থায় সাধারণ জনগণের চরম বিক্ষোভের মুখে ২০২২ সালের জুলাই মাসে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালান গোতাবায়া। তবে দেশত্যাগের আগে রনিল বিক্রমাসিংহেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
গোতাবায়ার দেশত্যাগের পর পার্লামেন্টের আইনপ্রণেতাদের ভোটে নতুন প্রেসিডেন্ট হন রনিল বিক্রমাসিংহে। তিনি মূলত গোতাবায়া সরকারের সাংবিধানিক মেয়াদের বাকি ২ বছর পূর্ণ করেন। তার গত দুই বছরের নেতৃত্ব ইতোমধ্যে একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি।
অপর দুই প্রার্থীও নিজেদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অর্থনৈতিক ইস্যুটিকে মুখ্য হিসেবে সামনে এনেছেন। অনুরা কুমারা বলেছেন, তিনি নির্বাচনে জিতলে শ্রীলঙ্কার প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করবেন। আর সাজিথ বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় গেলে আইএমএফের সঙ্গে ঋণচুক্তি আরও সহজ করবেন।
সূত্র : এএফপি