সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি॥
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষার শেষ দিনে কেন্দ্র সচিবের সহযোগিতায় নকলের মহোৎসব লক্ষ্য করা গেছে। গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার পিংনা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে এ চিত্র দেখা যায়।
শিক্ষা অফিস সুত্র জানায়, উপজেলার আট ইউনিয়ন ও পৌরসভায় মোট ১৩টি কেন্দ্রে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি পর্যায়ের ছয় হাজার ১৮০ জন পরীক্ষার্থী পিইসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পিংনা ইউনিয়নের পিংনা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে ২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬১৪ জন পরীক্ষার্থী ছিল। পরীক্ষার শুরু থেকেই ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব নাসির উদ্দিনের সহযোগিতায় প্রতিটি কক্ষে নকলের মহোৎসব চলে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কক্ষ পরিদর্শক ও অভিভাবকরা অভিযোগ করেন।
গতকাল (শেষ দিন) গণিত পরীক্ষা চলাকালে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা ভবনের পেছন পার্শ্বে দু’তলা বেয়ে ওঠে বহিরাগত লোকজন যুবক কক্ষের ভেতরে নকল সরবরাহ করছে। আর বিদ্যালয় বাউন্ডারির অভ্যন্তরে ভবনের পেছনে কয়েকজন নকল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাউন্ডারি ঘেষে প্রধান সড়ক দখল করে জটলা বেধে রাখে কয়েকজন। এ সময় দায়িত্বরত একজন পুলিশ সদস্যকে নির্বিকার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কয়েকজন পরীক্ষার্থীকে বারান্দা দিয়ে হেটে টয়লেটের পাশ থেকে নকল নিয়ে কক্ষে ঢুকতেও দেখা গেছে। কেন্দ্র সচিব নাসির উদ্দিন বারান্দা দিয়ে হাটাহাটি করা কালে কক্ষগুলোতে হট্টগোলের মধ্য দিয়ে নকল চলে। এ সময় কয়েকজন সংবাদকর্মী কেন্দ্রে গিয়ে ছবি তুলতে গেলে বহিরাগত এবং দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের ছুটোছুটি শুরু হয়। পরে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইয়েদ এজেড মোরশেদ আলীকে মুঠোফোনে জানানো হলে ঘটনাস্থলে তিনি একজন পুলিশ অফিসার পাঠান।
এ ব্যাপারে কেন্দ্র সচিব ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ‘এখানে সবচেয়ে ভালো পরীক্ষা চলছে, আপনারা যখন এসেছেন তখন হয়তো একটু সমস্যা হয়েছে। আমার ভাই একজন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, বিষয়টি আমাকে না জানিয়ে ইউএনওকে বলাটা আপনাদের ঠিক হয়নি।’
এদিকে সাংবাদিকদের সামনেই ৫-৭ জন পরীক্ষার্থীর দেহ তল্লাশী করে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার সেলিম হোসেন বেশ কিছু নকল জব্দ করেন। এ ব্যাপারে তিনি জানান, ‘কেন্দ্রে একজন মাত্র পুলিশ সদস্য থাকায় বাইরে একটু বিশৃঙ্খলা হতে পারে। আর আমার একার পক্ষে কতটুকুই বা করা সম্ভব।’
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার হালিম উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি শুনেই তাৎক্ষনিক কেন্দ্র সচিবকে মোবাইলে সতর্ক করা হয়।’ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইয়েদ এজেড মোরশেদ আলী জানান, ‘বিষয়টি জানার পর কেন্দ্রের পরিবেশ রক্ষায় শিক্ষা অফিসার ও পুলিশ পরিদর্শককে বলা হয়েছে।’