পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। এছাড়া যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে ১৮৫ জনকে। আর ১৯৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদের সাজা দেওয়া হয়েছে। খালাস দেওয়া হয়েছে ৪৯ জনকে। আজ সোমবার বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এই রায় ঘোষণা করে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন মারা যান।
পিলখানা হত্যা মামলার রায়ে পর্যবেক্ষণ পড়া শেষে সাজার আদেশ ঘোষণা করে হাইকোর্ট। আজ সোমবার বেলা আড়াইটা থেকে রায়ের আদেশের অংশ পড়া শুরু করে। বিজিবি (সাবেক বিডিআর) সদর দফতর পিলখানায় সেনা কর্মকর্তা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৫২ আসামির ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আসামিদের আপিলের মূল রায়ের অংশ ঘোষণা করা হয়। এর আগে সোমবার সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিশেষ হাইকোর্ট বেঞ্চে রায় পড়া শুরু হয়। আজ রায় পড়েছেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার।
তার পড়া শেষে কিছু পর্যবেক্ষণ দেন বিচারপতি মো. শওকত হোসেন। এরপর মূল রায় ঘোষণা করতে গেলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দুপুরের বিরতির পর রায় ঘোষণার আবেদন করেন। পরে এ সময় নির্ধারণ করেন আদালত।
২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত পিলখানা হত্যা মামলার রায়ে বিডিআরের তৎকালীন উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) তৌহিদুল আলমসহ ১৫২ জওয়ানকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। ওই রায় ছিল ফৌজদারি মামলার বিচারের রায়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২৫৬ জনকে। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান ২৭৭ জন। ১৫২ জনকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের ওই রায় নিশ্চিতকরণে মামলাটি ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিরা বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। পাশাপাশি নিম্ন আদালতে খালাস পাওয়া ৬৯ জওয়ানের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এদিকে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আজ আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত: ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানায় জওয়ানরা অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে উচ্চ পদস্থ সেনা কর্মকর্তাদেরকে গুলি করে হত্যা করে। হত্যার পর সেনা কর্মকর্তাদের অনেকের লাশ ম্যানহোলে ফেলে দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে লাশ উদ্ধারের দৃশ্য দেখে সেনা কর্মকর্তাদের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। যাদের মধ্যে কেউ হারিয়েছেন পিতা, কেউ স্বামী বা সন্তান। স্বজনদের একটাই দাবি ছিল যেন নিষ্ঠুর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেওয়া হয়। এই হত্যার ঘটনায় ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করা হয়। পরবর্তীকালে মামলা দুটি স্থানান্তর হয় নিউমার্কেট থানায়। হত্যা মামলার বিচার নিম্ন আদালতে শেষ হলেও বিস্ফোরক আইনের মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে।