• শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৭ অপরাহ্ন

ইসরাইলের চাপে লেবানন ছাড়বে না শান্তিরক্ষীরা

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৪

ইসরাইলের পক্ষ থেকে যত চাপই আসুক, লেবাননে নিযুক্ত শান্তিরক্ষী বাহিনী তাদের অবস্থান ছাড়বে না বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। লেবাননে জাতিসংঘ অর্ন্তর্বর্তী বাহিনী বা ইউনিফিলের মুখপাত্র আন্দ্রেয়া টেনেন্টি বলেছেন, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী শান্তিরক্ষীদের ‘ব্ল্নুু লাইন’ বরাবর অবস্থান থেকে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত সরে যেতে বলেছে। ব্লু লাইন হলো লেবানন এবং অধিকৃত অঞ্চলের মধ্যে সীমানা রেখার জন্য ব্যবহৃত শব্দ।

ইউনিফিলের মুখপাত্র টেনেন্টি বলেন, ইসরাইলের হামলা দক্ষিণ লেবাননে শান্তিরক্ষীদের ক্যাম্পের অনেক ক্ষতি করেছে। সেখানে কাজ করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে, কারণ ঘাঁটির ভেতরেও অনেক ক্ষতি হয়েছে। শুধু তাই নয় শান্তিরক্ষীরাদের ঘাঁটিতে তিন দফা ইসরাইলি হামলায় পাঁচ শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন। টেনেন্টি সতর্ক করে বলেন, লেবাননে ইসরাইলের আগ্রাসন খুব শিগগিরই একটি আঞ্চলিক সংঘর্ষে পরিণত হতে পারে, যার প্রভাব হবে বিপর্যয়কর। জাতিসংঘের কয়েকটি সূত্র বলেছে, ইসরাইলের হামলার কারণে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনের বিষয়টিতে শান্তিরক্ষীদের নজর রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে তারা আশঙ্কা করছে।

এর আগে, জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেসকে উদ্দেশ্য করে রোববার এক বিবৃতিতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী- আইডিএফ বারবার শান্তিরক্ষীদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বললেও তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এই বাহিনী হিজবুলস্নাহর জন্য মানবঢাল হিসেবে কাজ করছে বলে নেতানিয়াহু অভিযোগ করেন। তবে হিজবুলস্নাহ এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এদিকে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী ও হিজবুল্লাহর সংঘর্ষের ফলে দক্ষিণ লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর একাধিক ঘাঁটি হামলার শিকার হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নিরাপত্তা পরিষদ। শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য ও সীমানার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সোমবার (১৪ অক্টোবর) একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে ১৫ সদস্যের এই পরিষদ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য ও তাদের সীমানা কোনও হামলার শিকার হওয়া উচিত নয়।’ নিরাপত্তা পরিষদ তাদের সনদের ১৭০১ নং অনুচ্ছেদ পূর্ণরূপে প্রয়োগের ওপরও জোর প্রদান করেছে। ইসরাইল ও লেবানন সীমান্তে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ২০০৬ সালে ধারাটি গ্রহণ করা হয়েছিল। এই লক্ষ্য অর্জনে আরও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে। তবে কী হতে পারে সেই পদক্ষেপ, সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট কিছু বলা হয়নি।

পশ্চিম তীর, লেবাননে ‘আগ্রাসন’ সম্প্রসারণ করছে ইসরাইল : উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্র কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি মঙ্গলবার বলেছেন, ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে পশ্চিম তীর এবং লেবাননে পূর্ব পরিকল্পিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ‘আগ্রাসন’ সম্প্রসারণ করার পথ বেছে নিয়েছে। তিনি বলেন, ইসরাইল এটি করেছে ‘কারণ তারা দেখেছে যে এর সুযোগ পাওয়া যায়।’ মিশর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কাতার গাজার সংঘাতে যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করতে চাইছে। মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক সময়ে যা ঘটছে তাকে ‘সম্মিলিত গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছেন কাতারের আমির। একই সঙ্গে ইসরাইলের ‘দায়মুক্তি’ সম্পর্কেও সতর্ক করেছেন তিনি।

কাতারের নেতা বলেন, এটা একেবারে স্পষ্ট যে এই অঞ্চলে যা ঘটছে তা সম্মিলিত গণহত্যা। গাজা উপত্যকাকে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী এলাকায় পরিণত করার পাশাপাশি বাস্তুচ্যুতির প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তির চাবিকাঠি হলো দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান। যেখানে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী ধরে ১৯৬৭ সালের সীমান্তের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন কার্যকর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ সময় লেবাননে ইসরাইলি আগ্রাসন নিয়েও কথা বলেন কাতারের আমির। তিনি বলেন, আমরা লেবাননের বিরুদ্ধে ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধে যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টার আহ্বান জানাই।

উত্তর লেবাননে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত ২১ : লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধে তাদের লক্ষ্যস্থল আরও বিস্তৃত করল ইসরাইল, সোমবার তারা প্রতিবেশী দেশটির উত্তরাঞ্চলে খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর আইতোতে প্রথমবারের মতো হামলা চালিয়ে অন্তত ২১ জনকে হত্যা করেছে। ইসরাইলি যুদ্ধবিমানগুলো লেবাননের জাঘার্তা অঞ্চলের শহরটির আবাসিক ভবনগুলোতে আঘাত হানে। এরমধ্যে একটি বাড়ি বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর জন্য ভাড়া নেওয়া হয়েছিল বলে আইতোর মেয়র জোসেফ ট্রাড রয়টার্সকে জানান। রেডক্রস জানায়, ২১ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি এ হামলায় আরও আটজন আহত হয়েছেন। লেবাননের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী, হিজবুল্লাহর সঙ্গে এক বছর ধরে শত্রুতা চললেও এই প্রথম তারা লেবাননের ওই এলাকায় হামলা চালালো।

গাজায় নিহত আরো ২৯ ফিলিস্তিনি : অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় মঙ্গলবার সকালে কমপক্ষে আরও ২৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। পুরো গাজাজুড়েই আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরাইল। উত্তর গাজায় ইসরাইলি বাহিনী ব্যাপক হামলার কারণে প্রায় ৪ লাখ ফিলিস্তিনি আটকা পড়েছে।

এদিকে দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হওয়ার পর সংস্থাটির প্রধান জিন পিয়েরে ল্যাক্রোইক্স বলেছেন, দক্ষিণ লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা আগের মতোই অবস্থান করবেন। লেবাননের উত্তরাঞ্চলে আইতো গ্রামে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ৮ জন। লেবাননে বিমান হামলার পাশাপাশি স্থলপথে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। তার মধ্যেই এবার দক্ষিণ লেবাননের ২৫টি শহর খালি করার নির্দেশ দিয়েছে দখলদার দেশটি।

ইসরাইলি হামলায় গাজাবাসীর জীবন্ত দগ্ধ ছবি ‘ভয়ঙ্কর’ : অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বিমান হামলার পর বাস্তুচ্যুত গাজা ভূখণ্ডের ফিলিস্তিনিদের জীবন্ত দগ্ধ হওয়ার ছবিকে ‘ভয়ঙ্কর’ বলে উল্লেখ করেছে হোয়াইট হাউস। এ বিষয়ে ইসরাইলের কাছে নিজেদের উদ্বেগও পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছে মার্কিন সরকার। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলার পর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলার মতো ভয়াবহ ভিডিও এবং ছবিগুলো ‘ভয়ঙ্কর’ এবং ‘গভীর বিরক্তিকর’ বলে সোমবার হোয়াইট হাউস জানিয়েছে। ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে আনাদোলুকে বলেছেন, হোয়াইট হাউস এসব গ্রাফিক ইমেজ দেখার পর ‘ইসরাইল সরকারের কাছে আমাদের উদ্বেগগুলো পরিষ্কার করেছে’। ওই মুখপাত্র বলেছেন, ‘বেসামরিক হতাহতের ঘটনা এড়াতে ইসরাইলের আরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে এবং এখানে যা ঘটেছে তা ভয়ঙ্কর, এমনকি হামাস বেসামরিকদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টায় হাসপাতালের কাছে কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ থাকলেও গত রবিবার রাতে ইসরাইলি যুদ্ধবিমানগুলো মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ শহরের আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের আঙিনায় হামলা চালায়। এতে সেখানে চারজন নিহত এবং আরও ৪০ জন আহত হন।’

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা ঘুমিয়ে থাকার সময় এই হামলার ঘটনা ঘটে এবং এতে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠা কয়েক ডজন তাঁবু পুড়ে যায়। হামলার পর মেডিকেল টিম নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েকজন আহত ব্যক্তিকে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়, যাদের কাপড় হামলা ও বিস্ফোরণের জেরে পুড়ে গিয়েছিল। ভয়াবহ এই হামলায় হতাহতরা গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়, এমনকি কিছু লাশ এমনভাবে পুড়ে যায় যেগুলোকে শনাক্ত করার মতো ছিল না। প্রত্যক্ষদর্শীরা আনাদোলুকে জানিয়েছেন, আহতদের অধিকাংশই গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়েছেন। তাঁবুতে ব্যবহৃত দাহ্য নাইলন ও কাপড়ের সামগ্রীর কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলেও জানান তারা। সূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি, আনাদুলু।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ