এ অডিওটি তৈরি হয়েছে প্রাকৃতিক আওয়াজ যেমন কাঠের কট কট বা নীচে পড়তে থাকা পাথরের শব্দ মিলিয়ে।
নতুন করে তৈরি হল ৪১ হাজার বছর আগের ভূচৌম্বকীয় শব্দ
প্রায় ৪১ হাজার বছর আগে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রে ঘটেছিল এক ঝটিকা পরিবর্তন। ‘লাসচ্যাম্প ইভেন্ট’ নামে পরিচিত ওই ঘটনার সময় পৃথিবীজুড়ে যে অদ্ভুত শব্দ হয়েছিল, সেটিই নতুন করে তৈরির দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
লাসচ্যাম্প ইভেন্টের সময় পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র একেবারে দূর্বল হয়ে পড়েছিল, এখনকার প্রায় ২০ ভাগের এক ভাগে নেমে গিয়েছিল এর ক্ষমতা।
আর এ দূর্বল অবস্থার ফলে অনেক বেশি পরিমান মহাজাগতিক রশ্মি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়েছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
ওই আদিম চৌম্বকীয় অবস্থার শব্দ নতুন করে তৈরি করেছেন ‘টেকনিকাল ইউনিভার্সিটি অফ ডেনমার্ক’ এবং ‘জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেস’-এর বিজ্ঞানীরা, যেখানে তারা ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইএসএ’র ‘সোয়ার্ম’ মিশনের তথ্য ব্যবহার করেছেন।
লাসচ্যাম্প ইভেন্টের সময় পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের রেখাগুলো কীভাবে অবস্থান বদলেছে, সে সংশ্লিষ্ট তথ্যকে শব্দে রূপান্তর করে গবেষণা দলটি এর একটি ‘সাউন্ডেড ভিজ্যুয়ালাইজেশন’ বা দৃশ্যমান শব্দ তৈরি করেছে।
এ অডিওটি তৈরি হয়েছে প্রাকৃতিক আওয়াজ যেমন কাঠের কট কট বা নীচে পড়তে থাকা পাথরের শব্দ মিলিয়ে। পরবর্তীতে এটি বিকৃত হয়ে এমন অদ্ভুত শব্দ তৈরি হয়েছে, যা প্রায় এলিয়েন বা ভিনগ্রহের মতো শোনায়।
এ প্রক্রিয়াটির মিল রয়েছে সংগীত রচনার সঙ্গে, যেখানে ডেটা এক ধরনের মিউজিকাল স্কোর বা সুরের সংকেত হিসেবে কাজ করে।
নোরিজ বলছে, গবেষণা প্রকল্পটি পৃথিবীর চৌম্বকীয় ইতিহাসকে নতুন জীবন দিতে পারে, তাও এক অভূতপূর্ব উপায়ে।
পৃথিবীর বিভিন্ন স্তর থেকে চৌম্বকীয় সংকেত পরিমাপ করে থাকে সোয়ার্ম স্যাটেলাইট, এই স্তরগুলোর মধ্যে রয়েছে পৃথিবীর কোর, ম্যান্টেল, ক্রাস্ট এবং বায়ুমণ্ডল।
লাসচ্যাম্প ইভেন্টের মতো ঘটনার পাশাপাশি পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্র কীভাবে তৈরি হয়েছে, বিজ্ঞানীদেরকে সে সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বুঝতে সহায়তা করে স্যাটেলাইটগুলো।
সোয়ার্মের ডেটা থেকে তৈরি পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের শব্দের প্রথম সংস্করণটি কোপেনহেগেনের এক পাবলিক স্কয়ারে বাজানো হয়েছে।
আর এটি সম্প্রচারিত হয়েছে ৩২ স্পিকারের একটি সিস্টেম ব্যবহার করে, যেখানে প্রতিটি স্পিকারই গত এক লাখ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন অংশে চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তনগুলোকে তুলে ধরেছে।
বিজ্ঞান ও শিল্পের এই অপূর্ব সংমিশ্রণ মানুষকে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের ইতিহাস নিয়ে নতুন অভিজ্ঞতা পাওয়ার ও ডেটাকে কীভাবে শব্দে রূপান্তর করে আমাদের গ্রহ সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বোঝা যায়, তা দেখানোর নতুন উপায় দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।