পদত্যাগ ও পলায়ন করে শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে যাওয়ার প্রায় তিন মাস হতে চললো। তাকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলমান। তার পদত্যাগ নিয়ে এখন ধোঁয়াশা কাজ করছে। এর কারণ শেখ হাসিনা নিজেই। তিনি কিছুদিন আগে গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের জানিয়েছেন যে, তিনি পদত্যাগ করেননি। যে কোনো সময় চট করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়বেন। এর পর মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে, সাবেক একনায়ক হাসিনা সত্যিই কি পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ করে থাকলে তার পদত্যাগপত্রই বা কার কাছে?
গত ১৯ অক্টোবর সাপ্তাহিক রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’ ও দৈনিক মানব জমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী তার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে লেখেন, প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে হাসিনার পদত্যাগপত্র নেই বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর ৫ আগস্ট রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট তিন বাহিনীর প্রধানদের সামনে রেখে বলেছিলেন- ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি’। রাষ্ট্রপ্রধানের এই দ্বিমুখী বক্তব্যে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজালের। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।
বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেছেন, ৫ তারিখের পর থেকে স্বৈরাচারের দোসরদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। শেখ হাসিনা বারবার ফোন রেকর্ড ছেড়ে দিচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্বৈরাচারের দোসররা মিছিল করছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট অতীতে যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ করেছেন। সে ফ্যাসিবাদ কায়েমে জড়িত ছিলেন। নানাভাবে প্রেসিডেন্ট পরিস্থিতি জটিল করার চেষ্টা করছেন। তারই অংশ হিসেবে তিনি দুরকম কথা বলছেন।
ইসলামি ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল মো. জাহিদুল ইসলাম প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করে বলেন, একজন রাষ্ট্রপতি হয়ে দুরকম কথা বলতে পারেন না। আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি।গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা মো. রাশেদ খান বলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং রাষ্ট্রপতি নিজে গ্রহণ করেছেন এটা নিজেই বলেছেন।তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট প্রেসিডেন্ট আবারও একটি ‘কু’ করার চক্রান্ত করছে। জনগণ এখনও সচেতন এবং রাস্তায় আছে। কোনো অবৈধ চেষ্টা করলে জনগণ তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করবে।
রাশেদ আরও বলেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট শেখ হাসিনার দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত এবং এখনও তার হয়েই কাজ করছে। আমি সরকারকে অনুরোধ করব তাকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য। কোনো আইন মেনে বিপ্লব হয়নি। তাই কোনো আইনের দোহাই না দিয়ে ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টার পাশাপাশি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়া দরকার। বর্তমান প্রেসিডেন্টকে না সরালে তিনি শেখ হাসিনার হয়ে কাজ করবেন।