নির্বাচনের সময়সীমা বলতে গড়িমসি করছে অন্তর্বর্তী সরকার, যা জনগণ সন্দেহের চোখে দেখছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন,’আপনারা সংস্কার করুন। কিন্তু নির্বাচনের তারিখ বলতে আপনাদের এত সংশয় হচ্ছে কেন? গণতন্ত্র হচ্ছে যা কিছু হবে জনগণের কাছে সেটা স্পষ্ট করে বলতে হবে। মানুষ তো এসব বিষয়ে সন্দেহ করে। আপনারা সংস্কারের জন্য কমিশনসহ সব করলেন। এটা কত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিবে, কত দিনের মধ্যে একটা অবাধ সুষ্ঠ নির্বাচন হবে? নির্বাচনে জনগণ সিদ্ধান্ত নিবে কোন দলকে ভোট দিবে, তাদেরকে নির্বাচন করবে, কে সরকার গঠন করবে। স্পষ্টতা ও পথরেখা এই দু’টি হচ্ছে গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত। আপনারা ডেট লাইন বলতে, সময়সীমা বলতে গড়িমসি করছেন। এটা তো মানুষ সন্দেহের চোখে দেখছে।
বুধবার ঢাকার ডেমরায় শহীদ পরিবারের সাথে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর
প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন সম্মানিত মানুষ। বাংলাদেশের জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সম্মান নিয়ে এসেছেন। কিন্তু তাকে দেখতে হবে মানুষ কোনটাতে বাঁচে, মানুষ কোনটাতে স্বস্তি লাভ করে। নিম্মআয়ের মানুষ যাতে ঠিকমতো খেতে পারে, সেটার জন্য সবার আগে বাজার নিয়ন্ত্রণ করুন। অনেক জিনিসের শুল্ক কমিয়েছেন, কিন্তু বাজারে তার কোনো ইফেক্ট নেই। চিনি, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ এগুলোর কিন্তু দাম কমেনি। এগুলোর জন্য দায়ী সিন্ডিকেট। এই আওয়ামী সিন্ডিকেট বাজদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসে বাজার নিয়ন্ত্রণ করুন। তা না হলে গণতন্ত্রের যে চেতনা, আন্দোলনের যে চেতনা, যারা জীবন দিয়েছে তাদের রক্তের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘শেখ হাসিনা তার ক্ষমতাকে নিরাপদ রাখতে এমন কোনো পদ্ধতি নেই যে তিনি অবলম্বন করেননি। বাংলাদেশের সন্ত্রাসী চোর বদমাইশ, ডাকাত এদেরকে তিনি বিচারের আওতায় আনেননি। মোশেখ হাসিনার অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অনাচারের বিরুদ্ধে যারা কথা বলেছেন তাদেরকে ধরে নিয়ে গিয়ে তিনি কারাগারে নিয়েছেন। যে সমস্ত ছেলে-মেয়েরা কোনো রাজনীতিই করেন না, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বাধীন মতামত প্রকাশ করেছেন ব্লগার বলে তাদেরকে তাদের ঠিকানা হয়েছে কারাগারে। এইভাবে তিনি রাজত্ব করতে চেয়েছেন তার গদিকে রক্ষা করার জন্য। তিনি যখন দেখেছেন এভাবেও তার গদি নিশ্চিত হচ্ছে না, তখন তিনি ধরে ধরে হত্যা করেছেন, গুম করেছেন, ক্রসফায়ারে দিয়েছেন। যার চরম প্রকাশ পেয়েছে গত জুলাই মাসে অর্থাৎ জুলাই-আগস্ট মাসেও তিনি গণহত্যা করেছেন।
রিজভী বলেন, ‘জল্লাদের মনোবৃত্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রিত্ব করেছেন শেখ হাসিনা। যে প্রধানমন্ত্রীত্ব করার পেছনে জনগণের কোনো সমর্থন ছিল না। জনগণের সাথে ভোট নিয়ে প্রহসন করেছেন, ভোটারদেরকে তিনি ভোটকেন্দ্রে আসতে দেননি। পুলিশ ছাত্রলীগ, যুবলীগকে দিয়ে গ্রামে গ্রামে মাইকিং করে তিনি ভোট কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করেছেন। উনি জানতেন একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি ভোট পাবেন না।
তিনি বলেন, ‘এক অদ্ভুত পার্লামেন্ট ছিল। একদিকে আওয়ামী লীগ সরকারি দল, অন্যদিকে তাদেরই অনুগত অন্যদেরকে বিরোধীদল বানাত। কোথায় নির্বাচন, কোথায় জনগণের সমর্থন কোথায় জনগণের ইচ্ছা! যে জনগণ হচ্ছে দেশের মালিক, যে জনগণ ঠিক করবে নির্ধারণ করবে, কে হবে তাদের শাসক।
আওয়ামী ফেরাউনদের আর বাংলাদেশে স্থান হবে না মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব আরো বলেন,’ নমরুদের রাজত্ব আর বাংলাদেশে হবে না।আওয়ামী ফেরাউনদের আর বাংলাদেশে স্থান হবে না।তাদের ঐ হরি লুটের রাজত্ব আবার কায়েম করার স্বপ্ন আর কখনো পূরণ হবে না।
তিনি আরো বলেন, ‘এক প্রবল ভূমিকম্পের মতো এক আলোড়ন তৈরি করে ৫ আগস্ট জুলাই বিপ্লবের সমাপ্তি ঘটেছে। এটা এক অদ্ভুত আন্দোলন। ছাত্ররা প্রতিটি আন্দোলনে ভ্যানগার্ড থাকে আন্দোলনের সামনের ভাগে থাকে। এবারের আন্দোলনে প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র, হাইস্কুলের ছাত্র, মাদরাসার ছাত্র, ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা অকাতরে তারা জীবন দিয়েছে। কি অদ্ভুত সাহসের ওপর ভর করে তারা নিজের আত্মদান দিয়েছে, এই অনন্য শহীদি আত্মদান পৃথিবীতে খুব বিরল।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন আমরা বিএনপি পরিবারের উপদেষ্টা প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, আহ্বায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন,সদস্য সচিব মিথুন, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভির আহমেদ রবিন প্রমুখ।