বাংলাদেশ গণ-অধিকার পরিষদের সভাপতি মো. নুরুল হক নুরকে (ভিপি নুর) গলাচিপা-দশমিনা উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করার কথা বলা হয়। এ জন্য কেন্দ্রীয় বিএনপির গত ২২ অক্টোবর দেওয়া ‘চিঠি বিতর্কের’ পর এবার ভিপি নুরের বক্তব্য নিয়ে নতুন সমালোচনায় তৃণমূল বিএনপি।
ক্ষুব্ধ তৃণমূল বিএনপির উত্তপ্ত রাজনীতিতে যেন নতুন করে ঘি ঢেলে দিলেন নুর। বিএনপিকে নিয়ে ভিপি নুরের মন্তব্যে চরম ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। এতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গলাচিপা-দশমিনা উপজেলার রাজনীতি।
গত ৩১ অক্টোবর দশমিনা উপজেলা সদরের ভিআইপি ডাকবাংলোয় স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবের সময় ভিপি নুর তার বক্তব্যর একপর্যায়ে বলেন, আন্দোলন কেন্দ্র করে বিএনপির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রয়েছে, কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে— আমরা সরকার পতনের পর কিছু নেতাকর্মীর আচরণ এবং কর্মকাণ্ড দেখেছি। আওয়ামী লীগের আমলে যেভাবে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি-দখলবাজি হয়েছে, সরকার পতনের পর বিএনপি সেভাবে চাঁদাবাজি-দখলবাজি ও প্রতিপক্ষের কর্মসূচিতে বাধাদান করেছে।
ভিপি নুরের এমন বক্তব্যের জেরে চটেছেন উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নুরের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন। এ নিয়ে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে তৃণমূলের রাজনীতি।
নুরের বক্তব্যর প্রতিবাদ জানিয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাওলাদার মো. ইফতিয়াস উদ্দিন জয় যুগান্তরকে বলেন, নুর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার তৈরি। জয় বলেন, শেখ হাসিনার আমলে যখন বাংলাদেশে কোনো বৈধ ভোট হয়নি, বিনাভোটে সরকার গঠন করে ও বিদেশিদের চাপের মুখে ছিল, ঠিক তখনই নুরকে সমঝোতার মাধ্যমে ডাকসুর ভিপি তৈরি করা হয়।
তিনি বলেন, নুর আর শেখ হাসিনার বিষয়টি এমন চুক্তিবদ্ধ ছিল যে, তাকে মারা হবে কিন্তু ব্যথা পাবে না, কাটবে রক্ত বের হবে না, হামলা হবে পুলিশ ধরবে না এবং পুলিশ ধরবে কিন্তু জেল খাটতে হবে না। বিনিময়ে ওই সময়ে তাকে দিয়ে সরকারের সমালোচনা করিয়ে মিডিয়ার মাধ্যমে বোঝানো হবে দেশে বাকস্বাধীনতা আছে। মূলত বিএনপি ও দেশের মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে নুরের মতো অযোগ্য লোক দিয়ে লোকদেখানো সমালোচনায় বাকস্বাধীনতার নাটক দেখানো হতো। অথচ নুর জেল না খেটে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরলেও শেখ হাসিনার সময় বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়। নুর আওয়ামী লীগেরই তৈরি বলে মন্তব্য করেন জয়। তিনি বিএনপিকে নিয়ে নুরের বক্তব্য প্রত্যাহার ও তাকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান।
ভিপি নুরের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে ঢাবি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন বলেন, বিএনপিকে নিয়ে ভিপি নুরের বক্তব্য মিথ্যা। ভিপি নুরের বক্তব্য মিডিয়া স্টান্ডবাজি ছাড়া কিছুই নয়। ভিপি নুর জোট হিসাব করলে বিএনপি নিয়ে এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন না। তিনি এ ধরনের মন্তব্য করলে জোটের বিষয়টি ভেবে দেখা উচিত।
প্রসঙ্গত, হাসান মামুন গলাচিপা-দশমিনায় বিএনপির রাজনীতির হাত ধরে আছেন বহুদিন ধরে।গত নির্বাচনে তারই মনোনয়ন পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গোলাম মওলা রনি বিএনপিতে যোগ দেওয়ায় তাকে ধানের শীষের টিকিট দেওয়া হয়। বঞ্চিত হন হাসান মামুন। এবার ভিপি নুরকে নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে একই উদ্বেগ কাজ করছে।