রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা করলে ‘উপযুক্ত ও দৃশ্যমান’ জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে মস্কো।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রুশ ভূখণ্ডে এ ধরনের হামলার অর্থ হবে এ যুদ্ধে ‘রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সরাসরি অংশগ্রহণ’।
ইউক্রেনকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়ে ওয়াশিংটনের নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এল।
জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগে এই সিদ্ধান্ত নিলেন বাইডেন।
তবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়েছে কি না কিংবা এ সিদ্ধান্তে ট্রাম্প সমর্থন দেবেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ট্রাম্প এর আগে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সমাপ্তি টানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
ইউক্রেন ইতোমধ্যেই মার্কিন এটিএসিএমএস (আর্মি ট্যাকটিকাল মিসাইল সিস্টেম) ক্ষেপণাস্ত্র পেয়েছে। এ মিসাইল প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব পাড়ি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এছাড়া ফ্রান্স ও ব্রিটেনের একই পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র স্টর্ম শ্যাডোও পেয়েছে কিয়েভ।
তবে পশ্চিমা মিত্ররা এতদিন ইউক্রেনকে রাশিয়ার লক্ষ্যবস্তুতে এসব ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোর অনুমতি দেয়নি। বাইডেন এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় সোমবার হাজারতম দিনে পা দেওয়া এ যুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ মোড় নেবে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সর্বাত্মক আক্রমণ চালায় রাশিয়া। সম্প্রতি ইউক্রেনের অবকাঠামোতে হামলা জোরদার করেছে মস্কো।
মার্কিন সিদ্ধান্তের পর কুরস্ক অঞ্চলে প্রথম এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারে ইউক্রেন। ছোট এ অঞ্চলের দখল এখন কিয়েভের হাতে। কুরস্ক অঞ্চলে রুশ বাহিনীকে সহায়তা ১০ হাজার সেনা পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়া।
অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়ার জন্য উত্তর কোরিয়া আরও ১ লাখ সৈন্যের পাশাপাশি অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইঙ্গিত দিয়েছেন, মার্কিন চুক্তি নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না-ও আসতে পারে।
তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ নিয়ে এখনও মন্তব্য করেননি। সেপ্টেম্বরে তিনি বলেছিলেন, ইউক্রেনকে এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার অর্থ হবে যুদ্ধে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর ‘সরাসরি অংশগ্রহণ’।
সোমবার রাশিয়ার মুখপাত্র বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আগুনে ঘি ঢালছে’।
তবে মার্কিন উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন ফিনার বলেছেন, ‘রাশিয়াকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে’, উত্তর কোরীয় বাহিনী যোগ দেওয়া এবং ইউক্রেনজূড়ে বিভিন্ন অবকাঠামোতে বিমান হামলার ‘জবাব দেব আমরা’।
গত সপ্তাহের শেষে ইউক্রেনে বিদ্যুৎ গ্রিডে তীব্র আক্রমণ চালায় রাশিয়া। এতে ব্যাপক বিদ্যুৎবিভ্রাট দেখা দেয়। এছাড়া ওডেসায় রাশিয়ার হামলায় ১০ জন নিহত ও প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন।
নির্বাচনে বিজয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও বাইডেনের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। জানুয়ারিতে তিনি হোয়াইট হাউসে ফিরবেন।
ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি বাইরের দেশের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ বন্ধ করবেন এবং জনগণের করের টাকা মার্কিনীদের জীবনমানের উন্নয়নে ব্যয় করবেন।