চিতলমারী (বাগেরহাট) প্রতিনিধি ॥
এক সময়ের খরস্রোতা চিত্রা, বলেশ্বর নদী এখন অস্তিত্ব সংকটে। এ অবস্থায় এ উপজেলার অর্ধশত শাখাখাল এখন নাব্যতা হারিয়ে মরতে বসেছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর দখলবাজ লোকজন রাতারাতি দখল করে নিচ্ছে খাল ও নদীতে জেগে ওঠা চরের জমি। এ পরিস্থিতিতে চাষাবাদ ও নৌযোগাযোগ এখন চরম হুমকির মুখে পড়েছে। বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার অধিকাংশ নদী-খাল এখন এভাবে দখলদারদের কবলে চলে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় চাষীরা ও এলাকার সচেতন মহল।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার অধিকাংশ খাল ও নদীর অস্তিত্ব এখন বিলীন হতে বসেছে। ফলে কৃষি প্রধান এ অঞ্চলের নৌযোগাযোগ ও চাষাবাদ এখন চরম হুমকির মুখে। এ অবস্থায় হাজার হাজার চাষীদের পোহাতে হচ্ছে নানা দুর্ভোগ। ফলে ভুক্তভোগী এলাকাবাসি এসব নদী ও খাল পুণঃখননসহ দখল মুক্ত করার দাবী জানিয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, গত ৩০ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলের নদী ও খাল খনন না করার ফলে এর অধিকাংশ ভরাট হয়ে গেছে। ফলে চিতলমারী সদর বাজারের হকক্যানেলসহ বেশকিছু স্থানে খালের পাশে বসবাসকারী কয়েক প্রভাবশালী যে যার মত অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে দখল করে নিচ্ছে সরকারী খাল। এছাড়া ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করে ফেলা হচ্ছে খালটি। ফলে চিতলমারী সদর বাজারের পাশের একমাত্র এ খালটিতে এখন হাটু পানিও নেই। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সদর বাজারসহ আশ পাশ এলাকায় বসবাসকারিদের। উপজেলার বড়বাড়িয়া, কলাতলা, হিজলা, শিবপুর, চিতলমারী সদর, চরবানিয়ারী ও সন্তোষপুরসহ ৭টি ইউনিয়নে প্রধান ৩টি নদী ও ৫০টি খাল এবং শতাধিক শাখা খাল রয়েছে। যার অধিকাংশ এখন নাব্যতা সংকটে। এক সময়ের মধুমতি, চিত্রা ও বলেশ্বর নদীর অস্তিত্ব এখন বিলীন প্রায়। এসব নদী এখন কালের সাক্ষী মাত্র। এসব নদী থেকে উঠে আসা হক ক্যানেল, পাটনিবাড়ি, পেতœীমারী, নারাণখালী, বাঁশতলী, খাগড়াবুনিয়া, শরৎখালীসহ প্রায় ৫০টি খাল ও শতাধিক শাখা খালের একই অবস্থা।
এসব নদী ও খালে নাব্যতা সংকট দেখা দেয়ায় মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে-এর অধিকাংশ ভরাট হয়ে গেছে। ফলে ঠিকমত জোয়ার-ভাটার পানি ওঠা-নামা না করার ফলে সেচ মৌসুমে চাষীরা ফসলে ঠিকমত পানি পাচ্ছেন না। ফলে বোরো মৌসুমে চাষাবাদ নিয়ে চিন্তিত এসব চাষীরা। এতে নৌযোযোগ ও কৃষিকাজ এখন হুমকির মুখে। বিষয়টি যেন দেখার কেউ নেই এমন অভিমত প্রকাশ করলেন সাধারণ লোকজন।
চিতলমারী সদর বাজারের পাশ থেকে বয়ে যাওয়া হক ক্যানেলসহ বেশ কিছু স্থানে সীমানা সংলগ্ন খালের পাশে বসবাসকারী প্রভাবশালী লোকজন সরকারি খালটির বেশিরভাগ অংশ দখল করে নিয়েছে। এসব স্থানে যে যার মত অবৈধ স্থাপনা নির্মাণসহ ভরাট করে ফেলছে। ফলে খাল থেকে নৌযোগাযোগ অচল হয়ে পড়েছে। এছাড়া জোয়ার-ভাটার পানি ঠিকমত ওঠা-নামা করতে না পারায় বোরো মৌসুমে চাষীরা ঠিকমত ফসলের পানি দেওয়ার ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন। এ অবস্থায় উপজেলার কুরালতলা, শিবপুর, কালশিরা, বারাশিয়া, আড়য়াবর্ণীসহ প্রায় ৮ থেকে ১০ গ্রামের কয়েক হাজার চাষীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পাশাপাশি চিতলমারী সদর বাজারে আসা-যাওয়ার জন্য কৃষিপণ্যসহ মালামাল আনা-নেয়ার জন্য নৌকায় করে চলাচলে চরম বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। দখলদারদের কারণে খালটি এখন চলাচলে অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় খালটি দখলদার মুক্ত করতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকার সচেতন মহল।
শেরেবাংলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মোহাসীন রেজা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শেখ রস্তম আলী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক চন্দ্র শেখর মিস্ত্রিসহ অনেকে জানান, এভাবে খাল দখল হতে থাকলে আগামি কিছুদিনের মধ্যে এলাকায় নদী ও খালের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না এবং চাষাবাদের পানি মিলবে না। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা উচিৎ বলে জানান তারা। একই সাথে এ সকল খাল পুনঃ খননের জন্যও তারা জোর দাবি জানান।
সদর ইউনিয়নের পন্টু বিশ্বাস, সুখ রঞ্জন বিশ্বাস, দেবাশিষ মন্ডলসহ এলাকার চাষিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, দখলবাজদের কারণে খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন জোয়ার-ভাটার পানি ঠিকমত উঠতে না পারায় চাষাবাদ নিয়ে চরম চিন্তিত তারা। বোরো মৌসুমে সেচ পানি নিয়ে এখনই দিশেহারা চাষিরা।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার জানান, যেহেতু এটা শুকনো মৌসুম এ সময়টায় কেবলমাত্র সেচ পানির ওপর চাষীদের নির্ভর করতে হয় তাই নদী ও খালে পানির সমস্যা হলে সেচ কাজ ব্যাহত হবে। এর জন্য চাষীদের বিকল্প পথ খুঁজতে হবে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস জানান, বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার আলোচনা করা হয়েছে। শীঘ্রই খাল খনন ও দখলমুক্ত করার পরিকল্পনা হতে নেওয়া হয়েছে।