সিলেট প্রতিনিধি॥
সবুজ-শ্যামল প্রকৃতি। তা কেবল চোখ মেলে চেয়ে দেখার। পাহাড়ের ঝর্ণার স্বচ্ছ জলরাশি পাথর ছুঁয়ে বহমান বাংলাদেশে। তাতে সুখ খোঁজেন বিছানাকান্দিতে আসা পর্যটকরা। কেননা, দেশের অভ্যন্তরে বিছানাকান্দির সৌন্দর্য বলতে কিছুই নেই, সবই ‘পাথরখেকো’রা করেছে বিলীন। দেশের অভ্যন্তরে শেষ সৌন্দর্য কেবল জলধারার দক্ষিণ প্রান্তঘেঁষা জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন ৫৩ একর ভূমি। এতোদিন বিদ্যালয়, এলাকার খেলার মাঠ এবং গোচারণভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিলো মাঠটি। যেখানে পর্যটকদের জন্য গেস্ট হাউস গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে জেলা প্রশাসনের। অথচ সেই ভূমিটুকু এবার গ্রাস করে নিচ্ছে পাথরখেকোরা।পাথর উত্তোলনের জন্য মাঠ কেটে তৈরি করা বিশালাকায় গর্তে কর্মরত নারী-পুরুষ ও শিশু শ্রমিকরা।জেলা প্রশাসনের মালিকানার এই ভূমি থেকে অবৈধ পন্থায় পাথর উত্তোলনে জড়িত স্থানীয় প্রশাসনের লোকজন, আ’লীগ-বিএনপির নেতারাসহ সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধি সবাই। এই অবাধ ধ্বংসলীলার কারণে শেষ সৌন্দর্যটুকুও হারাতে বসেছে বিছানাকান্দি। প্রায় সপ্তাহকাল ধরেসেঁখানে এক্সাভেটর দিয়ে গর্ত খুঁড়ে অবাধে চলছে পাথর উত্তোলন।
কেউ যাতে এই নিধনযজ্ঞের ছবি তুলতে না পারে সেজন্য পাহারায় আছেন ভলান্টিয়ার নামধারী মাস্তানরা। ছবি তোলার চেষ্টা করলে ছিনিয়ে নেওয়া হয় মোবাইল-ক্যামেরা। এমনকি প্রাণ সংহারের হুমকি দিতেও পেছপা হয় না এরা। সদা রক্তচক্ষু, সদা মারিমুখি এরা। মোবাইলে সেলফি তোলাও নিষেধ। এভাবে কঠোর সতর্কতার মধ্য দিয়ে বিছানাকান্দি পর্যটনস্পট সংলগ্ন স্কুলমাটটি অবাধে খুঁড়ে চলছে পাথর উত্তোলন।
সরকারি খাস জমিতে পাথর উত্তোলনের জন্য খননযন্ত্র (এক্সাভেটর) লাগিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে খেলার মাঠ জাফলং, ভোলাগঞ্জ ও কানাইঘাটের লোভাছড়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পাথরখেকোদের লালসায় বিলীন হয়েছে অনেক আগেই। এবার বিছানাকান্দিও হারাতে বসেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ‘এভাবেই একে একে নিভিছে দেউটি’ অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিছানাকান্দির।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিছানাকান্দি পিকনিক স্পটের নোম্যান্স ল্যান্ড থেকে প্রায় ৭শ’ গজ দক্ষিণে স্কুলের খেলার মাঠ খুঁড়ে চলছে পাথর উত্তোলন। জেলা প্রশাসনের ১নং খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত মাঠ ও গোচারণভূমি ক্রমশ; পরিণত হচ্ছে পাথর কোয়ারিতে। এক্সাভেটর দিয়ে দিন-রাত চলছে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন। প্রায় সপ্তাহকাল ধরে অবৈধ পন্থায় পাথর উত্তোলন চলতে থাকলেও কোনো অ্যাকশনে যায়নি উপজেলা প্রশাসন। সরকারি খাস জমিতে খেলার মাঠ কেটে সৃষ্ট গর্তে কাজ করছেন শ্রমিকরাখোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই অবৈধ পাথর তোলার সঙ্গে জড়িত আছেন রুস্তুমপুর ইউনিয়ন পরিষদের দুই সদস্য সাহাব উদ্দিন সাবুল ও পাবলু, আওয়ামী লীগ নেতা বুরহান, হেলাল, বিএনপিনেতা সমছু সরকার, আবদুন নুর সরকার, জয়নাল এবং স্থানীয় প্রেসক্লাবের নেতৃত্বদানকারী দুই সাংবাদিক।
স্থানীয়দের অভিযোগ, যেভাবে পাথর উত্তোলন হচ্ছে, তাতে শেষ পর্যন্ত বিদ্যালয়টিও টিকবে কিনা সন্দেহ। সরকারি খাস ভূমি থেকে অবাধে পাথর উত্তোলনের ফলে প্রতি ফুটে ১০ টাকা দাম কমেছে জানান স্থানীয়রা।
পাথর উত্তোলনে জড়িত স্থানীয় রুস্তুমপুর ইউনিয়নের তহসীলদার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দিয়েছেন ভুল তথ্য। বলেছেন, কুলুমছড়ারপাড়ে কোয়ারির গেজেটভুক্ত ১৩ একর ভূমি থেকে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। অথচ ওই ভূমির পাথর উত্তোলন শেষে সেখানে এখন কেবলই বালুচর।সরকারি গোচর শ্রেণীর জায়গায় পাথর তুলতে ব্যবহার করা হচ্ছে পেলোডার ও সেখানে কাজ করছেন শ্রমিকরাগোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিশ্বজিৎ কুমার পাল বলেন, বিছানাকান্দি এলাকায় ৫৩ একর জায়গা গোচারণ ও মাঠ শ্রেণীর জমি। এর মধ্যে ১৩ একর আগেই পাথর কোয়ারির জন্য গেজেটভুক্ত হয়েছিল। পাথর উত্তোলনকৃত ভূমি অধিগ্রহণকৃত এবং মালিকানাধীন সম্পদ বলে জানিয়েছিলেন তহসিলদার। সরেজমিন গিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন বলেন তিনি।
সরকারি ভূমি গ্রাস করে পাথর উত্তোলনের বিষয়ে রুস্তুমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ও সরকারি ভূমি থেকে পাথর উত্তোলনে মানা করেছিলাম, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
এ ব্যাপারে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সরকারি ভূমি কেটে পাথর উত্তোলনের খবর জানা নেই। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবো। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।