সিলেট প্রতিনিধি॥
সিলেটের রাজনীতিতে একটা কথা প্রচলিত রয়েছে। আর তা হলো- ‘সিলেট এক আসন যার, সরকারও তার। অর্থ্যাৎ সিলেট এক আসনে যে দলের প্রার্থী জয়ী হন, তার দলই সরকার গঠন করে। এ কারণে হযরত শাহজালাল (র.)-এর পূণ্যভূমি সিলেটের এই আসনটি খুবই মর্যাদাপূর্ণ।
জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর বিশেষ নজর থাকে ‘সিলেট-১’ আসনের দিকে। আসন্ন সংসদ নির্বাচনের এক বছরের বেশি সময় বাকি থাকলেও এখন থেকেই তোড়জোড় শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ, বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও সাবেক বিরোধী দল বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগ থেকে এই আসনে শোনা যাচ্ছে একাধিক প্রার্থীর নাম। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম জাতীয় পার্টি ও বিএনপি ও সাবেক বিরোধী দল। এদল দুটির একজনের বেশি প্রার্থীর নাম নেই আলোচনায়।
বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ এ আসনে সিনিয়র ও গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয় দলগুলো। বিগত দিনে এই আসন থেকে বিএনপির হয়ে নির্বাচন করেছেন সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মুহিত বর্তমানে সংসদ সদস্য।
আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগ নতুন-পুরাতনসহ বেশ কয়েকজনের নাম আলোচনায়। পুরাতনদের মধ্যে আলোচনায় আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, তার অনুজ চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. একেএম মোমেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।
বিগত দিনে বিভিন্ন সভায় বর্তমান সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কথা বললেও এখন আবার শোনা যাচ্ছে তিনি অংশ নিবেন। পাশাপাশি তার সঙ্গে নির্বাচনের মাঠে আছেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় পরিষদের চেয়ারম্যান ড. এ কে আবদুল মোমেন। এ আসন থেকে অর্থমন্ত্রী মুহিত ও মোমেনের সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিয়ে মনোনয়ন দৌঁড়ে আছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।
মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ প্রকাশ্যে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন। নগরীর আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সামনে প্রকাশ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রত্যাশার কথা বলেছেন। এবারও তিনি প্রধানমন্ত্রীর সিলেট সফরের জনসভায় একই ঘোষণা দিতে পারেন।
এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, ‘জনগণ পুরাতন মানুষ চায় না। এবার নতুন মানুষ চায়। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি কাজ করব।’
রাজনীতির তারকা ব্যক্তিত্ব, সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের উত্তরসূরি হতে সিলেট-১ থেকে বিএনপির মনোনয়ন তালিকায় একমাত্র প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা খন্দকার আবদুল মালিকের ছেলে এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা। বেশ কয়েক বছর ধরে খন্দকার মালিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মুক্তাদির চালিয়ে যাচ্ছেন সমাজসেবামূলক কর্মকান্ড।
প্রথমদিকে এই আসন থেকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের নাম শোনা গিয়েছিল। তবে জোবাইদা রহমানের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে। খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির দাবি করছেন, এখানে বিএনপির একমাত্র প্রার্থী তিনি।
এদিকে, জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী হিসেবে এ আসনে আলোচিত হচ্ছে দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নাম। সর্বশেষ সিলেট সফরে নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠের জনসভায় এরশাদের নাম নিজে এখান থেকে নির্বাচনের কথা জানিয়েছিলেন। তিনি সিলেটকে নিজের দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবে অভিহিত করেন।
সিলেটে জামায়াতে ইসলামের কোনো প্রার্থী নেই। সিলেট সিটি করপোরেশনে তাদের প্রার্থী দিতে গিয়ে জোটে সমঝোতায় তারা এ সিদ্ধান্ত্ নিয়েছে।
বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (দশম) নির্বাচিত হন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। নির্বাচনে তার বিরুদ্বে কোনো প্রার্থী ছিল না। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী সাইফুর রহমানকে পরাজিত করেছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। এরপর সাইফুর রহমান সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর বিএনপি এখনো এই আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়নি। নবম সংসদ নির্বাচনে মুহিত এক লাখ ৭২ হাজার ৮১৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। আর সাইফুর রহমান পেয়েছিলেন এক লাখ ৩৫ হাজার ২১৩ ভোট। এটিই ছিল সাইফুর রহমানের জীবনের শেষ নির্বাচন।