দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগের পর নতুন করে আরো রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ উঠছে। স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার উপর ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) পরিশোধ করার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি তা করেনি। প্রায় সাড়ে ৪৮ কোটি টাকা স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার বিপরীতে প্রযোজ্য ভ্যাট পরিশোধ না করায় প্রাথমিক দাবিনামা ও কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় এনবিআরের বৃহত্ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ-ভ্যাট) বিভাগ। এরপর চলতি সপ্তাহে সোয়া সাত কোটি টাকা ভ্যাট পরিশোধের জন্য চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করা হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি আরো কোন কোন উপায়ে কী ধরনের ফাঁকি দিয়েছে, তাও উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।
এলটিইউ ভ্যাট অফিস সূত্র জানিয়েছে, আগামী তিন মাসের মধ্যে ওই অর্থ পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালে আপিল কিংবা উচ্চ আদালতে রিট করতে পারবে। এর কোনো কিছুই করা না হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ আরো কিছু প্রক্রিয়া শেষে অর্থ আদায়ে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাবও জব্দ করতে পারবে। সূত্র জানায়, স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার বিপরীতে এর আগেও ভ্যাট দেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে। এর আগে দুই দফায় যথাক্রমে ১২ কোটি ৫৬ লাখ, চার কোটি ৮০ লাখ ও ১৯ কোটি টাকা ভ্যাট পরিশোধের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে দাবিনামা জারি করা হয়েছে।
এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার দাবিনামার বিরুদ্ধে গ্রামীণফোন আইনি প্রক্রিয়ায় গিয়েছে। কিন্তু আমাদের দাবি যথার্থ হওয়ায় ওই রায় আমাদের পক্ষেই আসবে বলে আশা করছি। ফলে দাবিনামার পুরো অর্থই তাদের পরিশোধ করতে হবে।
সর্বশেষ ৭ কোটি ২৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা ভ্যাট পরিশোধে চূড়ান্ত দাবিনামায় বলা হয়, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে গ্রামীণফোনের স্থান ও স্থাপনা ভাড়া বাবদ মোট ৪৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এর বিপরীতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য। চূড়ান্ত দাবিনামায় অনতিবিলম্বে ওই ভ্যাটের অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার অনুরোধও জানানো হয় ওই দাবিনামায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আলোচ্য ইস্যুতে গ্রামীণফোনকে শুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হলেও হাজির হয়নি। সর্বশেষ গত ২৯ ডিসেম্বর পুনরায় শুনানিতে আহ্বান করা হলেও কেউ শুনানিতে উপস্থিত হননি। বরং একটি চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। তাতে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরে এর উপর ভ্যাট প্রযোজ্য হবে না বলে উল্লেখ করা হয়। তবে প্রতিষ্ঠানটির কাছে এলটিইউ-ভ্যাট থেকে পাঠানো চিঠিতে বিদ্যমান ভ্যাট আইনের ব্যাখ্যা তুলে এটি ভ্যাটযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়।