জাহিদ হাসান
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এসেছে। সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে দেশের আপামর জনসাধারণ। সেই সঙ্গে তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা। যেগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো-শিক্ষাখাতে বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি, বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, ছাত্র-ছাত্রীকে উপবৃত্তি প্রদান, শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন ইত্যাদি। এতসব সুযোগ-সুবিধার কারণে শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অভিভাবকদেরও আগ্রহ বেড়েছে শতভাগ। এভাবে সন্তানদের নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক স্তর পেরিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করাতে আগ্রহী হয়ে উঠছে অভিভাবকেরা। কারণ হলো অভিভাবকদের ধারণা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ শেষে চাকরি পাবে তাদের সন্তানেরা। যদিও তারা সন্তানের শিক্ষা গ্রহণের মান নিয়ে কখনোই মাথা ঘামান না।
বিগত ১ যুগের বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতিটি শিক্ষাবর্ষের গড় সেশন জট ছিল ৫-৬ বছর। শিক্ষাগ্রহণকালীন সময়ে শিক্ষার্থী বা অভিভাবকরা এ সেশন জটের দিকে না তাকালেও পড়ালেখা শেষ হলে চাকরির জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। আর ঠিক তখন চাকরি সিলেবাসের ভালো প্রস্তুতি না থাকায় হতাশায় পড়ে ডিগ্রিধারীরা। এভাবে অল্প দিনের প্রস্তুতিতে পরীক্ষার হলে তারা সমুদ্রে পড়ার মতো অনুভব করে। পাশাপাশি পারিবারিক চাপও বাড়তে থাকে। এভাবে বেকারত্বের বোঝা টেনে চাকরির প্রস্তুতির মাঝেই এক সময় আবেদনের বয়স শেষ হওয়ার আরেক অশনিসংকেত আসতে থাকে। এসব সমস্যার সঙ্গে দেশের চাকরির বাজারে আরেকটি সমস্যা হলো সার্কুলার হবার পর এক থেকে দেড় বছর পার হয় পরীক্ষা নিতে। তাহলে রাষ্ট্র কর্তৃক এসব শিক্ষার্থীর পদে পদে নষ্ট করা সময়ের ভার কে নেবে? আর দেশের মানুষের গড় আয়ু যখন ৫০ ছাড়াল তখন চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ হলো।
বর্তমানে গড় আয়ু ৭১ হলে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ হওয়া কী জরুরি নয়? তা ছাড়া বর্তমান সময়ে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার সার্টিফিকেটে বয়স লিপিবদ্ধ থাকার ফলে ১৬ বছরের পূর্বে কোনোভাবেই এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া যায় না। এতে করে উচ্চশিক্ষা শেষ করতে করতে শিক্ষার্থীর বয়স এমনিতেই অনেক বেড়ে যায়। বাংলাদেশে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষায় যেভাবে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে তা প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু দেশের উচ্চশিক্ষার সেশন জট এবং অনেক ক্ষেত্রেই এ পড়ালেখা চাকরির বাজারের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায় উক্ত সফলতাগুলো ম্লান হবার পথে।
তাই আগামীর কথা ভেবে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করা হোক। পরবর্তীকালে সেশন জটকে শূন্যের কোটায় নামানো হোক। সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষিত জাতিকে শুধু সরকারি চাকরির প্রতি চেয়ে থাকা অনার্স মাস্টার্সধারী চাতক পাখি না বানিয়ে, মাধ্যমিক পর্যায় থেকেই বিভিন্ন ধরনের কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করা হোক। তাহলেই দেশ পাবে কর্মঠ জাতি।
দেশ থেকে চিরতরে বিদায় নেবে বেকার সমস্যা। সেই সঙ্গে মুক্তি পাবে বয়সের বেড়াজাল থেকে।