• শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০৯ অপরাহ্ন

ব্যাংকিং খাতে হরিলুট চলছেই

আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

ব্যাংক থেকে টাকা বের করে নেওয়ার ঘটনা নতুন নয়। অর্থব্যবস্থাকে দুর্বল করতে বারবার এমন ঘটনা ঘটার পরও টনক নড়ছে না সংশ্লিষ্টদের। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংকিং খাতের মনিটরিং ব্যবস্থা আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কতটা ঋণ দেওয়া যাবে সে বিষয়েও স্পষ্ট করে ব্যাংকগুলোকে জানানো হয়েছে। তারপরও একের পর এক ঘটছে এ ধরণের ঋণ কেলেঙ্কারি। অনেকে এ অবস্থাকে ঋণ কেলেঙ্কারি না বলে ব্যাংক লুট হয়েছে বলেই বলছেন। ভদ্রতার বেশে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা বের করে নেওয়া হচ্ছে।
আর ব্যাংক থেকে অবৈধভাবে টাকা নিয়ে সেই টাকার গরম দেখিয়ে অনেক অপরাধী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আবার অনেকে ব্যাংকের টাকা নিয়ে এখন গা ঢাকা দিয়েছে। ব্যাংকের উদারতা এবং নিয়মকানুন ঠিকঠাক না মেনে ঋণ দেওয়ায় এমন ঘটেছে। প্রকৃত গ্রাহক ও উদ্যোক্তারা ঋণ না পেলেও নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে এখন গ্রাহকের পেছনে ঘুরছে ব্যাংক। তবে এর মাঝেও দু’এক জন শীর্ষ খেলাপি গ্রেফতার হচ্ছে। বেসরকারি খাতের ব্যাংক এনসিসি ব্যাংকের এক খেলাপি গ্রাহককে গত রবিবার রাতে গ্রেফতার করেছে খিলগাঁও থানা পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন প্রভাব খাঁটিয়ে ব্যাংক থেকে বিশেষ করে সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নেন একশ্রেণীর মানুষ। যাদের উদ্দেশ্যই থাকে ঋণ পরিশোধ না করার। আর কী কী উপায় অবলম্বন করলে ঋণ পরিশোধ করা লাগবে না সে উপায়ও বাতলে দেন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংকাররা। এ উপায় বাতলে দেওয়ার পুরস্কার স্বরূপ তারাও ওই ব্যক্তিদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে থাকে। এভাবে ঋণ নিয়ে ব্যক্তি বিশেষ রাতারাতি ধনি হয়ে সমাজে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে ব্যাংক ক্ষতিতে পড়ছে।
জানা গেছে,  ঋণ বিতরণে ব্যাপকভাবে উদারতার পরিচয় দিয়েছে সরকারি জনতা ব্যাংক। এক গ্রাহককে দেওয়া হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ঋণ ও ঋণ সুবিধা। এ ব্যাংকই আরেক গ্রাহকে দিয়েছে প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা ঋণ। একইভাবে অন্যান্য ব্যাংক থেকেও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী, কোন ব্যাংক তার মোট মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ কোন একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিতে পারে। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে জনতা ব্যাংক এ নিয়ম মানেনি। ব্যাংকটির মোট মূলধন ২ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক গ্রাহককে সর্বোচ্চ ৭৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণ দিতে পারে। তবে এক ব্যক্তিকে মাত্র ৬ বছরে পাঁচ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার ঋণ ও ঋণসুবিধা দেওয়া হয়েছে। যা ব্যাংকটির মোট মূলধনের প্রায় দ্বিগুণ।
বস্ত্র ও পোশাক রপ্তানিকারক এনটেক্স গ্রুপ ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। এ গ্রুপের এমডি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) মো. ইউনুস বাদল। তার গ্রুপ এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ২২টি প্রতিষ্ঠানের নামে এসব ঋণ নেওয়া হয়। পরিচালনা পর্ষদের যোগসাজশে এসব ঋণ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে তৎকালীন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাত বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর নথিপত্র এক ব্যক্তির নামে না। এ কারণেই এত ঋণ পেয়েছে।
এদিকে বাছবিচার না করে জামানত ছাড়াই ঢাকা ট্রেডিং হাউজের ও টিআর ট্রাভেলসের মালিক টিপু সুলতানকেও ঋণ দিয়েছে জনতা ব্যাংক। এ ব্যাংক তাকে দিয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ রয়েছে। রূপালী ব্যাংকেরও রয়েছে ১১০ কোটি টাকার ঋণ। এর বাইরে টিপু সুলতানের কাছে ৯০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল)। এছাড়া এ ব্যবসায়ীর কাছে এক্সিম ব্যাংকের প্রায় ১৫০ কোটি, সাউথইস্ট ব্যাংকের প্রায় ৫০ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৩০ কোটি টাকা। এর বাইরে আরো প্রায় পৌনে ১০০ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে।
জনতা ব্যাংক নিয়মবহির্ভূতভাবে আরো ঋণ দিয়েছে, যারা রপ্তানির আড়ালে টাকা পাচার করেছে বলে সূত্র জানায়। ভুয়া রপ্তানি দেখিয়ে নগদ অর্থ আত্মসাৎ করেছে এমন ব্যক্তিকে ঋণ দিতেও পিছপা হয়নি। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, পর্ষদ সদস্যদের ‘ম্যানেজ’ করে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি না হওয়ায় এ প্রবণতা কমছে না বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। সূত্রমতে বড় পদে আসীন হতে যে ‘ব্যয়’ হয় সেটাও বর্তমান পরিস্থিতির জন্য কম দায়ী নয়।
অন্যদিকে গত রবিবার রাতে রাজধানীর গোড়ান থেকে গ্রেফতার হন রাশিদা আকতার। তিনি রেডিয়াস এক্সেসরিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আবদুল হাইয়ের স্ত্রী। ৫২ কোটি ৬২ লাখ টাকা পাওনার বিপরীতে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে এনসিসি ব্যাংক লিমিটেড। রাশিদা আকতার ছাড়াও আরো তিনজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা রয়েছে। অন্যরা হলেন, রেডিয়াস এক্সেসরিজের চেয়ারম্যান মো. আবদুল হাই, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানজিন তামান্না মিশিল ও পরিচালক এবং আবদুল হাইয়ের ভাই আবদুস সালাম।
এ বিষয়ে খিলগাঁও থানার ওসি মশিউর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, রবিবার রাত ১১টার দিকে তাকে (রাসিদা আকতার) গ্রেফতার করা হয়। এখন জেলে আছে। গ্রেফতারী পরোয়ানা থাকা অন্যদের খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ