তথ্য-প্রযুক্তির প্রসারে ইন্টারনেটে দিন দিন বাড়ছে তরুণদের অংশগ্রহণ। বিনোদনের উত্স হিসেবে তরুণরা বেছে নিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। এক্ষেত্রে শহরের তরুণদের পাশাপাশি পিছিয়ে নেই গ্রামের তরুণরাও। দেশের সর্বত্র ইন্টারনেট ব্যবস্থা এবং হাতের নাগালে সুলভ মূল্যে প্রযুক্তির কল্যাণে এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলের তরুণদের কাছেও ফেসবুকের পাশাপাশি ইউটিউবসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমগুলোও বেশ পরিচিত। শুধু বিনোদনই নয়, তরুণদের আয়ের উত্স হিসেবেও ইউটিউব এখন বড় প্লাটফর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইউটিউবারদের মতে, ইউটিউব থেকে আয়ের জন্য শুধু ভিডিও প্রকাশ করলেই হবে না। এক্ষেত্রে সৃজনশীলতার প্রদর্শন ঘটানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইউটিউবে আয় করার জন্য চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তারা। আর সাবস্ক্রাইবার বাড়াতে হলে ভিডিওর কাজটি সৃজনশীল হতে হবে।
সাবস্ক্রাইবারের দিক থেকে দেশে এগিয়ে আছে তরুণ উদ্যেক্তা সালমান মুক্তাদিরের চ্যানেল ‘সালমান দ্য ব্রাউন ফিস’। চ্যানেলটির বর্তমান সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ৯ লাখ ৬৩ হাজার। তার চ্যানেল যখন এক লাখ সাবস্ক্রাইবারের মাইলফলক অতিক্রম করে, তখন তিনি অর্জন করেছিলেন ইউটিউবের ‘সিলভার বাটন’ যা ছিল দেশিয় কোনো ইউটিউব চ্যানেলের জন্য প্রথম স্বীকৃতি। তরুণ এ উদ্যোক্তা ইউটিউবে আয়ের উপায় সম্পর্কে জানান, ‘ইউটিউব অ্যাডসেন্স’ থেকে ইফটিউবে আয় করা যায়। এক্ষেত্রে ভিডিওর উপরে, নিচে কিংবা পাশে বিভিন্ন পণ্যের কিংবা প্রতিষ্ঠানের ছোট ছোট বিজ্ঞাপন শো করা হয়। দ্বিতীয়ত, ‘এফিলিয়েট মার্কেটিং’, যেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্ট রিভিউ করে উপার্জন করা হয়। তৃতীয়ত, ‘স্পন্সরশীপ’, এক্ষেত্রে টেলিভিশনের মতো ভিডিও’র শুরু, শেষে কিংবা মাঝখানে কোন প্রতিষ্ঠান বা পণ্যের বিজ্ঞাপন উপস্থাপন করে উপার্জন করা যায়।
অধিকাংশ ইউটিউবাররা স্পন্সরশিপের মাধ্যমে ইউটিউবে আয় করে থাকেন। এছাড়া নিজের পণ্য বিক্রি করে, ইউটিউব এর পার্টনার হয়ে, ভিডিওর ডেসক্রিপশনে লিঙ্ক বিক্রিসহ নানাভাবে ইফটিউব থেকে আয় করা সম্ভব।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপে দেখা গেছে, কিশোর-তরুণরা এখন ইউটিউবের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এদের ৮৫ শতাংশই বলছে, তারা ইউটিউব ব্যবহারে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সামাজিক যোগাযোগের জন্য ১৩ থেকে ১৭ বছরের কিশোরদের মধ্যে ফেসবুক এখন আর সবচেয়ে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম নয়।
ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন অনলাইন জগত্টা অনেকটাই ভিডিওর দখলে। আগে মানুষ অনলাইনে যেকোনো তথ্য পাবার জন্য লেখা পড়তো, বড় বড় ব্লগ পোস্ট পড়তো, গল্পের বই পড়তো। কিন্তু এখন অনেকেই পড়ার থেকে সে সম্পর্কে ভিডিও দেখতে বেশি ভালোবাসে। এজন্যই ইউটিউব প্রচুর জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ইউটিউবে ভিডিও প্রকাশ করে অনেক ইউটিউবার বেশ ভালো আয় করে থাকেন। বাংলাদেশেও বর্তমানে বেশ কয়েকজন ইউটিউবার রয়েছেন যারা ভালো মানের ভিডিও নিয়মিত তাদের চ্যানেলে আপলোড করে থাকেন।
বিনোদনমূলক ভিডিও থেকে শুরু করে ডকুমেন্টারি কিংবা টিউটোরিয়াল-কী নেই ইউটিউবে। শুধু বিনোদনই দিচ্ছে তা নয়, বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সবার সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি ইউটিউবারদের আয়ের উত্স হিসেবেও কাজ করছে এই সামাজিক মাধ্যমটি। তরুণরা বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার উপর নিজস্ব আইডিয়া নিয়ে তৈরি করছেন ভিডিও এবং সেগুলো আপলোড করছেন ইউটিউবে। সামাজিক এই মাধ্যমটির দেশে নতুন হলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তরুণরা এ ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে গিয়েছে। তবে দেশের অনেক তরুণই সফল ‘ইউটিউবার’ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছেন। ফলে বাড়ছে ইউটিউবারের সংখ্যা। তরুণরা ইউটিউবের জন্য ভিডিও ডকুমেন্টারি বানাচ্ছেন। তুলে ধরছেন সমাজিক নানা সমস্যা ও সম্ভাবনার চিত্র। এসব ডকুমেন্টারিতে অভিনয়ও করছেন তরুণরা। আবার অনেক বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞরা নিজেরা ইউটিউব চ্যালেন খুলে নানা বিষয়ে পরামর্শ দেন এখানে। ফলে শুধু ইউটিউবকেন্দ্রিক অনেক চ্যানেল গড়ে উঠেছে যেখানে অনেক তরুণ নিজেদের তৈরি শর্ট ফিল্ম, ডকুমেন্টারি এবং টিউটোরিয়াল আপলোড করে আয় করছেন বিপুল অর্থ। আবার বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানও দেখতে পাওয়া যায় ইউটিউবে। ক্ষেত্রবিশেষে টিভি দেখার চেয়ে ইউটিউবে ভিডিও দেখতেই মানুষ বেশি পছন্দ করেন। ফলে ইনটিউব চ্যানেলের সংখ্যা বাড়ছে।
‘স্যালমন দ্যা ব্রাউনফিশ’ ছাড়াও ভাইব্রাদারস লিমিটেড, ম্যাঙ্গো স্কোয়াড, তাহসিনেশন, ভিডিও বাবা প্রোডাকশন, দ্যা ক্রেজি বাংলাদেশি, হতদরিদ্র, মজার টিভি, লনিস ওয়ার্কস, বাটফিক্স, টিংকু চৌধুরিসহ বেশ কিছু ইউটিউব চ্যালেন ইতিমধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তরুণদের কাছে।
‘ভাই ব্রাদার্স লিমিটেড’ চ্যানেলটির উদ্যোক্তা আসিফ বিন আজাদ। চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ৪ লাখ ৪২ হাজার। ম্যাঙ্গো স্কোয়াড চ্যানেলের উদ্যোক্তা শামিম হাসান সরকার। চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ৪ লাখ ৬৪ হাজার। অন্যদিকে তাহসিনেশন চ্যানেলের ৩ লাখ ৫৬ হাজার, ভিডিও বাবা প্রোডাকশন চ্যানেলের ২ লাখ ১২ হাজার, হতদরিদ্র চ্যানেলের ১ লাখ ৯৯ হাজার, মজার টিভি চ্যানেলের ৪ লাখ ৯৬ হাজার সাবস্ক্রাইবার রয়েছে।
মজার টিভি চ্যানেলের ইউটিউবার মাহসান স্বপ্ন জানান, মজার টিভি ইউটিউব চ্যানেলটিতে মজার মজার সব বাংলা ভিডিও ও প্র্যাংক প্রকাশ করা হয়। প্রতি সপ্তাহেই নতুন ভিডিও আপলোড দেন চ্যানেলে। বিনোদনের মাধ্যমেই তারা তুলে ধরেন সমাজের কোন না কোন চিত্র।