• শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৩ অপরাহ্ন

প্রতিবন্ধী সন্তানটিকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে

আপডেটঃ : বুধবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

রংপুর প্রতিনিধি॥
আধাঁর ঘর আলোকিত করে যখন প্রিয় সন্তান ভূমিষ্ট হয়, তখন পিতা-মাতা ও আতœীয়-স্বজনের মাঝে নেমে আসে আনন্দ উচ্ছ্বাস। কিন্তু প্রিয় সন্তান যদি প্রতিবন্ধী হয়, তখন পিতা-মাতার মাঝে নেমে আসে চরম হতাশা। সন্তানকে কিভাবে মানুষ করবেন তা নিয়েও পড়েন দুশ্চিন্তায়। সেই প্রতিবন্ধী সন্তানটিকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় কিছু সমাজসেবী, জনপ্রতিনিধি ও তরুণ উদ্যোক্তা। তাদের প্রচেষ্টায় ২০১৬ সালে গড়ে তোলা হয়েছে রংপুর অঞ্চলের প্রজা বিদ্রোহের মহানায়িকা দেবী চৌধুরাণীর নামে ‘দেবী চৌধুরাণী বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিজম বিদ্যালয়’। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা বিদ্যালয়টি আলো ছড়িয়ে চললেও তাদের ভাগ্যে জোটেনি সরকারি ভাবে কোন সুযোগ-সুবিধা। বিদ্যালয়টিতে প্রতিদিন শতাধিক প্রতিবন্ধী শিশু পড়া-লেখার পাশাপাশি নাচ, গান, কবিতা ও আবৃতিসহ খেলাধুলায় অংশ নিচ্ছেন । ফলে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। রংপুর-সুন্দরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘেঁষে পীরগাছা সদর থেকে ৪ কিঃ মিঃ দক্ষিণে রামচন্দ্রপাড়া গ্রামে গড়ে ওঠা এ বিদ্যালয়টি উপজেলার অন্যান্য বিদ্যালয়গুলোর চেয়ে আলাদা। এলাকাবাসীর ঐচ্ছিক অনুদানে পরিচালিত বিদ্যালয়টিতে রয়েছে ইতিহাস খ্যাত বিদ্রোহী কন্যা দেবী চৌধুরাণীর ছবি, দেশবরণ্য ব্যক্তির ছবি ও জীবনী । এছাড়া বিদ্যালয়টিতে বিনা বেতনে কাজ করছেন একজন প্রধান শিক্ষক সহ ২২জন শিক্ষক-কর্মচারী। শিক্ষার্থীদের পরিবহনে রয়েছে একটি ব্যাটারী চালিত রিক্সা-ভ্যান। সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত মনোরম পরিবেশে দৃষ্টি নন্দিত এ বিদ্যালয়টি একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। স্থানীয় সাংসদ টিপু মুনশি, জেলা-উপজেলা সরকারি কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ইতোমধ্যে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে প্রশংসা করেছেন। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ১৭৫ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া ও খেলাধুলার সুযোগ পাচ্ছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টিতে কেউ হাটতে পারে, কেউ পারেনা। কারো হাত-পা বাঁকা। কেউ পড়ছে, কেউ খেলাধুলা ও নানা ভঙ্গিতে অভিনয় করছে। এ যেন এক বিচিত্র রূপ! এসময় ভাঙ্গা ভাঙ্গা কণ্ঠে মোশারফ হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী জানান, আগোত বাড়িত শুতি শুতি আছিনু। এখন স্কুলোত আসি নেকাপাড়া করি। মুই গানও কবার পাও, নাইচ পারও পাও। এসময় প্রতিবন্ধী সন্তান কোলে করে আসা কাপড় ব্যবসায়ী অভিভাবক আব্দুল মজিদ বলেন, বাড়িতে প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে সব সময় টেনশনে থাকতে হয়। কখন কি করে বসে। এখন সকালে বিদ্যালয়ে দিয়ে গেলে টেনশনও কমছে, তারাও কিছু শিখছে। আগের চেয়ে তাদের আচার-আচরণও পাল্টে গেছে। এসময় জয়নাল, কামাল ও রবিউল ইসলাম নামে বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী দ্রুত বিদ্যালয়টি সরকারি করণসহ শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার দাবি জানান। বিদ্যালয়টির জমি দাতা সোলায়মান আলী বলেন, আমি এ এলাকার অবহেলিত প্রতিবন্ধী শিশুদের কথা ভেবে ২২ শতাংশ জমি দান করেছি। আমার মতো অন্যদেরও বিদ্যালয়টিতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসা উচিত। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিয়ার রহমান বলেন, বিনা বেতনে প্রতিদিন সমাজের অবহেলিত এসব শিশুদের পাঠদান করছি। ফলে অন্য শিক্ষকদের এবং নিজের সংসারের অভাব-অনটন লেগেই আছে। তবুও অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে প্রতিবন্ধী এসব শিশুদের আলোর পথ দেখাচ্ছি। এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শাহ মোঃ শাহেদ ফারুক বলেন, সমাজে লুকায়িত এবং অবহেলিত এসব প্রতিবন্ধী শিশুরা একদিন মাথা উচু করে দাড়াবে। তারা দেশ ও এ অঞ্চলের সুনাম উজ্জ্বল করে আলোকিত বাংলাদেশ গড়তে পারবে। তাই আসুন তাদের পাশে দাড়াই। পীরগাছা উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, বিদ্যালয়টি অনেক সুন্দর। অজপাড়াগায়ে এ রকম স্কুল চোখে পড়ে না। বিদ্যালয়টি যাতে সরকারি- সুযোগ-সুবিধা পায়, তার জন্য উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ