ভোলা জেলা প্রতিনিধি : আসন্ন কালবৈশাখী ঝড়ে ভোলার মেঘনার ডেঞ্জার জোনে ঝুঁকি থাকায় ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত এসব নৌপথে ট্রলার ও স্পিডবোটসহ ছোট ছোট নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করেছে বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু সরকারের সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল করছে। ফলে এই রুটটি ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এতে করে এ নৌপথে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় যাত্রীদের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়, ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর ভোলার নদীগুলো বিপজ্জনক অঞ্চলের আওতায় পড়ে। তাই এ সময় মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী এবং সাগর মোহনায় সী-সার্ভেবিহীন (লাইসেন্স ছাড়া) কোনো নৌযান যাত্রী বহন করতে পারবে না। কিন্তু ওই আইন লঙ্ঘন করে ইলিশা (ভোলা)-মজু চৌধুরীর হাট (লক্ষ্মীপুর), তুলাতুলি (ভোলা)-মতিরহাট (লক্ষ্মীপুর), দৌলতখান (ভোলা)-আলেকজান্ডার (লক্ষ্মীপুর), হাকিমউদ্দিন (ভোলা)-আলেকজান্ডার (লক্ষ্মীপুর), স্লুইসগেট (তজুমদ্দিন, ভোলা)-হাজিরহাট (মনপুরা), কচ্ছপিয়া (চরফ্যাশন, ভোলা)-ঢালচর (চরফ্যাশন, ভোলা) এবং ভেদুরিয়া (ভোলা)-লাহারহাট (বরিশাল) নৌপথে অবৈধ স্পিডবোট ও ট্রলার চলছে। এসব নৌপথে এ সময় শুধু সি-ট্রাক ও ফেরি চলার কথা।
ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের ইলিশা ফেরিঘাট এলাকার স্থানীয়রা জানায়, সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভোলা সদরের ইলিশা ফেরিঘাট ও লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর হাট ঘাটের স্থানীয় প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করে ভোল-লক্ষ্মীপুর নৌপথে অবৈধভাবে যাত্রী নিয়ে নদী পাড়ি দিচ্ছে ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত মাছ ধরার ট্রলার ও স্পিডবোট।
এ বিষয়ে ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি পারিযাত এর মাস্টার নজরুল ইসলাম বলেন, সামনে আসছে কালবৈশাখী ঝড়। এ সময়ে ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথটি অত্যন্ত বিপদজনক। তাই বিআইডব্লিউটিএ এ নৌপথে সীসার্ভে সনদ (লাইসেন্স) ছাড়া সব ধরনের লঞ্চ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এ নৌপথে কিছু ট্রলার ও স্পিডবোট জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী পারাপার করছে।
ভোলার সদর উপজেলার ইলিশা ফেরিঘাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘাটের সামনে যাত্রী নামলেই নানাভাবে কৌশলে তাঁদের স্পিডবোট ও ট্রলারে ওঠার আহ্বান জানাচ্ছেন শ্রমিকরা। যাত্রীরাও দ্রুত নদী পার হওয়ার জন্য ট্রলার ও স্পিডবোটের দিকে ছুটছেন। রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে বেশ কয়েকটি ট্রলারে ও স্পিডবোটে যাত্রী নিয়ে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিতে দেখা গেছে। দুপুর দেড়টার দিকে ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ফেরিঘাটে একটি ফেরির সাথে আগে থেকেই নোঙর করে রাখা একটি ছোট ট্রলারকে অন্তত ২০ জন যাত্রী নিয়ে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরী ঘাটের উদ্দ্যেশ্যে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে।
ইলিশা লঞ্চঘাটে আসা বোরহানউদ্দিন উপজেলার আব্দুল জব্বার কলেজের শিক্ষক মোস্তফা কামাল বলেন, লক্ষ্মীপুর সদরে আমার ভায়রার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান। তাই, ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে লক্ষ্মীপুরে যাচ্ছি। আমরা দোতলা বড় লঞ্চ এমভি পারিজাতে গেলেও নির্ধারিত সময়ে লঞ্চ না পাওয়ায় অনেক যাত্রী স্পিডবোট ও ছোট ছোট ট্রলারে করে লক্ষ্মীপুর যাচ্ছেন। তবে, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য যে অনেক বেশী তা তারা বুঝতে চাচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে ইলিশা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে চলাচলকারী স্পিডবোট মালিক হারুন উর রশিদ বলেন, আমার বোড অনেক আগে থেকেই বন্ধ করে দিয়েছি। এখন মাত্র একটা বোড চলে। চুরি করে (প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে) এ রুটে কিছু স্পিডবোট চলাচলের কথা স্বীকার করে হারুন এ প্রতিনিধিকে ইলিশা ফেরিঘাটে এসে চা পান করার নিমন্ত্রণ জানান।
অন্যদিকে, ট্রলার মালিক মোঃ ফারুক বলেন, ওই রুটে এখন আমার কোন ট্রলার চলে না। ইলিশা ফেরিঘাটের ইজারাদার সারওয়ার মাস্টারের নিয়ন্ত্রণে এখন ওই রুটে ট্রলার চলাচল করছে। তবে, এ বিষয়ে কথা বলতে ইজারাদার সারওয়ার মাস্টারের ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি তার ফোন রিসিভ করেননি।
নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে কিছু ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল করার কথা স্বীকার করে বিআইডব্লিউটিএ ভোলার উপ-পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, আমাদের তেমন জনবল নেই। যেটুকু জনবল রয়েছে সেটুকু নিয়ে ভোলার বিভিন্ন নৌপথে অবৈধ নৌযান চলাচল রোধে তৎপরতা চালাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ভোলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবে।