• বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:২২ পূর্বাহ্ন

দীর্ঘ সময় লেগে গেল বাঁধনের

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০২২

বিনোদন রিপোর্টার : সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জেতার পর চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধনকে। আজমেরী হক বাঁধন মনে করেন তার জীবন শুরু হয়েছে মাত্র চার বছর আগে। আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধনের প্রথম বাংলাদেশী ছবি যা কান চলচ্চিত্র উৎসবে আন সার্টেন রিগার্ড বিভাগে নির্বাচিত হয়েছিল এবং এবং কেরালার ২৬তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে (IFFK) উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে পরিদর্শিত হয়েছিল। তার আগের ৩৪ টা বছর যে বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন অভিনেত্রী তা তাঁর শিল্পী সত্ত্বার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

কিন্তু সেইসব বাধা অতিক্রম করে তিনি আজ সমস্ত অধিকার এবং স্বাধীনতার সাথে নিজের শর্তে বেঁচে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তার মেয়ের জন্যও এটি নিশ্চিত করবেন বলে জানিয়েছেন। ছবির রেহানা চরিত্রের সাথে তার বাস্তব জীবনের অনেক মিল রয়েছে। রেহানা একটি মেডিকেল কলেজের একজন সহকারী অধ্যাপক আবার একজন সিঙ্গেল মাদার। যিনি তাঁর কলেজের একজন ছাত্রীকে যৌন হয়রানিকারী একজন অধ্যাপকের হাত থেকে বাঁচাতে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেন।
‘দ্য হিন্দুকে’ দেওয়া একটি সাক্ষাত্কারে বাঁধন বলেছেন- ”আমার জীবনের অভিজ্ঞতাই পরিচালককে আমার কাছে নিয়ে এসেছিল, কারণ তিনি আমার মধ্যে রেহানাকে দেখেছিলেন।

যদিও ছবিটি করার সময়ে আমার অতীতের সমস্ত আঘাতের কথা বার বার মনে পড়ছিল। আমি একজন প্রশিক্ষিত অভিনেতা নই। আমি একজন সুপারফিশিয়াল অভিনেতা ছিলাম, যিনি শুধু বেঁচে থাকার জন্য এটি করতে চেয়েছিলেন। আমি একজন খুব সংবেদনশীল ব্যক্তি যে নিজের কষ্টের পাশাপাশি অন্যদের জন্যও কাঁদে। পরিচালক চরিত্রটির বেদনা বাস্তবে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শুটিংয়ের সময়ে যখন আমার নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়েছিল তখন পরিচালক আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন।

১৯ বছর বয়সে, বাঁধনের বাবা-মা জোর করে তাকে এমন একজনের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন যার কাছ থেকে তাকে একাধিকবার হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু মেয়ের কষ্টকে বাবা-মা কখনো গুরুত্ব দেননি। জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা আসার পর উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধক ওষুধের অতিরিক্ত ডোজ খেয়ে আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলেন অভিনেত্রী, পরে তাঁর ভাই তাকে একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করান । পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাইরে আসার পর বাঁধনের জীবনটাই বদলে যায়। তিনি একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জয়ী হন এবং জনপ্রিয় বাংলাদেশী লেখক হুমায়ূন আহমেদের একটি কাজের উপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে যান।

কিন্তু তাঁর অভিনয়ে আসার কোন আগ্রহ ছিল না। তিনি শুধু ছবির মাধ্যমে নিজের গল্প বলতে চেয়েছিলেন। বাঁধন জানাচ্ছেন, ”কিন্তু সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা আমার জীবন বদলে দিয়েছে। প্রতিযোগিতা থেকে আমি তিন লাখ টাকা পেয়েছি। বিডিএস হবার লক্ষ্যে আমি এখন আমার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে যাই, যা আমার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমার দ্বিতীয় বিয়ে থেকে বিচ্ছেদের পর আমাকে আমার মেয়ের অভিভাবকত্ব পেতে লড়াই করতে হয়েছিল কারণ আমাদের শরিয়া আইনে, একজন মাকে কখনই অভিভাবক হিসাবে বিবেচনা করা হয় না। আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি এবং জিতেছি। এর পরে, আমি আমার জীবন নিজের মত করে কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তখনই রেহানা চরিত্রটি আমার কাছে আসে।”

একটি রক্ষণশীল সমাজ কখনোই মেয়েদের চলচ্চিত্রে অভিনয়কে ভালো মনে মেনে নেয় না। তাই বাঁধনের মনেও সেই ভয় কাজ করতো। যদিও তিনি ২০০৬ সাল থেকে বেশ কয়েকটি টেলিভিশন সিরিজের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। বাঁধন জানান, ”কান বা IFFK-তে আমরা যে অভ্যর্থনা পেয়েছি তা আমরা সত্যিই আশা করিনি। ভেবেছিলাম স্বপ্ন দেখছি বুঝি! কারণ স্বপ্ন কি জিনিস আমি ছোট থেকে জানতাম না, সেটাও আমার বাবা-মা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। কারণ, আমাদের দেশে ত্রিশ বছর বয়সের পর একজন নারীর আর কিছু করার থাকে না। চলচ্চিত্রেও কাজ পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, কারণ আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতেও পুরুষের আধিপত্য বেশি।”

অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন সবেমাত্র বিশাল ভরদ্বাজের ফিল্ম ‘খুফিয়া’ এবং সৃজিত মুখার্জির সিরিজ ”রবীন্দ্রনাথ এখানে কখোনো খেতে আসেননি” (রবীন্দ্রনাথ নেভার কাম টু ডাইন হিয়ার) নামের একটি ওয়েব সিরিজে কাজ শেষ করেছেন। বাঁধন ‘দ্য হিন্দুকে’ বলেছেন, ”আমি জানি না ভবিষ্যতে আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে। কারণ আমাদের দেশে এই ধরনের চরিত্র পাওয়া সহজ নয়। আমি সারা বিশ্বের সবার সঙ্গে কাজ করতে চাই, যদি তারা আমাকে কাস্ট করতে চান এবং আমি যদি চরিত্রের ওপর আস্থা রাখতে পারি। এখনও পর্যন্ত, আমার বিশ্বাস হয় না আমি কিভাবে রেহানা চরিত্রটি করে উঠতে পেরেছিলাম, কারণ আমার কোন প্রশিক্ষণ ছিল না। তবে একটি বিষয় বলতে পারি, আমার মন থেকে রেহানা চরিত্রটি এখনো যায়নি। কারণ সে আমাকে আকার দিয়েছে এবং আমার জীবনকে অনেক বদলে দিয়েছে।”


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ