মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে সঠিক তথ্য তুলে ধরেছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার নিয়ে যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে লজ্জিত। দেশে এখন গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা নেই। তিনি বলেন, রিপোর্ট প্রকাশের পরে আওয়ামী লীগের নেতারা নিজেদের মতো বানিয়ে কথা বলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেরা গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতেই বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
বুধবার দুপুরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে বিএনপির সাবেক মহাসচিব মরহুম কে এম ওবায়দুর রহমান-এর ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। ৭১ থেকে আওয়ামী লীগ একক ক্ষমতা একক নেতৃত্বে বিশ্বাস করে। সচেতনভাবে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, গোটা দেশ আজ কারাগারে পরিণত হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানর মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আওয়ামী লীগ সবাইকে ছোট করে দেখাতে পছন্দ করে। আওয়ামী লীগ কাউকে সম্মান দিতে জানে না। তাজউদ্দীন আহমদ, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নাম মুখেও নেয় না।
আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার পুরনো স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছে এমন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ সচেতনভাবে বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্র সরিয়ে ফ্যাসিবাদ, কর্তৃত্বববাদ, একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করছে। তিনি বলেন ,গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো রাখতে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকার হটাতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ নির্মাণে যেসব মানুষ অবদান রাখছে তাদেরকে স্মরণ করা হয় না। তাদের নামগুলো পরিকল্পিতভাবে ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে সরকার। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তাদের হীনমন্যতার কারণে শুধুমাত্র একজনকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। বিএনপির সাবেক মহাসচিব কেএম ওবায়দুর রহমানের স্বরণ করে তিনি বলেন, আজ আমরা যেসব কথা বলছি বাংলাদেশ স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, দেশের গণতন্ত্র, ন্যায় নীতি, অর্থনীতির বৈষম্য দূর করে যথাসাধ্য সাম্য প্রতিষ্ঠা করা, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা ছিল কে এম ওবায়দুর রহমানের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন আজ ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে। যে দেশে গণতন্ত্র নাই সে দেশে মানবাধিকার থাকতে পারে না। দেশের মানবাধিকার নাই সেটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। যে দেশে জনগণের ভোটে সরকার নির্বাচিত হয় না, সেই দেশে জনগণের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা থাকে না।
তিনি বলেন, দেশের মাত্র কয়েকজন লোক দেশের সম্পদকে লুট করে বিদেশে পাচার করছে। মেগা প্রজেক্টের নামে মেঘা দুর্নীতি, ব্যাংক লুটপাট, রিজার্ভ প্লটপাট করে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জনগণকে বাদ দিয়ে অব্যাহতভাবে ক্ষমতা দখল করে রাখার রাজনীতি সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগ। সংবিধানকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে তারা। জনগণকে বাইরে রেখে সংবিধানের কথা বলা আওয়ামী লীগের মুখে শোভা পায় না। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা ভোগ করছে তারা।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের কাছে জনগণ বলে কোন শব্দ নেই, দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চলছে। আর এজন্য সংবিধাননের দোহাই দিয়ে জনগণকে বাইরে রেখে ক্ষমতা দখল করেছে। কোনও আলাপ আলোচনার সুযোগ নেই, রাস্তা দখল করে ফয়সালা হবে। ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ জনগণ ছাড়বে না।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আসম আব্দুর রব বলেন, যুবকদের এখন লড়াই করার সময়। ছাত্রলীগের নেত্রীরা এখন গরু চোরের সরদার। আওয়ামী লীগ ভোটে বিশ্বাস করে না। ক্ষমতা মাটিতে পরে থাকবে তবু আওয়ামী লীগকে থাকতে দেয়া হবে না। এ লড়াই বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের লড়াই।
সংসদীয় গণতন্ত্র নয়, সংসদীয় একনায়কতন্ত্র চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্ষমতা পড়ে থাকবে, আওয়ামী লীগকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া হবে না। ব্যাপক গণঅভ্যুত্থান, গণআন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের বিদায় হবে।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসলাম মিল্টন, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ওলামা দলের আহ্বায়ক শাহ নেছারুল হক, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, মাদারীপুর জেলা বিএনপি সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলী জাহান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।