দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় ধরে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার ১৪টি মৌজার ৩৫ হাজার একর জমির খাজনা আদায় বন্ধ রয়েছে। মালিকানাসংক্রান্ত জটিলতায় উপজেলার অন্তত এক লাখ মানুষ শত বছর ধরে বংশপরম্পরায় ভোগদখলীয় জমির খাজনা দিতে পারছেন না। এতে জমির নামজারি না হওয়ায় বৈধভাবে জমি কেনাবেচাও করতে পারছেন না জমির মালিকেরা। ফলে ঢাকার কাছে হলেও সখীপুরে গড়ে উঠছে না কোনো শিল্পকারখানা।
খাজনা দেওয়ার দাবিতে উপজেলায় বছর বিশেক আগে ভূমিমালিকদের নিয়ে একটি আন্দোলন কমিটিও গঠিত হয়েছে। ওই কমিটি নানা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। নিজ এলাকায় হরতাল, অবরোধ, মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালনের পর ২০১৭ সালের ২২ মে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ধরনের বড় কর্মসূচির খবর পেয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকের আশ্বাস দিলে আন্দোলন থেমে যায়। এর মধ্যেই ওই জেলা প্রশাসক বদলি হয়ে যান। এরপর ওই বছরের ৩১ জুলাই নতুন জেলা প্রশাসক খান নুরুল আমিনের সঙ্গে আন্দোলনকারীরা বৈঠক করেন।
ওই বৈঠকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) আহ্বায়ক ও সখীপুর সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) সদস্যসচিব করে ৯ সদস্যের একটি উপকমিটি গঠন করা হয়। এরপর ওই কমিটি কয়েক দফা বৈঠক করলেও ভূমির জটিলতা নিরসনে তেমন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। তবে কয়েক বছর ধরে ওই আন্দোলন কমিটি একটু ঝিমিয়ে পড়ায় আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এবার উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ খাজনা আদায়ের আন্দোলনে নেমেছে। এরই অংশ হিসেবে গত রোববার খাজনা নেওয়াসহ ১২ দফা দাবিতে ইউএনওকে স্মারকলিপি দিয়েছে তারা।
খাজনা সমস্যা নিয়ে আমি ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে সুস্পষ্টভাবে আমার বক্তব্য তুলে ধরেছি। শিগগির সমাধান হবে বলে আশা করছি।
জোয়াহেরুল ইসলাম, স্থানীয় সংসদ সদস্য
খাজনা আদায় না হওয়া উপজেলার এ ১৪টি মৌজা হচ্ছে গড়গোবিন্দপুর, সখীপুর, প্রতিমাবংকী, লাংগুলিয়া, বেড়বাড়ি, রতনপুর, হাতীবান্ধা, হতেয়া, বাজাইল, কালমেঘা দেওয়ানপুর, কালমেঘা আতিয়া, কালমেঘা তালেপাবাদ, চতলবাইদ ও বহুরিয়া চতলবাইদ।
সখীপুরে সংশ্লিষ্ট ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ ১৪টি মৌজায় ১৯৭৬-৮৫ সালে দেশের অন্য এলাকার সঙ্গে আরএস (রিভিশন সার্ভে) জরিপ সম্পন্ন হয়। এরপর ভূমিমালিকদের বরাবর নকশা ও পরচা দেওয়া হয়। ১৪ মৌজার মধ্যে প্রথমে ৮টি মৌজার ভলিউম স্থানীয় ভূমি কার্যালয়ে আসে এবং খাজনা আদায়ের নির্দেশও আসে। ওই সময় (১৯৯৮ সাল) বন বিভাগ তাদের কিছু জমি ওই রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে দাবি করে আপত্তি দিলে স্থানীয় ভূমি কার্যালয় খাজনা (ভূমিকর) নেওয়া বন্ধ করে দেয়। এরপর দীর্ঘ দুই যুগ পার হলেও আর খাজনা নেওয়া হয়নি। ১৪ মৌজার খাজনা আদায় না হওয়ায় সরকার প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভূমি অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জুলফিকার হায়দার কামাল বলেন, ‘২০১২ সালের ১৯ মার্চ আমরা সখীপুর থেকে ঢাকা শহরে গিয়ে মহানগর নাট্যমঞ্চে আমরণ অনশন করেছিলাম। ওই কর্মসূচিতে তৎকালীন ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে অনশন ভাঙান।’ সখীপুরের ইউএনও ফারজানা আলম বলেন, ‘স্থানীয় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের দেওয়া একটি স্মারকলিপি হাতে পেয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে পরবর্তী কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে।’
স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, ‘খাজনা সমস্যা নিয়ে আমি ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে সুস্পষ্টভাবে আমার বক্তব্য তুলে ধরেছি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। শিগগির সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।